রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ০৮:১৪

প্রকাশিতঃ বুধবার, ১৪ মার্চ ২০১৮ ০৭:১৬:০০ অপরাহ্ন

প্রেমের বিয়ে, ৬ মাস পর স্বীকৃতির দাবিতে তরুণীর অনশন

রংপুর : কিশোর বয়সে প্রেম। এরপর অন্তঃসত্ত্বা। পারিবারিক চাপে বিয়ে হলেও শ্বশুরবাড়ির লোকদের চাপে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার পর এখন পুনরায় স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে রংপুর মহানগরীর চিলমন পাঙ্গাটারী এলাকায় অনশন শুরু করেছে দশম শ্রেণির ছাত্রী রুমাইয়া আখতার রুমি।

দুইদিন থেকে অভুক্ত অবস্থায় থাকলেও বুধবার বিকেল পর্যন্ত ওই কিশোরীকে ঘরে তুলে নেয়নি স্বামীর পরিবার। উল্টো তাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বিয়ের ছয় মাস পর কিশোরীর জীবন নিয়ে শুরু হয়েছে করুণ খেলা।

স্থানীয় কাউন্সিলর পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেও কোনো সুরাহা পায়নি কিশোরী রুমি। সে রংপুর মহানগরীর ৮ নং ওয়ার্ডের বধু কমল এলকার এনামুল হকের মেয়ে এবং তার স্বামী তাওহিদ ৯ নং ওয়ার্ডের চিলমন পাঙ্গাটারী এলাকার আমিনুর রহমানের ছেলে।

অনশনরত কিশোরী রুমাইয়া আখতার রুমি জানায়, নগরীর মহববত খাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় একই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র তাওহিদ ইসলামের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিয়ের চাপ দিলে তাওহিদ তাতে অস্বীকৃতি জানায়।

বিষয়টি স্কৃল কর্তৃপক্ষ এবং তাওহিদের পরিবারকে জানায়। তারপর গ্রাম্য বৈঠকে বিষয়টি প্রামণিত হওয়ার পর ৬ মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। তবে বয়স কম থাকার কারণ দেখিয়ে তাওহিদের বাবা আমিনুর রহমান ওই সময় বিয়ে রেজিস্ট্রি করাননি। বিয়ের পর তাওহিদ তাকে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সংসার শুরু করে।

রুমি জানায়, এরই মধ্যে আমার সঙ্গে তাওহিদের পরিবারের লোকজন নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলে। আমার পড়ালেখার কথা চিন্তা করে তারা আমাকে দুই মাসের পেটের সন্তান নষ্ট করাতে বাধ্য করে। তাদের কথা মতো গর্ভের সন্তান নষ্ট করার পরই শুরু হয় তাওহিদের পরিবারের নতুন খেলা। তারা আমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। সেখানে ১ মাস থাকার পর আমি আবারও স্বামীর বাড়িতে আসলে স্বামীর পরিবার আমাকে ঘরে তুলতে অস্বীকৃতি জানায়।

রুমি জানায়, মঙ্গলবার সকালে মেম্বার আবুল হোসেন আমাকে তাওহিদের বাড়িতে উঠিয়ে দিতে আসলেও তারা আমাকে গ্রহণ করেনি। একপর্যায়ে আবুল হোসেনের উপস্থিতিতেই আমাকে শ্বশুর আমিনুর, শাশুড়ি নুরজাহানসহ অন্যান্যরা ব্যাপক মারপিট করে রাস্তায় ফেলে যায়। সেখান থেকে কোনো রকমে উঠে এসে আমি স্বামীর বাড়ির গেটের সামনে অনশনে বসেছি। আমার সঙ্গে এলাকার শত শত মানুষ এসে যোগ দেয়। এরই মধ্যে মঙ্গলবার গভীর রাতে আমার শ্বশুর ও শাশুড়ি গেটের বাইরে এসে এলাকাবাসীকে লাঠি দিয়ে পেটানোর পাশাপাশি আমাকেও নির্যাতন করে।

রুমি আরও জানায়, বিষয়টি আমি স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম দেওয়ানী, কোতোয়ালি থানার ওসিসহ সবাইকে জানিয়েছি। কিন্তু কেউ এখন পর্যন্ত আমার দাবি পূরণে এগিয়ে আসেনি। বরং আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমার স্বামীকে লুকিয়ে রেখে আমাকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য মারপিট করার পাশাপাশি হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমাকে বিয়ের স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত আমি না খেয়ে থাকব।

মহব্বত খাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, অনশনরত ছাত্রী আমার বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। গত ৬ মাস আগে বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধান করা হলেও ছেলের পরিবার বিষয়টি নিয়ে টালবাহনা করছে। এতে মেয়েটির জীবন সংকটের মুখে পড়েছে।

রুমির বাবা এনামুল হক বলেন, আমার মেয়ের জীবনটাকে ধংস করে দেয়া হচ্ছে। ওরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ওদেরকে কিছু বলতে পারছে না। কেউ কিছু বলতে গেলে তার নামে মামলা করার হুমকি দিচ্ছে। আমি চাই আমার মেয়েকে তার স্বামীর ঘরে সংসার করার সুযোগ দেয়া হোক।

তাওহিদের বাবা আমিনুর রহমান বলেন, গত ৬ মাস আগে রুমির পরিবারের লোকজন আমার ছেলেকে জোর করে বিয়ে দেয়। মৌখিকভাবে আমি বিয়াইকে ডাকি এবং আমাদের মধ্যে একটা চুক্তি হয় যে, ছেলে-মেয়ে সাবালক না হওয়া পর্যন্ত সংসার করবে না। সেজন্যই আমি তাকে ঘরে তুলিনি। তবে প্রোরোচিত করে পেটের সন্তান নষ্ট করার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম দেওয়ানী জানান, বিষয়টি সমাধানে বুধবার রাতে উভয়পক্ষের লোকজনকে নিয়ে বসার কথা আছে।

এ ব্যাপারে রংপুর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান সাইফ জানান, ভুক্তভোগী কিশোরী বিষয়টি মোবাইলে আমাকে জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com