বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ০৪:০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

ব্রেক্সিট ঝড়ে উল্টে যাচ্ছে ব্রিটেনের রাজনীতি

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) প্রশ্নে এক গণভোট খেয়েছিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের ক্ষমতা। গণভোটের পরাজয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। সেই ব্রেক্সিট ছোঁয়াচে রোগ এখন সংক্রমণ হয়ে আঘাত হেনেছে ব্রিটেনের রাজনীতিতে। প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র ওপরও পড়েছিল এ ‘পদত্যাগ সংক্রমণ’। শেষমেশ কোনো রকমে বেঁচে ফিরেছেন। ইইউ’র সঙ্গে ১৮ মাসের দর কষাকষির ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টে মুখ থুবড়ে পড়লে ‘পদত্যাগ, পদত্যাগ’ বলে ওঠে বিরোধী শিবিরে। এ ‘ভাইরাস’ ব্রিটিশ মন্ত্রী-এমপিদেরও পিছু ছাড়েনি। একে একে ‘গোগ্রাসে গিলেছে’ ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের (টরি পার্টি) ১১ মন্ত্রী ও ১৪ এমপিকে। সর্বশেষ গত তিন দিনে বিরোধী লেবার পার্টির ৮ এমপিও পড়েছেন একই খপ্পরে। পদত্যাগের মুখে রয়েছেন টরি দলের আরও ১০ এমপি ও লেবারের ৮ এমপি। এক ব্রেক্সিট ভূমিকম্পে ১৯২০ সালের পর ব্রিটিশ রাজনীতিতে ‘শতাব্দীর সেরা ধস’ দেখা দিয়েছে। আগামী ২৯ মার্চ ইইউ’র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার কথা। সময় মাত্র ৩৬ দিন। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকেই ব্রেক্সিট রূপরেখা নির্ধারণে বারবার ইইউ’র দরজায় ঘুরপাক খাচ্ছেন তেরেসা। একবার পার্লামেন্ট তো আবার ব্রাসেলস। গত ১৫ জানুয়ারি সর্বশেষ ব্রেক্সিট সমঝোতা নিয়ে পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে পরাজিত হন মে। চুক্তির একটি ধারা পরিবর্তনের দাবি তোলেন অধিকাংশ এমপি। তাদের মন রক্ষায় বুধবার আবারও ব্রাসেলস যান। কিন্তু ইইউ তাতে নারাজ। বরাবরের মতো তাকে এবারও খালি হাতেই ফিরিয়ে দেয় ইইউ। পরিস্থিতি এখন আরও বিগড়ে গেছে। শেষ সময়ে এসে দুই পক্ষের দুই মেরুতে অবস্থানের কারণে চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদ এবং এর সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়গুলো বারবার সামনে চলে আসছে। বিচ্ছেদের পর ইইউর সদস্য স্বাধীন আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার (বেকস্টপ) পক্ষে এমপিরা। অন্যথায় নর্দান আয়ারল্যান্ড আইনগতভাবে যুক্তরাজ্যের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। আর এর জেরেই পদত্যাগের হিড়িক পড়ে গেছে। ব্রেক্সিট নিয়ে মতবিরোধে বুধবার কনজারভেটিভ থেকে পদত্যাগ করেন অ্যানা সোবরি, সারাহ উলস্টন ও হেইডি অ্যালেন। এ তিনজনই মে’র ব্রেক্সিট পরিকল্পনার কট্টর সমালোচক। এর আগে সোমবার লেবার থেকে চুকা উমুন্না, লুসিয়ানা বার্গার, ক্রিস লেজলি, অ্যাঞ্জেলা স্মিথ, মাইক গেইপস, গেভিন শুকার ও অ্যান কোফি- এ সাত এমপি পদত্যাগ করেন। মঙ্গলবার দলটির