প্রকাশিতঃ রোববার, ১৩ মে ২০১৮ ০৮:৩৪:৪২ পূর্বাহ্ন
যানজটে স্থবির ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর ফতেহপুরের রেলগেট থেকে লাগা যানজট আজও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা হয়ে সীতাকুণ্ডেরও ২৫ কিলোমিটার এলাকা ছাড়িয়ে গেছে। তৃতীয় দিনের মতো সীতাকুণ্ডে যানজট অব্যাহত রয়েছে। পুলিশি তৎপরতায় গতকাল শনিবার বেলা একটার দিকে সীতাকুণ্ড অংশ যানজটমুক্ত হলেও রাত সাড়ে আটটার পর থেকে আবার যানজট শুরু হয়। রাতভর চলতে থাকে যানজট। এই মহাসড়কের কোথাও গাড়িগুলো অনেকক্ষণ ধরে একেবারেই থেকে আছে। আবার কোথাও চলছে ধীরগতিতে।
এদিকে গতকাল সকাল ১০টার দিকে ধীরে ধীরে গাড়ি চলতে শুরু করলে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় হুড়োহুড়ি করে গাড়ি চালাতে গিয়ে লরিচাপায় এক আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন।
ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) রফিক আহম্মদ মজুমদার বলেন, অতিরিক্ত যানজটের একটা অন্যতম কারণ এখন চালকদের ঘুম। যানজটে আটকে যাওয়ার পর অনেক চালক ঘুমিয়ে পড়েন। এ কারণে সামনের গাড়ি চলতে শুরু করলে সড়কের অনেক অংশে ফাঁকা হয়ে গেলেও কিছু চালকের ঘুমানোর কারণে যানজট দীর্ঘ হয়। চালকদের ঘুম থেকে তুলে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করেছেন। যানজটমুক্ত করতে গতকালের মতো আজও দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত লাগতে পারে বলে অনুমান করছেন তিনি।
সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন অংশে দেখা যায়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। যানজটে আটকা পড়া অনেক গাড়ির চালক ঘুমিয়ে পড়েছেন। অনেকে গাড়ি বন্ধ রেখে গাড়ি থেকে নেমে খোশগল্পে মেতেছেন। সকালে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা অনেক যানবাহনকে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাসুম আল জাকি গতকাল শনিবার বিকেলে বাসে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। রাত ১২টার দিকে বহনকারী বাসটি সীতাকুণ্ডে এসে পৌঁছায়।
আজ রোববার সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত সীতাকুণ্ডের ওই এলাকা পার হতে পারেননি তিনি। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাসুম ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘কক্সবাজার থেকে গতকাল বিকেলে রওনা হয়ে রাত ১২টা থেকে এই একই জায়গায় বসে আছি। সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম।’
কুমিরা এলাকায় কথা হয় সীতাকুণ্ড মহিলা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সনি দাসের সঙ্গে। সে জানায়, তার ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৫ মে থেকে শুরু। এখন কলেজে ব্যবহারিক ক্লাস চলছে। যানজটের কারণে গতকালও ক্লাসটি করতে পারেনি। আজও সকাল সাতটার দিকে বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের কলেজে যাওয়ার জন্য এক ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
ঢাকামুখী একটি কাভার্ডভ্যানের চালক মাঈন উদ্দিন বলেন, তিন ঘণ্টায় তিনি দেড় কিলোমিটার যেতে পেরেছেন। তিনি তৈরি পোশাকের কাঁচামাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। কখন যাবেন, তা তিনি অনুমান করতে পারছেন না।
কুমিরা হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক মাসুদ আলম সকাল আটটার দিকে গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি মিরসরাই উপজেলা অংশে কাজ করছেন। সেদিকটা যানজটমুক্ত হলে সীতাকুণ্ডও যানজটমুক্ত হবে।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান বলেন, গতকাল জেলা পুলিশের দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, দুজন সহকারী পুলিশ সুপার, সাতজন পরিদর্শকসহ মোট ৮৪ জন পুলিশ সদস্য মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। হাইওয়ে পুলিশ রয়েছে আরও ৭০ থেকে ৮০ জন।
আনসারসহ দুজন নিহত
গতকাল সকালে ধীরে গাড়ি চলাচল করতে শুরু করলে চালকদের মধ্যে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এ সময় উপজেলার জোড়আমতল এলাকায় কর্মস্থলে যাওয়ার সময় লরির চাপায় মো. রেজাউল করিম (২৫) নামে এক আনসার সদস্য নিহত হন।
তিনি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার ফজলুর হকের ছেলে এবং ঘোড়ামারার টোটাল গ্যাস কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন বলে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড থানার ওসি ইফতেখার হাসান।
এর আগে গত শুক্রবার রাত পৌনে নয়টার দিকে বাড়বকুণ্ড চারালকান্দি এলাকায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি (৩০) নিহত হন। তাঁর লাশ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
ট্রেনস্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট থাকায় গতকাল সীতাকুণ্ড স্টেশনে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। তাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্টেশন কর্মকর্তাদের। জায়গা না পেয়ে ছাদে করেও মানুষ নিজ গন্তব্যে রওনা দিয়েছে। স্টেশনমাস্টার মতিলাল বড়ুয়া গতকাল রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকামুখী তিনটি লোকাল ট্রেনে যাত্রীর চাপ ছিল বেশি। নিষেধ সত্ত্বেও মানুষ ট্রেনের ছাদে উঠে ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।