প্রকাশিতঃ সোমবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ১১:৫৬:৩৯ পূর্বাহ্ন
ইয়েমেনের বন্দরগুলো থেকে অবরোধ তুলে নিচ্ছে সৌদি
ইয়েমেনের বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরবের কতৃপক্ষ। রিয়াদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকে এ অবরোধ আরোপ করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট।
সোমবার সকালে সৌদি আরবের জাতিসংঘ মিশন থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর খুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’
গত ৪ নভেম্বর ইয়েমেন থেকে সৌদি আরবের রাজধানী কিং খালিদ বিমানবন্দরকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে হুথি বিদ্রোহীরা। আকাশে ওই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করলেও কঠোর পদক্ষেপ নেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। এই মিসাইল হামলার পেছনে ইরানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ করে তারা। ইরান যেন অস্ত্র সরবরাহ করতে না পারে এমন যুক্তিতে ইয়েমেনের আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে অবরোধ আরোপ করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট।
বিবৃতিতে বলা হয়, এডেন, মোচা ও মুকালা বন্দর খোলা হবে আগে। অবরোধের কারণে সীমান্তে আটকে ছিলো অনেক ত্রাণ।
জাতিসংঘসহ অন্যান্য ত্রাণ সংস্থা জানিয়েছিলো, এই মানবিক সহায়তা সময়মতো পৌঁছে দিতে না পারলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের শিকার হবে ইয়েমেন। মৃত্যুঝুঁকিতে পড়বে লাখ লাখ মানুষ। সৌদি অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য আসতে থাকে আন্তর্জাতিক চাপ। অবশেষে অবরোধ তুলে নেয়ার ইঙ্গিত আসলো সৌদি কর্তৃপক্ষের থেকে।
ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে ইয়েমেন: জাতিসংঘ
সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের অবরোধের ফলে বিশ্বের স্মরণকালের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে যাচ্ছে ইয়েমেন। জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, গত কয়েক দশকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে যাচ্ছে ইয়েমেন। এর ভুক্তভোগী হবে লাখ লাখ মানুষ।
আকাশ, নৌ ও স্থলপথে অবরোধের কারণে যুদ্ধবিধস্ত ইয়েমেনে দ্রুত সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বুধবার নিরাপত্তা পরিষদে এই সংক্রান্ত এক ব্রিফিং শেষে অবরোধ সরিয়ে নিতে সৌদি জোটের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘের মানবিক বিষয় সংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের বাদশা খালেদ বিমানবন্দরের কাছে হুতিদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার পর সোমবার সৌদি জোট ইয়েমেনে প্রবেশের সব পথ বন্ধ করে দেয়।
ইয়েমেনের বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ থাকা হুতিদের এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘বিপজ্জনক মাত্রাবৃদ্ধি’ বলেও বর্ণনা করে তারা।
তেহরান যেন আর ইয়েমেনে অস্ত্র পাঠাতে না পারে সেজন্য এই অবরোধ দেয়া হয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে সৌদি জোট। অন্যদিকে ইরান হুতিদের অস্ত্র দেয়ার কথা অস্বীকার করে আসছে।
অবরোধের আগে এ সপ্তাহের শুরুতেও জাতিসংঘ এবং রেড ক্রস জীবন রক্ষাকারী সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ ইয়েমেনির ‘বিপর্যয়কর পরিস্থিতি’ নিয়ে সতর্ক করেছিল।
রেড ক্রস বলছে, তাদের ক্লোরিন ট্যাবলেটের একটি চালান অবরোধে আটকে গেছে। কলেরা মহামারির ঝুঁকিতে থাকা অন্তত ৯ লাখ ইয়েমেনির জন্য এই ট্যাবলেট সরবরাহ করা জরুরি।
অন্যদিকে জাতিসংঘ বলছে, অবরোধের কারণে ৭ লাখ লোক দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে।
লোকক বলেন, ‘কাউন্সিলকে বলেছি ওই অবরোধ না সরলে ইয়েমেনে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হবে। দেশটির লাখ লাখ নাগরিক এই বৃহত্তম দুর্ভিক্ষের শিকার হবে, যা গত কয়েক দশকেও দেখেনি বিশ্ব।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির সিংহভাগ নাগরিকই বাইরের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু অবরোধের কারণে এখন খাদ্য, জ্বালানি কিংবা ওষুধ কিছুই ভেতরে যেতে পারছে না।
২০১৫ সালে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হস্তক্ষেপ করার পর থেকে সেখানকার পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। দুই বছরে দেশটিতে প্রায় ৯ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে, যার ৬০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। আহতের সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে ৫০ হাজার।