রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ০৬:৫৬

প্রকাশিতঃ রোববার, ১৯ মে ২০১৯ ১০:৩৬:৪৪ অপরাহ্ন

ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় যুদ্ধ এড়াল ইরান-যুক্তরাষ্ট্র!

সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে বর্তমান সামরিক উত্তেজনার মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে শুক্রবার ইরাকি প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদির মধ্যস্থতাকেই সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দেয়া হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ওয়াশিংটন ও তেহরানের ডাকপিওনের ভূমিকা রেখে গেছেন তিনি। আদেল আল মাহদির দুই উপদেষ্টার বরাতে সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক আরব নিউজ এ খবর দিয়েছে। ইরান-সংশ্লিষ্ট দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কমান্ডার ও শিয়া নেতারা পত্রিকাটিকে জানান, গত ১৫ দিনে দুটি ইরাকি মিলিশিয়া গোষ্ঠীর হাতে স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হস্তান্তর করেছে ইরান। যদি ইরানে হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র, তবে ইরাকে মার্কিন লক্ষ্যবস্তুকে সহজ নিশানা করতে এই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বছরখানেক আগে পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসলে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনার পারদ চড়ছেই। এরপর ইরানের অর্থনৈতিকে ধ্বংস করে দিতে দেশটির ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে মধ্যপ্রাচ্যের ব্যস্ত জলপথে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ইরানি ছদ্ম হুমকিও বাড়তে থাকে। এরপর সম্প্রতি আরব আমিরাত উপকূলে চারটি তেল ট্যাংকার ও সৌদি আরবের পাম্পিও স্টেশনে হামলার পর উত্তেজনা যুদ্ধের কিনারে গিয়ে ঠেকে। ২০০৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের অন্যতম যুদ্ধক্ষেত্র হচ্ছে ইরাক। দেশটিতে ইরানের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। ইরাকের কয়েক ডজন শিয়া, সুন্নি, খ্রিস্টান ও কুর্দিশ সশস্ত্র গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করে তেহরান। তাদের সংগঠিত হওয়া থেকে শুরু করে তহবিল ও অস্ত্র সহযোগিতাও আসে প্রতিবেশী ইরান থেকে। সিরিয়া ও ইরাকে এসব গোষ্ঠী ইরানের ছায়া বাহিনী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। আর দুই দেশেই তাদের রকেটের আওতায় অধিকাংশ মার্কিন স্বার্থ রয়েছে। ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরাকের মধ্যে বার্তা বিনিময়ের জন্য আদেল আবদুল মাহদিকে মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে অনুরোধ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এতে ইরানিদেরও সম্মতি ছিল। ওই উপদেষ্টা বলেন, নরকের ফটক খুলে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতে চাইনি। দুই পক্ষের মধ্যে বার্তা বিনিময় করেছি। এভাবে একজন মধ্যস্থকারীর ভূমিকা পালন করেছি আমরা। দুই পক্ষের মধ্যে যাতে যুদ্ধ ছড়িয়ে না পরে তা এড়িয়ে যেতেই ইরাকি নেতৃবৃন্দ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ‘মধ্যস্থতায় ইরাকিদেরও সুযোগ করে দিয়েছেন ইরানি নেতৃবৃন্দ,’ জানালেন আদেল আল মাহদির উপদেষ্টা। সপ্তাহ দুয়েক আগে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও বাগদাদ সফরে যান। ওই সফরে ইরানিয়ানদের কাছে প্রথম বার্তাটি দেন তিনি। ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় উপদেষ্টা বলেন, আদেল আল মাহদিকে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে অস্ত্র ফিরিয়ে নিতে বলেছেন পম্পেও। এছাড়া ইরানিদের বলতে বললেন-যাতে ইরাকের ভেতর মার্কিন ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ শিবির থেকে তারা দূরত্ব বজায় রাখেন। পম্পে বলেন, ইরাকের ভেতর কোনো মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানা হলে ইরানের ভেতরে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হবে। শত্রু পক্ষের স্থাপনা নিশানা করতে ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননে ছয়াবাহিনীগুলোর ওপর ভরসা করছে ইরান। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাতে আরব নিউজ বলছে, ইরানের উৎসাহে ফুজায়রা বন্দরের জাহাজ ও পাম্পিং স্টেশনে হামলা চালিয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা। ইরাকি নেতাদের আশঙ্কা, ইরান-মার্কিন যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে সংঘাতের প্রথম ক্ষেত্র হবে ইরাক। সেখানে ইরাকি বাহিনীর সঙ্গে যৌথ প্রশিক্ষণ শিবির ও সামরিক ঘাঁটিতে পাঁচ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় মার্কিন দূতাবাস রয়েছে ইরাকে। বসরা ও ইরলিবে দুটি কনস্যুলেটও আছে। কয়েক ডজন মার্কিন তেল কোম্পানি ও বিভিন্ন সেক্টরে শত শত মার্কিন কর্মী ইরাকে কর্মরত। অন্তত তিনজন বিখ্যাত শিয়া নেতা, দুটি সশস্ত্র মিলিশিয়া গোষ্ঠীরা কমান্ডররা আরব নিউজকে বলেছেন, মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালাতে মিলিশিয়াদের কাছে স্বল্প-পাল্লার রকেট হস্তান্তর করা হয়েছে। রকেটের আওতায় মধ্যপ্রাচ্য ও ইরাকে মার্কিন কৌশলগত স্থাপনার একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, যাতে প্রয়োজন অনুসারে হামলা চালানো যায়। একটি সশস্ত্র মিলিশিয়া গোষ্ঠীর একজন কমান্ডার বলেন, ইরানিদের পক্ষ থেকে আদেল আল মাহদিকে যে বার্তা দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে-যুদ্ধের গতিপথ আপাতত পরিবর্তন, যোদ্ধাদের শান্ত ও সংযম অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত কোনো বিদেশি স্থাপনায় হামলা চালাতেও বারণ করা হয়েছে।
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com