রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ০১:০৪

প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:৫২:০৮ পূর্বাহ্ন

গরু নিয়ে বিজেপি-কংগ্রেসের লড়াই

মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান গো-মন্ত্রণালয় গঠনের কথা ঘোষণা দিয়েছেন। রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি কমলনাথও জানিয়েছেন, তাঁর দল জিতলে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে গোশালা বানানো হবে। মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা ভোট এই বছরের শেষাশেষি। তার আগেই গোমাতা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে শাসক দল বিজেপি বনাম বিরোধী দল কংগ্রেসের মধ্যে। ভোপাল থেকে ৩৭৫ কিলো মিটার দূরে খাজুরাহোতে এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান ঘোষণা করেন, গো-পালন যাতে আরো ভালোভাবে করা যায়, তার জন্য পৃথক স্বশাসিত মন্ত্রণালয় গঠন করা হবে। এতে গো-সম্পদের যতœ, পরিচর্যা আরো সুষ্ঠুভাবে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে রাজ্য গো-পালন ও পশুধন পর্ষদ আছে, কিন্তু তাতে দেখা দিয়েছে আর্থিক টানাটানি। পৃথক মন্ত্রণালয় গঠিত হলে তা দূর করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মতে, গোয়ালঘর মন্দ নয়, যদি গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারে অন্তত তিন-চারটি গরু রাখার মতো গোশালা থাকে। গবাদি পশুর কল্যাণে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন সরকারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। গো-কল্যাণে মধ্যপ্রদেশ হবে ভারতের দ্বিতীয় রাজ্য, যেখানে থাকবে আলাদা গো-মন্ত্রণালয়। ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে মধ্যপ্রদেশ হয়ে উঠবে এক স্বর্ণ রাজ্য্। গো-পর্ষদের বর্তমান চেয়ারম্যান অখিলেশ্বরানন্দ গিরি হবেন মন্ত্রকের ক্যাবিনেট মন্ত্রী। তিনি মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গো-কল্যাণে প্রাণিত করবে। জৈন দিগম্বর সাধু বিদ্যাসাগর মহারাজ গো-রক্ষক হিসেবে যাঁর খ্যাতি আছে, তিনিও সভায় উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান এই কাজে তাঁর আশীর্বাদ চান। ভারতের পশু কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান এস.পি গুপ্ত বলেন, সব গবাদি পশুর দিকেই দৃষ্টি দেওয়া হবে, তবে মধ্যমণি গরু। কারণ, গো-রক্ষার পরিণামে যত্রতত্র গণপিটুনির ঘটনা বেড়ে চলেছে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতও রায় দিয়েছেন, গণপুটুনি চলবে না. এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গো-কল্যাণ নিয়ে পালটা তোপ দেগেছে কংগ্রেসও। মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কমলনাথ বিদিশা শহরের কাছে এক জনসভায় অভিযোগ করেন, বিজেপি মুখে যতই বলুক, গো-কল্যাণের জন্য কাজ কিছুই করেনি গোমাতা নিয়ে স্রেফ রাজনীতি করছে। হাজার হাজার গরু মারা গেছে এবং মারা যাচ্ছে অবহেলায়। কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় এলে রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে গোশালা তৈরি করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি বলেন, রাস্তাঘাটে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে গবাদি পশু। গাড়ির ধাক্কায় প্রায়ই মৃত্যু ঘটছে, জখম হচ্ছে। এদের থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। নতুন গো-মন্ত্রণালয় গঠনের বিজেপির প্রস্তাবে রাজ্যের কংগ্রেস মুখপাত্র বলেন, গত এগারো বছর বিজেপি চুপচাপ ছিল। কমলনাথের উদ্যোগের পরই বিজেপির ঘুম ভাঙে। অভিযোগ খ-ন করে বিজেপি বলেছে, কংগ্রেস জমানায় গবাদি পশুর চারণভূমিতে আস্তানা গেড়েছে জবরদখলকারিরা। ফলে টান পড়েছে গবাদি পশুর খাদ্যে। বিজেপি সরকরের আমলে রাজ্যে প্রথম গো-চারণভূমি গড়ে তোলে মধ্যপ্রদেশ গোপালন এবং পশুসম্পদ পর্ষদ। ৪৭২ হেক্টর জমিতে ৬০০০ গবাদি পশুর থাকার ব্যবস্থা করা হয়। পর্ষদ ৬০০ গোশালা তৈরি করেছে, যেখানে থাকছে এক লাখ চল্লিশ হাজার গবাদি পশু। ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গো-কল্যাণে গোটা দেশে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধকালীন অবস্থার ভিত্তিতে তৈরি করা হয় গোশালা, এমনটাই দাবি বিজেপির। ‘কমপ্যাশনেট ক্রুসেডর’ নামে এক পশু কল্যাণ সংস্থার কর্তাব্যক্তি দেবাশীষ চক্রবর্তীর সঙ্গে এ বিষয়ে ডয়চে ভেলের কথা হয়েছে। নিজেদের সংস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আহত বা রুগ্ন পশুদের এখানে নিয়ে এলে নিখরচায় তার চিকিৎসা হয়। ওষুধপত্র দেওয়া হয়. দরকার পড়লে এখানে কিছুদিন রেখে দেওয়া হয়। '’ তাঁর মতে, ‘‘রাস্তা ঘাটে গবাদি পশু ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেটা দেখার দায়িত্ব পুরসভার। তবে কলকাতার মতো বড় শহরে খাটাল রাখা বে আইনি। কোলকাতা শহরে কাগজে কলমে খাটাল নেই। তাছাড়া, খাটাল জনস্বাস্থ্যেরর পক্ষে বিপজ্জনক। নোংরা আবর্জনা জমে যায়, নর্দমা বন্ধ হয়ে যায়, তাতে রোগ ছড়ায়. পরিবেশ নষ্ট হয়। '' দেবাশীষ জানান, ‘‘অনেক সময় প্রশাসনের ঢিলেঢালা ভাব দেখে অনেকে গ্রীন ট্রাইব্যুনালে যায়। গবাদি পশুকে মশা মাছি কামড়ালে, তা থেকে অন্যদের দেহে তা সংক্রমিত হয়।'’ প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে গরুর দৌড় হয়। বর্ষার আগমন উদযাপন করতে চালু হয়েছিল এই প্রথা, যেহেতু বর্ষা কৃষিকাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে দিল্লিতে গোরক্ষা নিয়ে বিজেপি এবং শাসক দল আম আদমি পার্টির মধ্যেও বেঁধেছে বিরোধ। দিল্লি বিধানসভায় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে গোশালা তৈরি নিয়ে হাতাহাতি হবার জোগাড়। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের অভিযোগ, দিল্লির পুরসভা এবং পুলিশ কেন্দ্রের বিজেপির নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাঁদের কাজে লাগানো হচ্ছে গো-সুরক্ষায়। বিরোধী নেতা বিজেপির ভি.গুপ্তার মতে, দিল্লির রাস্তায় যাতে ছাড়া গরু না থাকে, তার জন্য আম আদমি সরকারের উচিত আরো গোশালা তৈরি করা। গরু মাফিয়াদের শায়েস্তা করতে পুরসভা ও পুলিশের যৌথ অ্যাকশন প্ল্যান দরকার বলেও মনে করেন তিনি। সম্প্রতি গুয়াহাটির ঘটনা কিন্তু বলছে অন্য কথা। সীমান্ত এলাকার পুলিশ চৌকিতে ধরা পড়ে এক বড় গরু পাচারকারি চক্র। তিনটি লরিতে পাচার করা হচ্ছিল ৮৫টি গরু। লরির রেজিস্ট্রেশন হরিয়ানা, বিহার ও আসামের। তিনটি ট্রাকে এতগুলি গরু যেভাবে ঠাসাঠাসি করে পাচার করা হচ্ছিল, তাতে মারা যেতে পারতো অনেক গরু। পুলিশকে এখন এদের দেখভাল করতে হচ্ছে। কারণ, গরুর মালিকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এক খন্ড জমিতে ৮৫টি গরুকে আপাতত রাখা হয়েছে। ওদের দেখভালের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে পাঁচজন পুলিশ। পশু ক্লেশ নিবারণ আইনে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ এই দায়িত্ব আর নিতে পারছে না। গো-কল্যান বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ তাতে সাড়া দেয়নি।
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com