শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ১২:৩৯ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বৃহস্পতিবার, ০৯ জুলাই ২০২০ ০৫:৫২:৫৬ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

আইসোলেশনে থাকলে যে সাতটি কাজ করবেন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনের রয়েছেন ১৬ হাজার ৮৫৬ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টাতেই আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ৭৯২ জন। বাংলাদেশে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই এতে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি আইসোলেশনে যাওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। কারণ কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দিলেও টেস্ট করার আগ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায় না যে ওই ব্যক্তি আসলেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা। আবার যারা টেস্ট করার পর পজিটিভ বলে শনাক্ত হন তাদেরও আইসোলেশনে থাকতে হয়। যাতে করে তার কাছ থেকে পরিবারের অন্য কেউ বা অপরিচিত কারো মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। কোভিড টেস্টে নেগেটিভ না পর্যন্ত আইসোলেশনেই থাকতে হয় লক্ষণ ও উপসর্গ থাকা রোগীদের। গত ২৬ জুন থেকে আইসোলেশনে রয়েছেন আতিয়া আনোয়ার। করোনা পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসার কারণে টেস্ট করিয়েছেন তিনি। ফলে তারও টেস্টের ফল পজিটিভ এসেছে। তবে হালকা কাশি ছাড়া তার মধ্যে আর কোন উপসর্গ নেই। এদিকে জ্বর, কাশি, শরীর ব্যথা আর মাথা ব্যথা ভুগেছেন বিপ্লব সিদ্দিকী। তবে কোভিড টেস্ট করাননি তিনি। আইসোলেশনে থাকার সময় এমন নানা ধরণের উপসর্গ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ভোগেন অনেকে। জানতে চান যে, এসব উপসর্গ থাকলে কী করা উচিত? আইসোলেশনে কিভাবে থাকা উচিত? ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. লুবনা আফরোজ ইভা। তিনি বলেন, নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ বা নেগেটিভ যাই আসুক না কেন করোনা সংক্রমণের এই সময়টাতে কারো মধ্যে কোভিডের মতো উপসর্গ থাকলে তার অবশ্যই আইসোলেশনে থাকা উচিত। একই ধরণের তথ্য দিয়েছেন আইইডিসিআর এর একজন উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেনও। তিনি বলেন, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আইসোলেশনে থাকার বিকল্প নেই। ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, "কোভিডের উপসর্গ হিসেবে যদি কারো জ্বর থাকে তাহলে সেটি সেরে যাওয়ার পর, কোন ধরণের ওষুধ সেবন ছাড়া যদি তিনি পরপর তিন দিন সুস্থ বোধ করেন, স্বাভাবিক থাকেন তাহলে ধরে নিতে হবে যে তিনি করোনামুক্ত। তার যদি অন্য কোন শারীরিক সমস্যা না থাকে তাহলে তিনি নিশ্চিত হতে পারেন। " তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী, যদি তার শারীরিক অন্য কোন সমস্যা না থাকে তাকে ১৪ দিন পর করোনামুক্ত হিসেবে গণ্য করা হবে বলেও জানান তিনি। ১. পুরো দিনের একটি রুটিন তৈরি করুন আইসোলেশনে থাকার সময় সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কী কী করবেন তার একটি রুটিন বা তালিকা তৈরি করুন এবং মেনে চলার চেষ্টা করুন। খাওয়া, ঘুম, শরীর চর্চা, বিনোদনমূলক কাজ কখন কত সময় ধরে করবেন তার আলাদা আলাদা তালিকা তৈরি করা যেতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, কোন কাজ যেটি এর আগে সময়ের অভাবে করতে পারেননি সেই কাজ আইসোলেশনের সময়টাতে করতে পারেন। যারা ব্যবসা বা চাকরির সাথে জড়িত তাদের এমনিতেও বেশ ব্যস্ত থাকতে হয়। তারা সেগুলো গুছিয়ে নিতে পারেন। বিভিন্ন ধরণের বিনোদনমূলক কাজ যেমন সিনেমা দেখা, বই পড়ার মতো কাজ গুলো করতে পারেন। ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তির যিনি দেখা-শুনা করেন সেই ব্যক্তির সাথে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এবং মাস্ক ব্যবহার করে যোগাযোগ করা, কথা-বার্তা বলা যেতে পারে। ২. মনোবল শক্ত রাখুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলে অনেকেই ঘাবড়ে যান। মনোবল হারিয়ে ফেলেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, মনোবল না হারালে এবং মানসিকভাবে শক্ত থাকাই এসব লক্ষণ থেকে সেরে ওঠার প্রাথমিক শর্ত। ডা. লুবনা আফরোজ ইভা এবং ডা. মুশতাক হোসেন উভয়েই বলেন, যারা কোভিডের উপসর্গে ভুগছে এবং তার হাসপাতালে যেতে হয়নি বরং বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাহলে বুঝতে হবে যে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ তার মধ্যে মৃদু সংক্রমণ হয়েছে। তার সংক্রমণ তীব্র নয়। তিনি বলেন, বাসায় থাকলে যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জ্বর, সারা গায়ে ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা, স্বাদ ও গন্ধ না পাওয়া ইত্যাদি। চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার অনেক কম। একই তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংখ্যাও। সংস্থাটির হিসাবে, বাংলাদেশে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে। অন্যান্যদের মধ্যে আগে থেকেই স্বাস্থ্য জটিলতা না থাকলে তাদেরও সুস্থ হওয়ার হার বেশি। তাই কোভিড হলেই যে কেউ মারা যাবে সেটি চিন্তা না করে মনোবল দৃঢ় রাখতে হবে। ৩. পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ঘুমের বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে আইসোলেশনের থাকার সময় একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। সেই সাথে দুপুরে এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেয়া যেতে পারে। তবে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার কারণে অনেকেরই শরীর অনেক সময় বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে তার বেশি ঘুমানোর দরকার হতে পারে। ৪. পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া কোভিডে আক্রান্ত হলে সব ধরণের স্বাভাবিক খাবার বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ সময় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সবল হয়। অনেকে কোভিডের উপসর্গ থাকলে বেশি বেশি গরম পানি, চা, সুপ এবং গরম পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে ডা. লুবনা আফরোজ বলেন, রোগী যে খাবার খেয়ে উপশম বোধ করে এমন সব খাবার তাকে খেতে দেয়া যেতে পারে। ৫. শারীরিক ব্যায়াম করুন আইসোলেশনে থাকার সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে শরীর চর্চা করা যেতে পারে বলে জানান চিকিৎসকরা। তবে এ সময় ভারী কোন ব্যায়াম না করার পরামর্শ দিয়েছেন আইইডিসিআর এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, "শারীরিক অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে শরীরটাকে সচল রাখার জন্য তাকে হালকা ব্যায়াম করতে হবে। তবে যেহেতু এ সময় জ্বর থাকে তাই ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া ফুসফুসকে সুস্থ ও সবল রাখতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করারও পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। ৬. রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। আর সেটি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছালে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হতে পারে। সেকারণে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ৭. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন যেহেতু করোনাভাইরাসের এখনো কোন ধরণের প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই তাই এর চিকিৎসায় মূলত হয় উপসর্গ ভিত্তিক। যাদের জ্বর রয়েছে তাদেরকে জ্বরের ওষুধ দেয়া যেতে পারে, কাশি থাকলে কাশির ওষুধ। জ্বর বেশি হলে এক সাথে দুটো ওষুধ খাওয়া যেতে পারে," বলেন ডা. লুবনা আফরোজ। যাদের অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ডায়াবেটিক বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, বয়স বেশি তাদের ক্ষেত্রে এ ধরণের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সতর্কতা নিতে হবে।





আরো খবর