বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১১:১০

প্রকাশিতঃ সোমবার, ১২ মার্চ ২০১৮ ০৮:৩১:১২ অপরাহ্ন

চট্টগ্রামে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে স্কুল ছাত্রীর গলায় ছুরি চালায় সুইপার

চট্টগ্রাম : হাটহাজারীতে ৯ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে গলা কেটে, মুখ ও মাথায় আঘাত করে সেপটিক ট্যাঙ্কে নিক্ষেপ করেছে আপন চন্দ্র মালি (৫০) নামে এক স্কুল সুইপার। রবিবার দুপুর দুইটার দিকে উপজেলার কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে এ রোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষ ও সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে প্রথমে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

স্থানীয় জনতা পাষণ্ড আপন চন্দ্রকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আপন চন্দ্র কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে সুইপার ও ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম ফরহাদাবাদ নুর আলী মিয়ারহাট এলাকার মুত উমেশ চন্দ্র মালির পুত্র।

জানা যায়, ওই স্কুল ছাত্রী একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী। তার বড় ভাই কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। তবে ভাইয়ের বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ধর্মঘটের কর্মসূচী থাকায় রবিবার স্কুলের পাঠদান বন্ধ ছিল। ওই ছাত্রী তার অপর এক বান্ধবীকে নিয়ে দুপুরে তার ভাইকে টিফিন দিতে বিদ্যালয়ে যায়। বিদ্যালয়ের সুইপার আপন চন্দ্রকে তার ভাই কোথায় আছে জিজ্ঞেস করলে ভাই দোতলায় আছে জানিয়ে তাকে সেখানে নিয়ে যায় যেখানে কোন শিক্ষার্থী ছিল না। সবার অজান্তে আপন চন্দ্র ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তার থেকে বাঁচতে ছাত্রীটি চিৎকার দিতে চেষ্টা করে। এ সময় আপন চন্দ্র মেয়েটির গলায় ধরে স্কুলের দেওয়ালে সঝোরে ধাক্কা দেয়। এতে করে ছাত্রীটি মাথা ও মুখের একপাশে রক্তাক্ত গুরুতর জখম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে সে মেয়েটির গলায় চুরিও চালায়। পরে মৃত ভেবে ছাত্রীটিকে বিদ্যালয়ের সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দিয়ে আপন চন্দ্র ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

অপরদিকে ছাত্রীর বান্ধবী অনেক্ষণ নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। তার বান্ধবী নেমে না আসায় সে স্কুল থেকে চলে যায়। আবার দীর্ঘক্ষণ স্কুল থেকে ওই ছাত্রী ফিরে না আসায় তাকে পরিবারও খোঁজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে স্কুলের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা মিলে ছাত্রীটিকে সম্ভাব্য সবস্থানে খুঁজতে থাকে। পরে মেয়েটির পিতা স্কুলের সেপটিক ট্যাঙ্কে গোঙানির শব্দ শুনে তার মেয়েকে ভিতরে দেখতে পান। মেয়েকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় জনতা পাষণ্ড আপন চন্দ্রকে তার বাড়ি থেকে আটক করে কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে যায়।

এরপর কয়েক হাজার জনতা আপন চন্দ্রের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। অবস্থা বেগতিক দেখলে স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশে সংবাদ দেয়। সন্ধ্যার দিকে থানার এএসআই কফিল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে আপন চন্দ্রকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

এ সময় উত্তেজিত জনতাকে সামাল দিতে পুলিশের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। পুলিশ ও স্থানীয়রা দোতলায় এবং সেফটিক ট্যাংকের পাশে জমাটবদ্ধ রক্তের নমুনাও দেখতে পান।

হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মেয়েটির গলায় এবং মুখে বেশ কয়েকটি ধারালো বস্তুর আঘাত রয়েছে।

কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকছুদ আহমেদ জানান, তিনি বিদ্যালয়ে ছিলেন না। খবর পেয়ে তিনি ওই ছাত্রীকে দেখতে চমেক হাসপাতালে গিয়েছেন।

এদিকে থানায় নিয়ে আসা হলে আপন চন্দ্র মালি সাংবাদিকদের জানান, তিনি মেয়েটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজ করতে চেয়েছিলেন। তবে চিৎকার দেওয়ায় তাকে আঘাত করে দেওয়ালে ধাক্কা ও পরে মৃত ভেবে সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেন।

হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর জানান, উত্তেজিত জনতা থেকে আপন চন্দ্রকে আটক করে আমাদের হেফাজতে নিয়ে এসেছি। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনানুগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com