বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ১০:৩৯ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শনিবার, ১৮ মে ২০১৯ ০৬:০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

ভরা মৌসুমেও টনে টনে ভারতীয় চাল আমদানি

ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দেশের কৃষকরা যখন ক্ষেতেই পাকা ধানে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে ঠিক তখনই ভারত থেকে হাজার হাজার টন চাল আমদানি করা হচ্ছে। এতে আমদানিকারক ও ভারতীয় কৃষকরা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের কৃষকরা। সরকারের মন্ত্রীরা যখন বিদেশে চাল রফতানির কথা বলছে ঠিক সে সময় হাজার হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানিকে অনেকে হাস্যকর বলছেন। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সংকট না থাকা সত্ত্বেও চাল আমদানি করায় বাজারে ধানের দাম আরও কমে যাচ্ছে। মিল মালিকরা বলছেন, বিদেশ থেকে চাল আমদানির ফলে বাজারে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। কমছে দেশি চালের দাম ও চাহিদা। আমদানি বন্ধ না হলে কৃষকরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের অন্যতম বৃহৎ দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত দেড় মাসে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন চাল। হিলি স্থলবন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মিডিয়া কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মল্লিক প্রতাপ জানান, গত এপ্রিল মাসে ভারত থেকে চাল এসেছে ৯ হাজার ১৭৮ মেট্রিক টন। গত ১৫ মে পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে চাল এসেছে ৫ হাজার ২শ’ মেট্রিক টন। তিনি জানান, দিনে গড়ে ৩শ’ মেট্রিক টন চাল ঢুকছে হিলি বন্দর দিয়ে। বেশির ভাগই সম্পা কাটারি চাল বলে জানান তিনি। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ধান উৎপাদন বাড়লেও ব্যাপক হারে চাল আমদানি হওয়ায় বাজারে ধানের দাম বাড়ছে না। চাল আমদানি করায় কৃষকরা তাদের ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এতে কৃষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এটিএম শফিকুল ইসলাম জানান, গত কয়েক বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের কার্যকর পদক্ষেপে দেশে ধান উৎপাদন অনেক গুণ বেড়েছে। এ অবস্থায় প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বিদেশ থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা তাদের ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চাল আমদানি বন্ধ না হলে কৃষি অর্থনীতিতে ধস নামবে। দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন জানান, ব্যাপক হারে চাল আমদানির ফলে বাজারে কম দামেই চাল বিক্রি করছে আমদানিকারকরা। তিনি জানান, গত আমন মৌসুমেও বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার বোরোতে ফলন হয়েছে বাম্পার। কৃষক ও কৃষি অর্থনীতির স্বার্থে দেশের চাহিদা মিটিয়ে চাল রফতানি করা উচিত। হিলি স্থলবন্দর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-অর রশিদ হারুন বলেন, ভারত থেকে এখন যে চাল আসছে তা আতপ। প্রতি কেজি ভারতীয় চালের দাম পড়ছে ২২ টাকা। অথচ সরকার কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সংগ্রহ অভিযানে চালের মূল্য ঠিক করেছে ৩৬ টাকা। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা চরম লোকসানের মুখে। লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচও পাচ্ছে না কৃষক। যারা ধান কেটেছে, তারা পানির দামে ধান বিক্রি করে হতাশ ও বিমর্ষ হয়ে বাড়ি ফিরছেন বাজার থেকে। যারা এখনও ধান কাটেনি, তারা বেশি মজুরি দিয়ে ধান কাটতে সাহস পাচ্ছেন না। দিনাজপুরে বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৫০০-৫৫০ টাকায়। কৃষকরা বলছে, এই দামে ধান বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও উঠছে না। অনেকে বাধ্য হয়ে লোকসানেই ধান বিক্রি করছেন। দিনাজপুর সদরের নশিপুর গ্রামের কৃষক হাফিজউদ্দীন জানান, প্রতিবিঘায় ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৮-১৯ হাজার টাকা। ধান হয়েছে ৩৪ মণ। এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করে পেয়েছি ১৭ হাজার টাকা। এভাবে ধানে আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি।





আরো খবর