শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৯ ১২:২৯:৩৩ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

মির্জা ফখরুল ও জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ ৪ জনের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) থেকে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনকে একপেশে ও উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি টিআইবি থেকে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। তাকসিম এ খান বলেন, গত ১১ থেকে ১৯ নভেম্বর ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ২৪৩টি পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই নমুনা পরীক্ষা করে পানির মান সন্তোষজনক পাওয়া গেছে। তবে মাঝে মধ্যে কিছু পুরনো সরবরাহ লাইনে দূষিত পানি পাওয়া গেছে যা দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঠিক করা হয়েছে। তাকসিম এ খান ওয়াসার সাফল্য তুলে ধরে বলেন, এ বছর ঢাকা ওয়াসা ৪০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, টিআইবির প্রতিবেদন বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং এতে ওয়াসার সাফল্য সঠিকভাবে নিরুপণ করা হয়নি। প্রসঙ্গত গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। সেখাসে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি ৯১ শতাংশ গ্রাহকই ফুটিয়ে পান করেন। আর এই পানি ফোটাতে বছরে ব্যয় হচ্ছে ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার গ্যাস। অর্থাৎ রাজধানীর বাসাবাড়িতে পানি বিশুদ্ধকরণে ৩৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ঘনমিটার গ্যাস পোড়াচ্ছেন গ্রাহকরা। টিআইবি সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোনের আওতাধীন আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বস্তি এলাকার পানি ও পয়ঃসংযোগ এ গবেষণার আওতায় ছিল। এ ছাড়াও ঢাকা ওয়াসার সার্বিক সক্ষমতা ও দুর্বলতা উঠে এসেছে এ গবেষণায়। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জমান বলেন, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা ওয়াসা নিশ্চিত করতে পারেনি। বিশ্বের অনেক দেশেই ট্যাপ থেকে সরাসরি পানি পান করা যায়। এশিয়ারই অনেক দেশে ট্যাপের পানি সরাসরি পান করা যায়। বাংলাদেশে আমরা এটা ভাবতেও পারি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসা পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড থাকলেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে সেটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। আর ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকা ওয়াসায় একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঢাকা ওয়াসার গ্রাহকদের ৫১ দশমিক পাঁচ শতাংশ বলছেন, পানি অপরিষ্কার, ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ গ্রাহক পানিতে দুর্গন্ধ থাকার কথা বলেছেন। আর ৩৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ গ্রাহক বলছেন, সারা বছরই পানি অপরিষ্কার ও দুর্গন্ধযুক্ত থাকে। আর রাজধানীবাসীর দৈনিক পানির চাহিদা ২৫৮ কোটি লিটার হলেও ঢাকা ওয়াসার দাবি অনুযায়ী উৎপাদন সক্ষমতা ২৪০ কোটি লিটারের। গ্রাহক জরিপ অনুযায়ী সার্বিকভাবে সেবাগ্রহীতাদের ৪৪ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ পানি পান না। এ ছাড়া রাজধানীতে প্রতিদিন ১৪ লাখ ঘনমিটার পয়ঃবর্জ্য তৈরি হলেও ওয়াসার রয়েছে দেড় লাখ ঘনমিটার সক্ষমতার একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। কিন্তু এ প্ল্যান্টে প্রতিদিন পরিশোধন হয় ৫০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য। বাকি ৯৬ শতাংশ পয়ঃবর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থায় বিভিন্ন খাল হয়ে আশপাশের নদীতে পড়ে। পানি নিষ্কাশন সেবায় জরিপের আওতাভুক্ত সেবাগ্রহীতাদের ২০ দশমিক ৫ ভাগ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এসব সমস্যার ধরনের মধ্যে রয়েছে- ৭৯ দশমিক ৭ ভাগ লোক বলেছে পয়ঃনালা বন্ধ হয়ে যায়, ৭৫ দশমিক ৬ ভাগ মানুষ বলেছে পয়ঃনালার পানি উপরে উঠে যায় এবং ১৪ দশমিক ৪ ভাগ মানুষ বলেছে পয়ঃনালার সঙ্গে পানির লাইন মিশে যায়। এটা বর্ষাকালে বেশি হয় বলে অভিমত ৯৪ দশমিক ৪ ভাগ মানুষের। গবেষণা প্রতিবেদনে ওয়াসায় নিয়োগ-দুর্নীতির কথা প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলা হয়েছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘অযাচিত হস্তক্ষেপ’ ঘটে। ঢাকা ওয়াসার অনিয়ম প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাহকদের মধ্যে প্রায় ৬২ শতাংশ অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার। পানি সংযোগের জন্য ২০০ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়া পয়ঃলাইনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ৩০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, গাড়িতে জরুরি পানি সরবরাহের জন্য ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা, মিটার ক্রয় বা পরিবর্তনের জন্য এক হাজার থেকে ১৫ হাজার, মিটার রিডিং ও বিল সংক্রান্ত কাজের জন্য ৫০ থেকে ৩ হাজার টাকা এবং গভীর নলকূপ স্থাপনে এক থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। ওয়াসার প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির তথ্যও উঠে এসেছে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, পদ্মা-যশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্প ২০১৩ সালে শুরু হয়ে ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর কাজ চলমান। সায়েদাবাদ (ফেজ-৩) পানি শোধনাগার ২০১৪ সালে শুরু হয়েছে। ২০২০ সালে তা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৮ পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র দুই শতাংশ। ২০১২ সালে শুরু হওয়া তেঁতুলঝড়া-ভাকুর্তা ওয়েলফিল্ডের কাজ ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল, যা এখনও চলমান। নিরবচ্ছিন্ন ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পানির চাহিদা পূরণে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানির উৎপাদন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ঢাকা ওয়াসার সক্ষমতা ও উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। নিয়োগ, গ্রাহকসেবা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে বলে এ গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব থেকে উত্তরণে টিআইবি পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবার মূল্য নির্ধারণে রেগুলেটরি কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া ব্যবহার অনুযায়ী সেবার মূল্য নির্ধারণ, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে বোর্ড গঠন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা একক কর্তৃপক্ষের অধীনে রাখার সুপারিশও করা হয়। এর বাইরে ঢাকা ওয়াসাকে শক্তিশালীকরণ, এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ১৩ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি।





আরো খবর