রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:৫৮

প্রকাশিতঃ শনিবার, ১৮ আগস্ট ২০১৮ ০৪:১৬:৫৪ পূর্বাহ্ন

ভারতে ৪০ লাখ বাংলাভাষী হবে বৃহত্তম রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠী: রিপোর্ট

দিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, আসামে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথা পদক্ষেপ নিতে সরকার ব্যর্থ হলে তা বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্রবিহিন জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করতে পারে। তারা সুপারিশ করছে, এই প্রক্রিয়ার বিকল্প হলো বর্তমানে নেপালি ও ভুটানি নাগরিকরা যেভাবে ভারতে উন্মুক্ত যাতায়াত করতে পারছে, তেমন একটি ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশ আলোচনা শুরু করতে পারে। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বিষয় ও নিরাপত্তাকে একত্রে নয়, দুটিকে আলাদা বিষয় ধরে ভারত ও বাংলাদেশ আলোচনা চালাতে পারে। তবে এভাবে চলতে থাকলে ভারতে ‘বাংলাভাষীরা’ আমেরিকার মেক্সিকান সংকটে রূপ নিতে পারে। ১৬ আগস্ট প্রকাশিত সংস্থাটির রিপোর্ট মতে, সমপ্রতি প্রকাশিত প্রাথমিক খসড়ায় ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে এবং তাদের সন্দেহভাজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এখন যদিও ওই তালিকা যাচাইয়ের কাজ চলছে। কিন্তু কোনো কারণে যদি খসড়া তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত ছিল, এখন যাচাইয়ের কাজ যদি তাদের দ্বারাই করা হয় তাহলে ভুল থাকার আশংকাই সত্য হতে পারে। সংস্থাটির ভাষায়, আগের তালিকাই ‘নিয়ার রিপিট’ বা প্রায় পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। সংস্থাটির রিপোর্টে বলা হয়, অ-নাগরিক হিসেবে ৪০ লাখ মানুষকে চিহ্নিত করার ফলে এখন যাচাইয়ের কাজটি অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে। কারণ এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে দৈহিকভাবে চিহ্নিত করা এবং তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া কঠিন বিষয়। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো যখনই তাদের নাগরিক নন বলে ঘোষণা করা হবে, তখন তারা বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যেতে পারবে। পশ্চিমা দেশগুলো এ ধরনের ব্যক্তিদের দেশের সর্বোচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগ পর্যন্ত বিশেষ শিবিরে রেখে থাকে। ভারতও তামিল ও রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু শিবিরে রেখেছে। কিন্তু সেসব অভিজ্ঞতা থেকে এবারের এই অভিজ্ঞতা হবে ভিন্ন। লক্ষণীয় যে, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন রিপোর্ট দাবি করেছে, অসাম প্রক্রিয়ায় যেভাবে ৪০ লাখ মানুষকে প্রাথমিকভাবে অনাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেছে তা দেশের সকল মিডিয়া সমর্থন করেছে। মিডিয়া এটাও ইঙ্গিত করেছে, এই ৪০ লাখ মানুষই বাংলাদেশি। ভারত বেশি হলে এটা প্রমাণ করতে পারে, তাদের সবাই ভারতীয় নয়। ভারত এর আগে এমনটা বার্মা থেকে আসা ‘উদ্বাস্তু’ এবং তামিলদের বিষয়ে করেছে। ভারত আশা করতে পারে না যে, যখনই এই ব্যক্তিদের ফেরত নিতে অনুরোধ জানাবে, তখন বাংলাদেশ সরকার তা পালন করবে। বাংলাদেশ এমনতিই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের নিয়ে বিপদে আছে। এবং ভারত নিজেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে গণ্য করে ফেরত নিতে অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারের উদারনৈতিক নেত্রী অংসান সুচি নীরবতা পালন করছেন। ভারত সরকার যদিও বারংবার আশ্বস্ত করছে, যে খসড়া তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে তা কেবলই খসড়া, এনিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু গোটা ভারত জুড়ে এটাই এখন চলছে, যেখানেই প্রধানমন্ত্রী মোদিও নেতৃত্বাধীন বিজিপি সরকার রয়েছে সেখানেই একই রকম বিদেশি খেদাও দাবি উঠেছে। এখন যদি তা মানা শুরু হয় তাহলে বাস্তবে কোনো সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে তা আরো জটিল হতে পারে। রিপোর্টে আরো দাবি করা হয়, বর্তমানে লাখ লাখ না হলেও হাজার হাজার বাংলাদেশি ভারত জুড়ে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছে। এখন তাদের বিতাড়নের ব্যাপারে যদি সামাজিক প্রতিবাদ গড়ে ওঠে তাহলে তা আমেরিকার মেক্সিকান সমস্যার মতো একটি ইস্যুতে পরিণত হতে পারে। আমেরিকার নির্বাচনগুলোতে অবৈধ মেক্সকান বিতাড়ন একটি অব্যাহত স্লোগানে পরিণত হয়েছে। যেটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকানরা বেশি করেছেন। কিন্তু আপিল কোর্টকে হতাশ করা ছাড়া তারা এ পর্যন্ত এর কিছুই করতে পারেনি। ওই রিপোর্টে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়, সারা ভারতে যদি এখন ধর্ম ও ভাষার ভিত্তিতে ‘বিদেশি’ খেদাও অভিযান শুরু হয় তাহলে পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গ এবং তার আশেপাশের বিহার, আসাম, ওড়িশা ও ত্রিপুরার বাংলাভাষী এবং সম্ভবত যারা ধর্মে মুসলিম তারা ভিকটিম হতে পারেন।
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com