ধানের জেলা দিনাজপুরে চালের বাজারে অস্থিরতা কমতে শুরু করেছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজি প্রতি কমেছে এক থেকে দুই টাকা।
সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম আরও কমবে বলে জানিয়েছেন আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে চিকন চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে বাজারে ধানের দাম কমেছে অস্বাভাবিক হারে। চালের দাম কমায় ভোক্তারা স্বস্তি প্রকাশ করলেও ধানের দামে হতাশ কৃষকরা।
দিনাজপুরের প্রধান চালের বাজার বাহাদুর বাজার এন.এ মার্কেটে মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিকেজি গুটি স্বর্ণ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা দরে, সুমন স্বর্ণ ৩২ থেকে ৩৩ টাকা দরে আর বিআর-২৯ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা কেজি দরে।
গত কয়েকদিন আগে প্রতি কেজি গুটি স্বর্ণ বিক্রি হতো ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা, সুমন স্বর্ণ বিক্রি হতো ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং বিআর-২৯ চাল বিক্রি হতো প্রতিকেজি ৪০ টাকা দরে।
খুচরা বাজারের পাশাপাশি পাইকারি বাজারেও কমেছে চালের দাম। বাহাদুরবাজার এন.এ মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী জানান, পাইকারি বাজারেও গত কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম কমেছে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা।
তিনি জানান, গুটি স্বর্ণ চাল ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে কমে ১ হাজার ৩২০ টাকা দরে, সুমন স্বর্ণ চাল ১ হাজার ৫৫০ টাকার স্থলে ১ হাজার ৪৮০ টাকা এবং প্রতিবস্তা বিআর-২৯ চাল ১ হাজার ৯০০ টাকার স্থলে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাহাদুরবাজারের চালের আড়তদার গোলাম রব্বানী জানান, কয়েকদিন আগে মিল মালিকরা চালের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এখন সরবরাহ বৃদ্ধি করায় চালের দাম কমতে শুরু করেছে।
সরবরাহ বাড়লে চালের দাম আরও কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তবে মিনিকেটসহ অন্যান্য চিকন চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মঙ্গলবার প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও এই দামে বিক্রি হতো এই চাল।
এদিকে বাজারে অস্বাভাবিক হারে কমতে শুরু করেছে ধানের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতিবস্তা (৭৫ কেজি) ধানের দাম কমেছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে।
সোমবার জেলার অন্যতম বৃহৎ ধানের হাট সদর উপজেলার গোপালগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, প্রকারভেদে প্রতিবস্তা (৭৫ কেজি) গুটি স্বর্ণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৮০ টাকা দরে, সুমন স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে এবং বিআর-৫১ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩২০ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে প্রতিবস্তা গুটিস্বর্ণ ধান বিক্রি হতো ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে, সুমন স্বর্ণ ধান ১ হাজার ৪৫০ টাকা দরে এবং বিআর-৫১ ধান বিক্রি হতো ১ হাজার ৪৫০ টাকা দরে।
চালের দাম কমতে শুরু করায় ভোক্তারা স্বস্তি প্রকাশ করলেও ধানের দাম কমাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কৃষকরা। তারা জানান, ধানের দাম কমায় তাদের উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হবে।
অপরদিকে দিনাজপুরে দ্রুতগতিতে চলছে আমন সংগ্রহ অভিযান। দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশরাফুজ্জামান জানান, দিনাজপুরে চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে মোট ৪৯ হাজার ৯২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
এ জন্য ১ ডিসেম্বরের আগেই দিনাজপুর জেলার ২ হাজার ৪১১ জন মিল মালিক খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়।
প্রতি কেজি ৩৬ টাকা দরে ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৬ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই সংগ্রহ অভিযান চলবে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, বর্তমানে দিনাজপুর জেলায় ১ লাখ টন চাল মজুদ রয়েছে।