প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ০৩ মার্চ ২০২০ ০১:৪১:০২ পূর্বাহ্ন
নড়াচড়া করলেই কি শ্বাসকষ্ট হয়
কিছু কিছু বক্ষব্যাধি রয়েছে যেখানে প্রধান উপসর্গই থাকে একটু নড়াচড়া অথবা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গেলে শ্বাসকষ্ট বাড়ে। আবার বিশ্রামে থাকলে শ্বাসকষ্ট এমনিতেই অথবা অল্প ওষুধেই ভালো থাকে। রোগগুলোর মধ্যে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং এমফাইসিমা অন্যতম। এছাড়াও পুরনো বক্ষব্যাধির কারণে ফুসফুসের যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে থাকলেও এ সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।
হাঁপানির শ্বাসকষ্ট আবার এমন হয় না। বসে থাকলেও শ্বাসকষ্ট চলতেই থাকে। ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস রোগটি সাধারণত পুরুষেরই বেশি হয়ে থাকে এবং মধ্য বয়সের পর থেকেই তা প্রকাশ পেতে শুরু করে।
ধূমপায়ীদের মধ্যে এই রোগটির প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ধূমপান ছাড়াও ধুলা, কালো ধোঁয়া, বিষাক্ত পরিবেশ এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এই রোগের উত্তম সহায়ক। সাধারণত কোনো ব্যক্তি বছরে অন্তত তিন মাস ধরে কাশিতে ভুগতে থাকলে এবং এভাবে দুই বছরের অধিক হলে আমরা রোগীকে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের রোগী বলে ধরে নিই। অনেকে আবার সাধারণ হাঁপানির সঙ্গে এই রোগকে এক করে দেখেন। এ রোগে আক্রান্তদের শব্দ করে কাশি হয়। সঙ্গে প্রায়ই শ্লেষ্মা বা কফ থাকে। ব্রঙ্কাইটিস জীবাণু দিয়ে হয়ে থাকে। এ রোগের লক্ষণ হলো-কাশির সঙ্গে অন্তত তিন মাস ধরে শ্লেষ্মা হয়ে থাকে। প্রতি বছরই একই রোগীর এ রোগ হতে পারে। এ রোগীর কখনো কখনো কাশি বাড়ে আবার জ্বরও হতে পারে
প্রথমদিকে তার কাশি থাকে কিন্তু সেটা জীবাণু কর্তৃক সংক্রমিত হয়ে পাকা হলুদ কফে পরিণত হয়। একটু নড়াচড়া করলেই শ্বাসকষ্ট বাড়া সমস্যাটি বেশি দেখা যায় এমফাইসিমা নামক বক্ষরোগে। এই রোগটি মোটামুটিভাবে প্রচলিত একটি দুরারোগ্য বক্ষব্যাধি, যেখানে সমস্যা মানেই কফ, কাশি আর শ্বাসকষ্ট। যখন ফুসফুসের কাঠামোর অভ্যন্তরে বাতাস জমে ফুলে ওঠে তখন ফুসফুসের ভিতরের অংশগুলো নষ্ট ও অক্ষম হয়ে স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ হারিয়ে অকার্যকর হয়ে দাঁড়ায়। এই রোগ একদিনে তৈরি হয় না। মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর ধরে ফুসফুসে তৈরি হয়। ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং এমফাইসিমা একে অন্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
অন্যদিকে, দেখা যায় অনেক সময় নিউমোনিয়া সারতে চায় না। নিউমোনিয়া মূলত ফুসফুসের একটি প্রদাহজনিত রোগ। নিউমোনিয়া এমন একটি রোগ যা একটি জীবাণু দিয়ে হয়ে থাকে এবং সে জীবাণু যদি ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল বা সেনসেটিভ হয়ে থাকে তবে সেই জীবাণুর মৃত্যুর সুফলে নিউমোনিয়া ভালো হয়ে যাবে। এমন অনেক রোগী আছেন যারা কোনো না কোনোভাবে নিউমোনিয়া আক্রান্ত এবং অনেক নামি-দামি এন্টিবায়োটিক অনেক দিন ধরে ব্যবহার করার পরও নিউমোনিয়া সারছে না। এখন প্রশ্ন কেন এবং কখন নিউমোনিয়া সারতে চায় না? উল্লেখ করা হয়েছে, নিউমোনিয়া একটি জীবাণু ঘটিত রোগ, যেমন-ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাসসহ বিভিন্ন ছোট বড় এমনকি অখ্যাত জীবাণু দিয়ে এই নিউমোনিয়া হতে পারে। যদি কোনো বিশেষ জীবাণু দিয়ে এই রোগটি হয়, সেটা ঠিকমতো চিহ্নিত করা না গেলে শত এন্টিবায়োটিকের পর এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেও সারবে না। তাই আক্রমণকারীর পরিচয় উদঘাটন করা একান্ত বাঞ্ছনীয়। এ ব্যাপারে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ঠিকমতো জীবাণুর পরিচয় জানতে হবে এবং সেই জীবাণু কোন এন্টিবায়োটিকে নিশ্চিহ্ন হয় সে ব্যাপারে জ্ঞান রাখতে হবে। নিউমোনিয়া যক্ষ্মা জীবাণু দিয়েও হতে পারে। তখন তো হাজারো ওষুধ দিয়েও রোগ সারবে না। তাই সচেতন হতে হবে।
অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ
বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইকবাল চেস্ট সেন্টার, মগবাজার ওয়্যারলেস, ঢাকা।