বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান, ১৪৪৫ | ১১:৫৪ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বুধবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৯ ০৩:১১:৫২ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

মামলা জরিমানার মধ্যেও বেপরোয়া চালক পথচারী

হঠাৎ থেমে যাওয়ার পর রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা আনতে গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে ১৫ দিনের অভিযান শুরু করেছে ট্রাফিক পুলিশ। তবে এ শৃঙ্খলা আনা যে কঠিন কাজ, তা গুলিস্তানে বেলুন উড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের অভিযান উদ্বোধন করার সময়ও স্পষ্ট হয়। তখন সেখানে ও আশপাশের সড়কে সতর্ক ট্রাফিক পুলিশের সামনেও বেপরোয়া ছিল পরিবহন চালকরা। অভিযানের মধ্যে প্রথম দিনে ‘বাস স্টপেজে’ বাস থামেনি, থেমেছে আগে-পিছে। পথচারীরা ইচ্ছেমতো দৌড়ে রাস্তা পার হয়েছে। মোটরসাইকেল চালানো হয়েছে ফুটপাতের ওপর দিয়ে। তবে কোনো কোনো স্থানে দরজা বন্ধ রেখে বাস চলাচল করেছে। মোটরসাইকেলে হেলমেট ব্যবহারের হার ছিল অন্য দিনের চেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাফিক পুলিশ শুধু নয়, সড়কে শৃঙ্খলা আনতে সংশ্লিষ্ট ৩২টি সংস্থার সমন্বয়ে কর্মসূচি নিতে হবে। স্কাউটসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে পথে পথে। এ জন্য ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ-ডিটিসিএ পুরস্কার প্রদান, প্রণোদনা দানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীতে শিক্ষার্থীরা গত ২৯ জুলাই রাস্তায় নেমেছিল। টানা ৯ দিনের আন্দোলনের পর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নতুন করে উদ্যোগী হয়। আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের জন্য ১৭টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। নির্দেশনা বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে উঠেছিল ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের আগে থেমে যায় এ তৎপরতা। গতকাল আবার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শৃঙ্খলা ফেরানোর অভিযানে থেমে গেলে ধারাবাহিকতা রক্ষা হয় না। ডিটিসিএর সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সালেহ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, অভিযান চালানো উচিত। তবে তা হতে হবে সমন্বিত। সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ, রাজউক, স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক বিভাগসহ সবাই একসঙ্গে বসে শৃঙ্খলা আনার কর্মপন্থা নির্ধারণ করা উচিত। মতিঝিল-দৈনিক বাংলায় স্টপেজে বাস থামেনি : গতকাল ভোর থেকেই চেকপোস্ট বসিয়ে ও বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ আইন অমান্যকারীদের ধরে মামলা ও জরিমানাসহ বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া শুরু করে। অবস্থা কী জানতে পথে নেমে দুপুর সাড়ে ১২টায় মতিঝিলের সোনালী ব্যাংকের সামনে গিয়ে দেখা গেল, ৮ নম্বর রুটের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-জ ১১-২৪২৮) মাত্র থেমেছে সেখানে। বাস থেকে যাত্রীদের কয়েকজন নামল, ওঠানোও হলো কয়েকজন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বাসটি দৈনিক বাংলার দিকে চলে যায়। অথচ বাসটি থামার কথা ছিল পুলিশের নির্ধারণ করে দেওয়া একটু দূরের বাস স্টপেজে। নির্ধারিত বাস স্টপেজে বাস না থামিয়ে মতিঝিলের সোনালী ব্যাংকের সামনে থামানোর কারণ জানতে চাইলে ৮ নম্বর বাসের চালক কোনো উত্তর না দিয়ে বাস চালিয়ে চলে যান। যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, দয়াগঞ্জ সড়কে ঘুরে বেশির ভাগ বাসই নিয়ম না মেনে যাত্রী পরিবহন করেছে। অথচ তখন সড়কে শৃঙ্খলা আনতে ট্রাফিক পুলিশের অভিযান চলছিল রাজধানীতে। এর আগে দুপুরে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টের পাশে বেলুন উড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ট্রাফিক পক্ষের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিএমপি কমিশনার জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। দুপুর আড়াইটায় সুপ্রভাত স্পেশালের একটি বাসের সামনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি স্টিকার লাগিয়ে দেন। স্টিকারে লেখা ছিল—একমুখী চলা রাস্তার উল্টোদিকে গাড়ি চালাবেন না, যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করবেন না, গাড়ি চালানোকালে মোবাইল ফোনে কথা বলবেন না, বেপরোয়া গাড়ি চালাবেন না, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না ইত্যাদি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসার আগে ওই এলাকায় বেশ কিছু পুলিশ সদস্যকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাতে লেখা রয়েছে—‘রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করুন। গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চালাবেন না। রাস্তা পারাপারে আন্ডারপাস ব্যবহার করুন। ’ নতুন করে শুরু হওয়া ট্রাফিক পুলিশের অভিযানের প্রথম দিন যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, ওয়ারী, মতিঝিল ও গুলিস্তানে দেখা গেছে, মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্টরা গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করছেন। পুলিশের এত কড়াকড়ি অবস্থানের মধ্যেও দেখা গেল, বাসচালকরা বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছে, বাস স্টপেজে বাস থামাচ্ছে না। ওয়ারীতে বলধা গার্ডেনের পাশে পুলিশের তরফ থেকে বাস স্টপেজ চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ থেকে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে বাস স্টপেজ কোথা থেকে শুরু ও কোথায় শেষ। শুরু ও শেষ—দুই জায়গায়ই সাইন বোর্ড টানানো আছে। এর পরও সেই স্থানে বাস থামতে দেখা যায়নি। দুপুর ১টার দিকে দয়াগঞ্জের দিক থেকে জয়কালী মন্দিরের দিকে যেতে দেখা যায়, গ্লোরি এক্সপ্রেস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-২৭২০) বাসটি ওই নির্দিষ্ট স্টপেজে না থেমে চলছিল। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে চালক ও যাত্রীর মাথায় হেলমেট পরা থাকতে দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী মোড়ে দায়িত্বে ছিলেন সার্জেন্ট শহীদুল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, ভোর থেকেই চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ির কাগজপত্র চেক করা হচ্ছে। আগের চেয়ে অনিয়ম অনেক কমেছে। গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই এমন চালক ও গাড়ি কম পাওয়া যায়। প্রায় সব মোটরসাইকেলচালক ও যাত্রীই হেলমেট ব্যবহার করছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সার্জেন্ট জানান, রাজধানীতে এত লোক ও এত গাড়ি, যা নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর। একজন সার্জেন্ট জানান, আইন ভাঙার কারণে একের পর এক মামলা দিয়েও বাসচালকদের ঠিক করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া রাজধানীতে পরিবহন বিশৃঙ্খলার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী রিকশা। এসব রিকশা বন্ধ করারও সুযোগ নেই। বন্ধ করে দিলে চালকরা চুরি-ছিনতাইয়ে নেমে যায়। যন্ত্রচালিত গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু রিকশা উল্টোপথে চললেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। মহাখালী-উত্তরা সড়ক যেন পুরোটাই টার্মিনাল : মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত ভিআইপি সড়ক ঘুরেও দেখা গেছে বিশৃঙ্খলার দৃশ্য। সকাল ১১টায় মহাখালী ফ্লাইওভার অভিমুখী গাড়িগুলো আটকা পড়েছিল কাকলী, বনানীর বিভিন্ন অংশে। মাঝরাস্তায় গিয়ে তখন বাসে উঠছিল যাত্রীরা। মাঝসড়কেই নামছিল তারা। কাকলী মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ যখন গাড়ি আটকে রাখছিল তখন সড়কের বাঁ পাশ ঘেঁষে সামান্য সরু পথ দিয়েই ছুটছিল মোটরসাইকেল। হেলমেট দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়নি, এসব মোটরসাইকেলের বেশির ভাগই রাইড শেয়ারিং কম্পানির। ট্রাফিক সিগন্যাল উপেক্ষা করেই বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল মহাখালীর দিকে ছুটে গেছে চোখের পলকে। সিগন্যালে সবুজ বাতি জ্বলে উঠতেই পাশাপাশি থাকা রবরব ও প্রভাতী পরিবহনের দুটি গাড়ি তীব্রগতিতে প্রতিযোগিতা করে পার হচ্ছিল। বাঁ পাশে মোটরসাইকেল উপেক্ষা করে দৌড় দিয়ে উঠতে দেখা গেছে যাত্রীদেরও। সৈনিক ক্লাব মোড়ে