সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৬

প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:২৭:২৩ পূর্বাহ্ন

ফেঁসে যাচ্ছেন যুবরাজ সালমান, ‘কিলিং মিশনে’ তাঁর ঘনিষ্ঠরা জড়িত

সাংবাদিক জামাল খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। অন্তত তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, খাশোগির সম্ভাব্য হত্যার পুরো ঘটনাটিই তাঁর বেঁধে দেওয়া ছক অনুসারেই সাজানো ছিল। আর এই ছক বাস্তবায়নে ১৫ জনের যে দলটি সৌদি আরব থেকে ইস্তাম্বুলে উড়াল দেয় তার অন্তত দুজন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দেশে-বিদেশে একাধিকবার তাদের দেখা গেছে যুবরাজের পাশে। শুধু তা-ই নয়, ১৫ জনের ১১ জনই সৌদি নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য। তিনজন বিন সালমানের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ।
তবে সূত্রগুলোর দাবি, খাশোগি রহস্যের আদ্যোপান্ত জানেন না প্রিন্স বিন সালমান। তাঁকে অন্ধকারে  রেখেই পুরো ঘটনা ঘটানো হয়। এই দলটির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল খাশোগিকে দেশে ফেরানো। তবে কনস্যুলেটে প্রবেশের পর ভুল জিজ্ঞাসাবাদের জেরে তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও সৌদি আরবের বহু কর্মকর্তাই মনে করেন, ৩৩ বছর বয়সী প্রিন্স বিন সালমানের অজ্ঞাতে এত বড় কাণ্ড ঘটে যেতে পারে না। তাঁর অনুমোদন সাপেক্ষেই খুন হন খাশোগি।


আরেকটি সূত্র জানায়, সৌদি আরব মনে করে খাশোগির কাছে তাদের ধনী প্রতিদ্বন্দ্বী কাতারের স্পর্শকাতর তথ্য রয়েছে। যদিও কাতারের সঙ্গে খাশোগির সম্পর্কের কোনো প্রমাণ তাদের কাছে ছিল না। সূত্রের দাবি, সৌদি গোয়েন্দা সংস্থা, অর্থাৎ জেনারেল ইন্টেলিজেন্স প্রেসিডেন্সির ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাঁর পরিকল্পনার বিষয়ে রিয়াদকে অন্ধকারেই রাখেন। এ কারণেই সরকারের কাছে বিষয়টি নিয়ে সেভাবে কোনো তথ্যই শুরুর দিকে ছিল না। তবে সরকার চূড়ান্তভাবে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে, তাতে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। 
গত সোমবার কয়েকটি সূত্র সিএনএনকে জানায়, ভুল পদ্ধতিতে জিজ্ঞাসাবাদের কারণে খাশোগির মৃত্যু হয়েছে। তাঁকে হত্যার ইচ্ছা ছিল না। পরিকল্পনা ছিল অপহরণের। গত মঙ্গলবার সিএনএনকে তুরস্কের একটি সূত্র জানায়, ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে দুই সপ্তাহ আগে খাশোগিকে হত্যার পর তাঁর মৃতদেহ টুকরা টুকরা করে ফেলা হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনেও একই তথ্য উঠে এসেছে। গত সোমবার তুরস্কের কর্মকর্তারা ৯ ঘণ্টা ধরে কনস্যুলেটে অভিযান চালায়। মঙ্গলবারও তল্লাশি অভিযান চালানোর কথা ছিল। হয়নি। গতকালও একই ধরনের পরিকল্পনা ছিল।


তুর্কি কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের কাছে খাশোগি হত্যার অডিও-ভিডিও প্রমাণও রয়েছে। খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর থেকে তুরস্ক বলছে, ওয়াশিংটন পোস্টের এ কলাম লেখক কনস্যুলেটের ভেতরে খুন হয়েছেন। আর এই খুনের সঙ্গে সৌদি আরব থেকে দুটি পৃথক ব্যক্তিগত বিমানে আসা ১৫ জনের একটি দল জড়িত। সিএনএনকে তুর্কি কর্তৃপক্ষ এই ১৫ জনের পাসপোর্টের স্ক্যান কপি পাঠায়। এই দলটি ২ অক্টোবর খাশোগির নিখোঁজ হওয়ার দিন কনস্যুলেটে প্রবেশ করে এবং ওই দিনই ফিরে যায়।
সিএনএ ও দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের দেওয়া তথ্য মতে, ওই ১৫ ব্যক্তির ৯ জনই সৌদি নিরাপত্তা সংস্থা, সামরিক অথবা সরকারি মন্ত্রণালয়ের কর্মী। মুখ চেনা যায়, এমন সফটওয়্যার (সৌদি সেলফোন নম্বর তৈরি তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে), ফাঁস হয়ে যাওয়া সরকারি তথ্য, প্রত্যক্ষদর্শী ও গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

শনাক্ত হওয়া একজন মাহের আবদুলাজিজ মুত্রেব লন্ডনে সৌদি দূতাবাসে নিয়োগ পাওয়া কূটনীতিক ছিলেন। সম্ভবত তিনি প্রিন্স সালমানের দেহরক্ষী। প্রিন্সের মাদ্রিদ ও প্যারিস সফরে তাঁকে সঙ্গে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন, বস্টন ও জাতিসংঘ সফরের সময়ও তাঁকে প্রিন্স বিন সালমানের পাশে দেখা গেছে। একই দলের আরো তিন সদস্য—আবদুলাজিজ মোহাম্মেদ আল-হাওসাউই, থার ঘালেব আল-হারবি ও মুহাম্মদ সাদ আজাহরানি প্রিন্সের সঙ্গে সফরকারী নিরাপত্তা দলের সদস্য।

পঞ্চমজন সালাহ আল-তুবাইগি, ময়নাতদন্ত বিশেষজ্ঞ। টুইটারে দেওয়া নিজের পরিচয় অনুসারে তিনি সৌদি সায়েন্টেফিক কাউন্সিল অব ফরেনসিকের প্রধান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও তিনি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি সৌদি শীর্ষ মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গেও যুক্ত। এই দলেরই আরেক সদস্য মোহাম্মদ সাল আল জাহরানিকে প্রিন্স বিন সালমানের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনেও দেখা গেছে।
এক পৃথক প্রতিবেদনে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, খাশোগি হত্যার সঙ্গে যুক্ত ১৫ জনের অন্তত ১১ জন সৌদি নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কয়েক জন রয়েল গার্ডেরও সদস্য। তারা সূত্র হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ই-মেইল, স্থানীয় গণমাধ্যম ও অন্যান্য সূত্রের কথা উল্লেখ করে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com