টানা বর্ষণে মঙ্গলবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড় ধসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আগের দিন রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় পাহাড় ধসের শিকার হয়ে শিশুসহ দু’জন মারা গেছে।
নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন এবং বন-জঙ্গল ও গাছপালা উজাড় করার কারণেই চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘনঘন পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। পাহাড়ের গায়ে জন্মানো বন-জঙ্গল ও গাছপালা এর অভ্যন্তরীণ বন্ধন মজবুত রাখে।
পাহাড় কাটার কারণে সেই বন্ধন দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে পাহাড় ধসের পথ সুগম হয়। পরিণতিতে প্রতি বছরই প্রাণ হারায় মানুষ। স্থানীয় সাধারণ মানুষ ছাড়াও প্রভাবশালী মহল ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে।
অথচ এ ব্যাপারে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এমন নজির নেই। ফলে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাগুলোয় পাহাড় কাটা, অবৈধ স্থাপনা ও বসতি নির্মাণ বন্ধ হয়নি।
বস্তুত কিছু মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের দরুন প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। পাহাড়খেকোদের কবলে পড়ে কেবল চট্টগ্রামেই গত এক দশকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে ৩৫টি পাহাড়। সেই সঙ্গে অন্তত ১৫৬টি পাহাড় ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে।
নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে শুধু পাহাড় ধস নয়, এর ফলে একদিকে চট্টগ্রাম নগরী দিন দিন শ্রীহীন হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালিতে নগরীর নালা-নর্দমা ভরাট হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।
পাহাড় ধসসহ যে কোনো দুর্যোগ স্থায়ীভাবে মোকাবেলার উদ্যোগ নেয়া জরুরি। জানা গেছে, বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে এখনও বসবাস করছে লক্ষাধিক মানুষ।
২০০৭ সালের মর্মান্তিক পাহাড় ধসের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি পাহাড় ধসের ২৮টি কারণ নির্ণয় করে ৩৬ দফা সুপরিশ প্রণয়ন করেছিল, যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
মনে রাখতে হবে, প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। পরিবেশ রক্ষায় আন্তরিক না হলে আমাদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে সে দায় শোধ করতে হবে। কমিটির সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি বেআইনিভাবে পাহাড় কাটা রোধে এবং পাহাড়ে বসবাসকারীদের পুনর্বাসনে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।