মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০২:১৩ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বুধবার, ১২ জুন ২০১৯ ০৪:৪৭:৪৪ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

ক্ষমতার অপব্যবহার করেন ডিআইজি মিজান

পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান অন্যায়ভাবে হীনস্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তার কর্মকাণ্ড পুলিশ বিভাগসহ সরকারের ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে। তার এ ধরনের কাজ পুলিশের বিভাগীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী যা অসদাচরণের শামিল। পুলিশের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ‘ডিআইজি মিজানুর রহমান একজন দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়ে সরকারি দায়িত্বের বাইরে জনৈক নারীর সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। যার ফলে কোনো মেয়ের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক, জোর করে তুলে নেয়া, বিবাহ ও প্রতারণা করার মতো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ইত্যাদিতে ফলাও করে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। এতে পুলিশ বিভাগ তথা সরকারের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তার এহেন আচরণ অকর্মকর্তাসুলভ, যা অসদাচরণ হিসেবে পরিগণিত।’ ‘তুলে নিয়ে বিয়ে করলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার’ শিরোনামে গত বছরের ৭ জানুয়ারি যুগান্তরে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপরই ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এফঅ্যান্ডটি) বর্তমানে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মইনুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বর্তমানে অতিরিক্ত আইজিপি (এফঅ্যান্ডটি) শাহাব উদ্দিন কোরেশী ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বিশেষ পুলিশ সুপার মিয়া মাসুদ করিম। কমিটি গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন মহাপুলিশ পরিদর্শকের কাছে জমা দেন। এরপর নিয়মানুযায়ী প্রতিবেদনটি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এতে শুধু ডিআইজি মিজানুর রহমানই নন, তার গাড়িচালক এটিএসআই গিয়াস উদ্দিন ও বাসার অর্ডারলি এএসআই জাহাঙ্গীর আলমকে ডিএমপি থেকে সরিয়ে অন্যত্র পোস্টিংসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এআইজি মিডিয়া সোহেল রানা মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনটি ওই সময়ই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। গাড়িচালক ও অর্ডারলির বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না। ওই সময় তিনি অন্যত্র কর্মরত ছিলেন। তবে পুলিশের অন্য একটি সূত্র জানায়, স্বপদে তাদের ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। গত বছরের ১৭ জুলাই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি মিজানুর রহমানকে সাসপেন্ড করার কথা বলেন। তদন্ত অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি। মইনুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, মিজানুর রহমান নিজে সরকারি গাড়িতে উপস্থিত থেকে সংবাদপাঠিকাকে তার বাড়ি পৌঁছে দেয়ার পথে প্রগতি সরণিতে গাড়ির ভেতর হাতাহাতি ও বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তিনি সংবাদপাঠিকাকে চড় মেরেছিলেন। সংবাদপাঠিকা লাঞ্ছিত হয়ে প্রগতি সরণির নদ্দা ট্রাফিক সিগন্যালের কাছে মিজানুর রহমানের গাড়ি থেকে নেমে চিৎকার করেন। এতে লোকজন এগিয়ে এলে মিজানুর রহমান গাড়িসহ আটকা পড়েন। এ সময় তিনি নিজেকে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিচয় দেন। পরে ট্রাফিক পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ এলে তিনি সেখান থেকে চলে যেতে সমর্থ হন। এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ইলেকট্রনিক প্রচার মাধ্যমে এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশ ও প্রচার হয়, যা পুলিশ বিভাগ ও সরকারের ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে। গাড়িচালক গিয়াস উদ্দিন ও অর্ডারলি জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিটি সামগ্রিক অনুসন্ধানে দেখতে পায়, আলোচ্য ঘটনার বিতর্কিত প্রায় প্রতিটি অংশে মিজানুর রহমানের গাড়িচালক এটিএসআই মো. গিয়াস উদ্দিন জড়িত। তার বক্তব্য ও বিভিন্ন সাক্ষীর বক্তব্য কমিটি কর্তৃক যাচাইকৃত বিভিন্ন অডিও/ভিডিও ক্লিপ পর্যালোচনা করা হয়। গিয়াস উদ্দিনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এবং কুইন তালুকদার ও তার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ইকোকে আপস-মীমাংসা করার জন্য অনৈতিক চাপ প্রয়োগের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে। একজন সরকারি গাড়িচালক কোনো কর্মকর্তার ব্যক্তিগত বিতর্কিত ও অনৈতিক বিষয়ে জড়িয়ে পড়া গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে তাকে (ড্রাইভার গিয়াস উদ্দিন) ঢাকা জেলা থেকে দূরবর্তী কোনো অঞ্চলে বদলি করা যেতে পারে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তদন্ত রিপোর্টে অর্ডারলি জাহাঙ্গীরের বিষয়ে বলা হয়, বিতর্কিত কিছু অংশে মিজানুর রহমানের অফিসে (তৎকালীন) কর্মরত অর্ডারলি জাহাঙ্গীর আলমের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত এএসআই জাহাঙ্গীর আলমকে ঢাকা মহানগরী থেকে দূরবর্তী কোনো অঞ্চলে বদলি করা যেতে পারে, একই সঙ্গে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়। এতে অতিরিক্ত সুপারিশে, ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর রমনা থানায় দায়ের করা ২৫নং মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট থানার তদন্তকারী কর্মকর্তার পরিবর্তে সিআইডি কর্তৃক তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই মামলাটি ছিল মরিয়ম আক্তার ইকো ও তার মা কুইন তালুকদারের বিরুদ্ধে মগবাজারের কাজী সেলিম রেজার। এ বিষয়ে বলা হয়, বিষয়টিতে রেজিস্টার/নথিপত্র জালজালিয়াতির বিষয়গুলো জড়িত মর্মে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠনের পরপরই মিজানকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পদ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর গত ১৫ মাসেও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই সময় যুগান্তরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মরিয়ম আক্তার ইকো ডিআইজি মিজানুর রহমানকে নিজের স্বামী পরিচয় দিয়ে নির্যাতনের নানা অভিযোগ করেন। তিনি বললেন, ‘ডিআইজি মিজান (ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার) আমাকে বাসার নিচ থেকে জোরপূর্বক তুলে রাজধানীর ৩০০ ফুট এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে মারধর করে রাতে তার বেইলি রোডের বাসায় নিয়ে আসেন। সুস্থ করার নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. গাজী শামীম হাসানের উপস্থিতিতে ওষুধ খাইয়ে আমাকে অজ্ঞান করা হয়। পরদিন দুপুরে ঘুম থেকে জেগে দেখতে পাই আমার পরনে ডিআইজির স্লিপিং ড্রেস...।’ ওই রাতেই ৫০ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে তাদের বিয়ে হয়। তিনি ডিআইজি মিজানুর রহমানের বাসায় অনধিকার প্রবেশ করে ভাংচুর করেছেন এমন অভিযোগে করা মামলার আসামিও হয়েছেন। বর্তমানে এ মামলা থেকে আদালত তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে ডিআইজি মিজানুর রহমানের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করা হয়; কিন্তু বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।





আরো খবর