বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫

প্রকাশিতঃ শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০২০ ১০:৩৬:৫৩ অপরাহ্ন

প্রতিষ্ঠার ৪২ তম বর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইবি প্রতিনিধি

১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে যথাক্রমে ২৪ ও ২২ কি. মি. দূরে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান। দীর্ঘ বাঁধা ডিঙিয়ে প্রতিষ্ঠার ৪২ তম বর্ষে পদার্পণ করলো দেশের পশ্চিম অঞ্চলের এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এটিই দেশের সর্বোচ্চ ইসলামী বিদ্যাপীঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হওয়ার পর দুই দফায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১৮জুলাই এক অধ্যাদেশে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর থেকে গাজীপুরের বোর্ড বাজারে স্থানান্তর করা হয়। পরে ১৯৯০ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টি গাজীপুর থেকে পুণরায় শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ফিরে আসে। জাতীয় সংসদে ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৮০(৩৭) পাস হলে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যাবলী পরিচালনায় স্বায়ত্বশাসন প্রদান করা হয়। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ৪টি বিভাগে ৮ জন শিক্ষক ও ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় একাডেমিক কার্যক্রম। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়ার পিটিআই এবং প্যারামেডিকেল ভবনে অস্থায়ী কার্যক্রম চলে। ১৯৯২ সালের পহেলা নভেম্বর গড়ে উঠে দুটি ভবন। এর মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়টি পায় এক স্থায়ী ঠিকানা। ইতোপূর্বে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হতোনা। পরে ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো ছাত্রী ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শিক্ষার্থী ভর্তির রেওয়াজ চালু হয়। ১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ ঠিকানায় শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। সেই সাথে উচ্চতর ডিগ্রী প্রদানের জন্য ১৯৯৩ সালের দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.ফিল এবং পি.এই.ডি কার্যক্রম শুর হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৮টি অনুষদের অধীনে চালু রয়েছে ৩৪টি বিভাগ। এতে ১৫ হাজার ৩৮৪ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন, যাদের মধ্যে ছাত্র ১০ হাজার ২৯১ এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৯৩ জন। বর্তমানে ৩৯৭ জন শিক্ষক শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও ৪৫৯ জন কর্মকর্তা, ১৭৭ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৭৭ জন সাধারণ কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখে চলেছেন। বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধর্মের ও বর্ণের দেশী-বিদেশী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ব্যবসা প্রশাসন, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন, মানবিক ও কলা অনুষদীয় বিষয়ের পাশাপাশি দেশে শুধুমাত্র এখানেই ধর্মতত্ব ও ইসলামী আইনের উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী প্রদান করা হয়। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্সটিটিউটের সঙ্গে অ্যাকাডেমিক বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় উন্মুক্ত হয়েছে নতুন দ্বার। বিগত ৪১ বছরে মাত্র ৪টি সমাবর্তন পেয়েছে ইবি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৭ই জানুয়ারি হয় ৪র্থ সমাবর্তন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের উপস্থিতিতে ১৬ বছর পরে এতে অংশ নেয় প্রায় ১৮ হাজার গ্রাজুয়েট। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি স্মরণে নির্মিত মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরাল যা দেশের দ্বিতীয় উচ্চতম বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যাল, মুক্তবাংলা, শহীদ মিনার, পানির ফোয়ারা, শ্বাশত মুজিব ম্যুরাল এবং ৭ই মার্চের ভাষণ সম্বলিত মুক্তির আহবান নির্মিত হয়েছে। এছাড়া রয়েছে মনোমুগ্ধকর মফিজ লেক। যেটি বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। বিকাল হলেই এ লেকের নয়নাভিরাম পরিবেশ উপভোগ করতে শিক্ষার্থীরা সহ বাইরে থেকেও লোকজন ছুটে আসে । মুক্তিযুদ্ধের উপর বিস্তারিত জ্ঞান অর্জনের জন্য কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া ডিজিটাল লাইব্রেরি একসেস সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার বই ডিজিটাল লাইব্রেরির আওতায় আনা হয়েছে। এ অটোমেশনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুব সহজে সার্চ করে কাঙ্খিত বই খুঁজে পাবেন এবং বই বাসায় নিয়ে পড়তে পারবে। ইতিমধ্যেই সবচেয়ে বড় সমস্যা সেশনজটের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বাজেট পেয়েছে ৫ শত ৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকার মেগা প্রকল্প। এ মেগাপ্রকল্পের আওতায় ক্যাম্পাসে ৯টি দশতলা ভবন ও ১টি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার নির্মাণ, ১২টি ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ, গভীর নলকূপ স্থাপন, ২টি ৫০০ কেভি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, সোলার প্যানেল স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ১৩ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ১৩তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। করোনা মহামারীর কারনে এবার স্বাস্থবিধি মেনে দিবসটি উদযাপন করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের দূর্গ হিসেবে গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com