বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০৬:৫১ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারী ২০১৯ ০৩:১৭:০৬ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে টানাপোড়েন

নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ নিয়ে টনাপোড়েন শুরু হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। মূলত জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে জোট বেঁধে পথ চলা, না-চলার ইস্যুতেই এ অবস্থার সৃষ্টি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্টের আগামী দিনের কর্মপন্থা ঠিক করতে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন এই জোটের স্টিয়ারিং কমিটির নেতারা। তবে এতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। বিএনপি নেতাদের অনুপস্থিতিতেই এ বৈঠকে ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে ‘গণসম্মিলন’ নাম দিয়ে জাতীয় সংলাপ করার সিদ্ধান্ত হয়। ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এতে জামায়াতে ইসলামী বাদে দেশের অপরাপর রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে এই সংলাপকে ‘গণসম্মিলন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তন, কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তন ও গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চ- এই তিন ভেন্যুর যে কোনো একটিতে অনুষ্ঠিত হবে গণসম্মিলন। জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দেয়া হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতে ইসলামী ছিল না। এখনও নেই। জাতীয় সংলাপেও জামায়াত থাকছে না। এছাড়া নির্বাচনে যেসব দল অংশ নিয়েছে, তাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নীতিনির্ধারক এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে জানান, তারা ২০ দলীয় জোটের ঐক্য অটুট রেখে আরও বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার পক্ষে। দলের হাইকমান্ড থেকেও এমন বার্তা দেয়া হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জামায়াত ইস্যুতে টানাপোড়েন দেখা দিলেও বিএনপি জামায়াতকে আপাতত ত্যাগ করছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় মতিঝিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী এই জোট গঠনের পর এবারই প্রথম জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে বিএনপির কাউকে দেখা যায়নি। জোটের নেতাদের দাবি, অসুস্থতার কারণে বৈঠকে যোগ দেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে দলটির অন্য কোনো প্রতিনিধি কেন বৈঠকে যোগ দেননি, এর কোনো জবাব তারা দেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জোটের একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেন, মূলত জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে একসঙ্গে পথ চলতে জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন আপত্তি জানানোর পর থেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অভ্যন্তরে এই টানাপোড়েনের সূত্রপাত। সম্প্রতি গণফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক শেষে দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘তড়িঘড়ি করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করতে গিয়ে কিছু ভুল হয়েছে। জোট টিকিয়ে রাখতে হলে এখন সময় এসেছে এই ভুল সংশোধন করার।’ তিনি মূলত জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং আসন ভাগাভাগির বিষয়েই হতাশা প্রকাশ করেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীকে আসন ছাড় দেয়ার বিষয়টি আমি জানতাম না। আমাকে জানানো হয়নি। আমি জানলে এটা হতে দিতাম না। নির্বাচনের আগেও গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিষয়টি স্পষ্ট করেছি। আমি জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে রাজনীতি করব না। ভবিষ্যতেও তাদের নিয়ে রাজনীতি করার প্রশ্নই ওঠে না।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে দেয়ার কথা বিএনপিকে এখন বলা যেতেই পারে।’ ড. কামাল হোসেনের এই বক্তব্যের জবাবে পরদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটি তার (ড. কামাল হোসেন) নিজস্ব বক্তব্য। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বক্তব্য এটা না।’ সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে পরস্পরবিরোধী এই অবস্থান প্রকাশ হওয়ার পর অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন বিএনপির নেতারা। জোটের একাধিক নেতা জানান, বুধবার ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে বিকাল ৪টায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বিএনপি নেতাদের অনুরোধে এটি একদিন পিছিয়ে একই জায়গায় বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলটির কাউকেই দেখা যায়নি বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও। পরবর্তী বৈঠকগুলোয়ও বিএনপি আর অংশ নেবে কি না, তা-ও এখন অনিশ্চিত। জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ করা ছাড়াও বিএনপির কাছে আরও দুটি দাবিকে সামনে আনতে চাইছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মধ্যে রয়েছে- বিএনপির ভেতরে জামায়াতের কোনো নেতা বা লোক থাকতে পারবেন না। এমনকি জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে যোগদান করেও কেউ থাকতে পারবে না। দলের ভেতরে চিরুনি অভিযান চালিয়ে তাদের বের করে দিতে হবে। নির্বাচনে জয়ী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সদস্যরা শপথ নেবেন। এ ব্যাপারে বিএনপিকে কালক্ষেপণ না করে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসতে হবে। সূত্র জানায়, বিএনপির নেতাদের জন্য অপেক্ষা করে বৈঠক এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু করা হয়। ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ অংশ নেন। গণসম্মিলনের স্থান নির্বাচনের জন্য বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জানানো হয়েছে। অনুমতি মিললে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তন, কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তন ও গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চ- এর যে কোনো একটিতে অনুষ্ঠিত হবে এই গণসম্মিলন। এর আগে আমন্ত্রণপত্র ছাপানো ও বিতরণের কাজ শুরু হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে জোটের একাধিক শীর্ষ নেতা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছে তাতে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। এই নির্বাচন বাতিলের দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আন্দোলনে সব মানুষের অংশগ্রহণের অংশ হিসেবে গণস্বক্ষর সংগ্রহ, অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথাও ভাবা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রক্রিয়াও চলছে। গত বছরের ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু হয়। বিএনপি, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া শুরুতে সঙ্গী হলেও পরে এতে শামিল হয় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একসঙ্গে অংশ নেয় এই জোট। ৬টিতে জয় পায় বিএনপি। অন্যদিকে ২টি আসন পায় গণফোরাম। যদিও নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে এবং পুনর্নির্বাচনের দাবিতে এখনও তারা শপথ নেননি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাদে জোটের শীর্ষ নেতাদের সবাই এই নির্বাচনে পরাজিত হন।





আরো খবর