প্রকাশিতঃ শনিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:০২:০৬ অপরাহ্ন
ঢাকার উত্তরার তুরাগ এলাকার নিশাত নগরের বাসার সামনে থেকে তুলে নেয়ার এক মাসেও হদিস মেলেনি কুষ্টিয়ার যুবক বাকী বিল্লাহর। গত ১২ নভেম্বর জেলার ভেড়ামারা উপজেলার বাসিন্দা বাকী বিল্লাহকে তুরাগ থানাধীন নলভোগ এলাকার ভাড়াবাড়ির নিচতলা থেকে ডিবি পরিচয় দানকারী দুই ব্যক্তি মাইক্রোবাসে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়।তবে পুলিশ তাকে আটক কিংবা উঠিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেনি। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় জিডি করার এক মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ ওই ব্যক্তির সন্ধান দিতে পারেনি।
বাকী বিল্লাহর সন্ধান ও উদ্ধারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে শনিবার সকালে কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের হল রুমে সংবাদ সম্মেলন করেন বাকী বিল্লাহর বাবা ইয়াকুব আলী। সেখানে বাকী বিল্লাহর স্ত্রী কুলসুম আক্তারসহ ৩ শিশুসন্তান উপস্থিত ছিলেন। বাকী বিল্লাহ ঢাকায় একটি ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।
ইয়াকুব আলী বলেন, তার ছেলে বাকী বিল্লাহ ২০০১ সালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। এরপর নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি হয়। ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে না পারায় একপর্যায়ে লেখাপড়া ছেড়ে ঢাকায় অনলাইনে কাজ শুরু করে বাকী। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
বাকী বিল্লাহর স্ত্রী কুলসুম আক্তার জানান, ঢাকার তুরাগ থানার অন্তর্গত নলভোগ এলাকার ১০ তলা ভবনের তিনতলায় তারা ভাড়া থাকতেন। তার স্বামী বাকী বিল্লাহ ফ্রিল্যান্সার এবং কাজ করতেন আউট সোর্সিং বৃহৎবাজার ‘আপওয়ার্কে’। বড় ছেলেকে মাদ্রাসায় রেখে আসার জন্য ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় তুরাগ থানার নিশাতনগর এলাকার বাসা থেকে বের হন বাকী। বাড়ির নিচে নামতেই নিরাপত্তা রক্ষীর সামনে ডিবি পুলিশ পরিচয়ধারী দুই ব্যক্তি বাকী বিল্লাহকে মাইক্রোবাসযোগে তুলে নিয়ে যায়। গাড়ির মধ্যে আরও ৮ থেকে ১০ জন ছিল।
তিনি জানান, ঘটনার পর ডিবি কার্যালয় ও তুরাগ থানায় পরিবারের পক্ষে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ তাকে আটকের কথা স্বীকার করেনি। পরদিন তুরাগ থানায় জিডি করতে গেলে তা নেয়া হয়নি। ৫ দিন ঘোরানোর পর জিডি নেয় থানা। কিন্তু পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে গত এক মাসেও সন্ধান না পেয়ে ওই পরিবার চরম আতঙ্কগ্রস্ত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
এছাড়া পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাকী বিল্লাহকে হারিয়ে স্ত্রী কুলসুম আক্তার নাবালক তিন পুত্রসন্তান সাকির আল মাহদী (৭), আদনান জুবায়ের (৫) ও আবদুল্লাহ তালহাকে (৩) নিয়ে ঢাকা ছেড়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন শ্বশুরবাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ষোলদাগ গ্রামে।
ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে- তুরাগ থানা ও ঢাকাস্থ ডিবি পুলিশ এমন কথা বলে উদ্ধার কাজে গড়িমসি করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
বাকী বিল্লাহ কোনো অপরাধী নন। তবে তিনি অপরাধ সংঘটিত করলে তাকে বিচারিক আদালতে হাজির করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি তাকে উদ্ধারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ বাকী বিল্লাহর বৃদ্ধ পিতা ইয়াকুব আলী, বড় ভাই শাফি উল্লাহ, স্ত্রী ও নাবালক তিন সন্তান উপস্থিত ছিলেন।