আরেক এমপি জোয়ান রায়ানও এ কাতারে যোগ দেন। তারাও ব্রেক্সিটবিরোধী। লেবাররা পদত্যাগের কারণ হিসেবে ব্রেক্সিট নীতির পাশাপাশি লেবার পার্টি ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাবকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। পদত্যাগের মুখে রয়েছেন টরি পার্টির আরও ১০ ও লেবারের ৮ এমপি। চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে টরি এমপি গুটো বেব, জাস্টিন গ্রিনি, ডমিনিক গ্রিভ, জো জনসন, ফিলিপ লি, অ্যান্টইনেটি স্যান্ডব্যাচ, অলিভার লেটউইন, স্যাম গিমাহ, নিকোলাস সোয়ামেস ও নিক বোলস পদত্যাগের আগাম ঘোষণা দিয়েছেন। তারা সবাই আরেকটি ব্রেক্সিট গণভোটের দাবিতে সোচ্চার। আর লেবার থেকে সিওভাইন ম্যাকডোনাগ, ওয়েন স্মিথ, স্টিফেন ডটি, ড্যাম লুসি ইলম্যান, জেফ ফিলিপ, ইয়ান মুরি, ইয়ান অস্টিন ও পিটার কাইল পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন। সর্বশেষ পদত্যাগ করা ৭ লেবার এমপি নিউ ইন্ডিপেনডেন্ট গ্রুপে যোগ দিয়েছেন। তারাই এ দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ‘রাজনীতি ভেঙে পড়েছে, পরিবর্তন প্রয়োজন’ স্লোগানে গঠিত একটি গোষ্ঠী এটি। রাজনৈতিক অনিবন্ধিত এ দলের সবাই এমপি। গোষ্ঠীটি এখন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের চতুর্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ। হাউস অব কমন্সে তৃতীয় বৃহত্তম দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিকে (৩৫ আসন) টপকে যাওয়ার পথেই এগিয়ে চলেছে তারা। ২০১৮ সালেও ব্রেক্সিট বিরোধের জেরে পদত্যাগ করেন ১১ টরি মন্ত্রী। তারা হলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন, বিজ্ঞানমন্ত্রী স্যাম গিমাহ, জুনিয়র ব্রেক্সিট সেক্রেটারি সুয়েলা ব্রাভারম্যান, অবসরবিষয়ক মন্ত্রী ইসথার ম্যাকভে, ব্রেক্সিট সেক্রেটারি ডমিনিক রাবো ও ডেভিড ডেভিস, নর্দার্ন অ্যায়ারল্যান্ড মন্ত্রী শাইরেশ ভারা, পরিবহন মন্ত্রী জো জনসন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুটো বেব, ব্রেক্সিট মন্ত্রী স্টিভ ব্যাকার ও সরকারের হুইপ গ্যারেথ জনসন। ব্রেক্সিট নিয়ে রাজনৈতিক ভাঙনকে ‘শতাব্দীর সেরা ধস’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক স্টিভেন ফিল্ডিং বলেন, ‘কনজারভেটিভ দলে অতীতে বিভাজন দেখেছি। লেবার পার্টির মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিবাদ বেশ পুরনো। সোমবার সেটির স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। ১৯২০ সালের পর জোরালো রাজনৈতিক ভূমিকম্প দেখল ব্রিটিশরা।’ পদত্যাগ করবেন আরও ১০ টরি এমপি নিকোলাস সোয়ামেস গুটো বেব, জাস্টিন গ্রিনি, ডমিনিক গ্রিভ, জো জনসন, ফিলিপ লি, নিক বোলস, অ্যান্টইনেটি স্যান্ডব্যাচ, অলিভার লেটউইন ও স্যাম গিমাহ পদত্যাগের মুখে আরও ৮ লেবার এমপি ইয়ান মুরি, সিওভাইন ম্যাকডোনাগ, ওয়েন স্মিথ, স্টিফেন ডটি, ড্যাম লুসি ইলম্যান, জেফ ফিলিপ, ইয়ান অস্টিন ও পিটার কাইল





আরো খবর