রবরব বাস থেকে নেমে আসা যাত্রী মো. কাইয়ুম বলেন, ‘কোনো পরিবর্তন আসেনি। পুলিশের মামলার ভয়ে সুশৃঙ্খল হওয়ার ভান ধরে আছে। আমাকেও মাঝসড়কে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ’ চালকদের দাবি, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে। সড়কের মাঝখানে তাঁরা থামাতে চান না গাড়ি। কিন্তু যাত্রীরা দৌড়ে এসেই উঠে যায় বাসে। গত বছরের ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে অনেকটাই সাবধান তাঁরা। প্রভাতী পরিবহনের চালক সবুজ মিয়া বলেন, ‘আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা ইচ্ছা করে নিয়ম ভাঙতে চাই না। যাত্রীদেরও অসচেতনতা রয়েছে। ’ এই সড়কে বিআরটিসির কয়েকটি বাসও যেখানে-সেখানে থামছিল। বিআরটিসির ঠ-৬০৫০ নম্বরের বাস অনুসরণ করে দেখা গেছে, সৈনিক ক্লাব মোড়ে ভিড়ের মধ্যে সড়কে নামানো হচ্ছিল যাত্রী। একটু সামনের দিকে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের বিপরীতে বাস থামার নির্দিষ্ট স্থান থাকলেও সেখানে থামানো হয়নি বাসটি। আর্মি স্টেডিয়ামের বিপরীতে ওভারপাসের মুখ থেকে ওঠানো হচ্ছিল যাত্রী। পুলিশ কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে মিরপুর থেকে আসা বেশ কয়েকটি বাস দাঁড় করিয়ে রাখায় সেখানেও থামানো হয়নি বাস। কুর্মিটোলা হাসপাতাল পার হয়ে শেওড়া বাজারের বিপরীতে থামিয়ে ওঠানো হচ্ছিল যাত্রীদের। খিলক্ষেত ও বিমানবন্দর পর্যন্ত একইভাবে চলছিল বিআরটিসির এই বাসটি। হেলমেট না থাকায় কয়েকটি মোটরসাইকেল থামাতে দেখা গেছে খিলক্ষেত ও বিমানবন্দর এলাকায়। বাস থামিয়ে কাগজপত্র ঘাঁটতেও দেখা গেছে পুলিশকে। এ ছাড়া সব এলাকায়ই ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা গেছে পথচারীদের। উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সার্জেন্ট জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন যানবাহন এবং আইন অমান্য করে গাড়ি চালানোর অপরাধে মামলা দেওয়া হয়েছে। তবে আগের তুলনায় আজ (মঙ্গলবার) সড়কে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরেছে। তদারকি অব্যাহত থাকলে সড়কের শৃঙ্খলা ফিরবে। ’ শ্যামলী-কল্যাণপুর-গাবতলী : সকাল ১১টায় শ্যামলী ফুট ওভারব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশ কনস্টেবল মো. শিমুল শেখ ও মো. ফয়েজ। তাঁদের সামনেই ট্রাফিক আইন অমান্য করে রাস্তা পার হচ্ছিল বিভিন্ন বয়সী মানুষ। পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে গিয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করছিলেন। পুলিশের বাধা পেয়ে অনেকেই ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন। অনেকে পুলিশের নির্দেশনা না মেনে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক দিয়ে রাস্তা পার হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিয়া ও স্বাধীন ফুট ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় পুলিশের বাধা পেয়ে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন। এ সময় রিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জরুরি কাজ ছিল, তাই নিচ দিয়ে রাস্তা পার হতে চেয়েছিলাম। ’ দুপুর ১২টায় মিরপুর সড়কের টেকনিক্যাল মোড়ে কয়েকজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বাস, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ছোট ট্রাকসহ বিভিন্ন যান থামানোর চেষ্টা করতে ব্যস্ত ছিলেন। ট্রান্স সিলভা নামের সিটিং সার্ভিস বাস দরজা খোলা রেখে এগিয়ে চলছে দেখে সার্জেন্ট মো. প্রিন্স বাসটি থামিয়ে কাগজপত্র চান চালকের কাছে। গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে তিনি কোনো ত্রুটি পাননি। তবে দরজা খোলা রেখে গাড়ি চালানোর অপরাধে ৪০০ টাকা জরিমানা করে চালক জামানের হাতে কাগজ ধরিয়ে দেন। এ সময় একই অপরাধে আরো কয়েকটি বাস আটকে জরিমানা করা হয়। সার্জেন্ট প্রিন্স বলেন, ‘গাড়ির চালকরা ঠিক থাকলে সড়কে এমনিতেই শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। ’ দুপুর ১টায় গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে কোনো সার্জেন্ট চোখে পড়েনি। সেখান থেকে ফিরে কল্যাণপুর বাসস্ট্যাান্ডের পাশে দেখা যায়, দুজন সার্জেন্টসহ কয়েকজন কনস্টেবল দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় তাঁদের পাশেই দাঁড় করে রাখা হয়েছিল দুটি মোটরসাইকল, একটি অটোরিকশা ও একটি ছোট ট্রাক। ট্রাকটির কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক থাকলেও সমস্যা তৈরি হয় অন্য কারণে। ট্রাকে একটি বড় ফ্রিজ বহন করার কারণে সার্জেট ৪০০ টাকা জরিমানা করেন। এতে কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হয়ে চালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক আছে। এরপর তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে ৪০০ টাকা নিল পুলিশ। অথচ এ ধরনের অপরাধে ২০০ টাকার বেশি জরিমানা করার আইন নেই। কিন্তু প্রতিবাদ করিনি, কারণ প্রতিবাদ করলেই জরিমানা আরো বেড়ে যায়। উল্টা মামলাও দেয়। ’ জানতে চাইলে সার্জেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আইনানুযায়ীই তাঁকে জরিমানা করা হয়েছে। ’ ওই সময় একটি সিএনজি অটোরিকশা থামিয়ে চালকের কাগজপত্র চেক করে পুলিশ কনস্টেবল। মিটারে যাত্রী না নেওয়ার অপরাধে তাঁর গাড়িটি আটকে দেন সার্জেন্ট। জানতে চাইলে অটোরিকশার চালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মিটার ছাড়াই তো ভাড়া মারি। এত দিন তো পুলিশ কিছু বলেনি। এখন বিশেষ অভিযানের নামে পুলিশ বাড়তি টাকা নেবে আর কি। ’ দুপুর আড়াইটায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে চারজন সার্জেন্টসহ ১০ জনের পুলিশ টিম ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। ওয়েলকাম পরিবহনের একটি বাসের কাগজপত্র চেক করে সার্জেন্ট সাইফুল ইসলাম দেখতে পান বাসটির রুট পারমিট নেই। তখন পাশে থাকা এক কনস্টেবল বলে ওঠেন, ‘স্যার, তারে ডাবল জরিমানা করেন। ’ এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে চালক রফিক কথা বলতে গেলে তাঁকে ধমক দিয়ে বলা হয়, ‘টাকা নিয়া আসো, না হলে গাড়ি ডাম্পিংয়ে’ পাঠানো হবে। চালক রফিক গাড়ির মালিককে ফোন দেয়। এরপর দুই হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা দিয়ে তিনি গাড়িটি ছাড়িয়ে নেন। সেখানে তখন আরো অন্তত ১০টি বাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ আরো ছোট ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখা ছিল। এ সময় একটি ট্রাকের চালককে ধমক দিতে থাকে পুলিশ। চালক শাহ আলম বলছিলেন, ‘স্যার, আট হাজার টাকার একটি মামলা আছে। মামলার ডেট শেষ হয়নি। ডেট থাকতে কিভাবে নতুন মামলা হয়। ’ কিন্তু সার্জেন্ট তাঁর কোনো কথা না শুনে ফের আরেকটি মামলা দেন। মিরপুর থেকে দরজা বন্ধ : দুপুর ১টায় চন্দ্রিমা উদ্যানের কাছে উড়োজাহাজ মোড়ে দেখা যায়, মোটরসাইকেলচালক বিসিআইসি কলেজের শিক্ষার্থী রাব্বি আখন্দ রাজুর কাছে মোটরসাইকেলের বৈধ কাগজপত্র নেই। সহযাত্রী আবিরের মাথায় হেলমেট ছিল না। এ কারণে এক হাজার ২০০ টাকা রেকার বিল ধরে জরিমানা করা হয়। এখানে সার্জেন্ট মো. ইমরান নাজির সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২৫টি মামলা করেন। তিনি জানান, ১১টি মামলা করা হয়েছে দরজা খোলা রেখে বাস চালানোয়। মামলার কারণে এখন দরজা বন্ধ রেখে বাস চালাচ্ছেন চালকরা। একই স্থানে সার্জেন্ট মনির হোসেন মামলা করেন তখন পর্যন্ত ১১টি। বেশির ভাগই ছিল মোটরসাইকেলচালকের অপরাধের জন্য। দুপুরে এখানে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন রুটের বাসগুলোর বেশির ভাগ চলছিল দরজা বন্ধ রেখে। জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করা হয় না : বাংলামোটর, মগবাজার, শাহবাগ ও কাকরাইল এলাকায় মোটরসাইকেলচালকদের বিরুদ্ধেই বেশি মামলা হয়েছে। মগবাজার ট্রাফিক চেকপোস্টে ট্রাফিক সার্জেন্ট মাসুম কায়সার গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবারের ট্রাফিক সপ্তাহ বেশ জোরেশোরে পালিত হচ্ছে। আইন লঙ্ঘন করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় ২০০ মামলা হয়েছে এই চেকপোস্টে। অর্ধেকের বেশি হয়েছে মোটরসাইকেলচালকের বিরুদ্ধে। রমনা ট্রাফিক জোনের আরেকটি চেকপোস্ট বাংলামোটরে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এই চেকপোস্টে সার্জেন্ট আকতার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলামোটর সিগন্যালে ফুট ওভারব্রিজ থাকার পরও সেটি সহজে কেউ ব্যবহার করতে চায় না। আবার বাস ও মোটরসাইকেলচালকরা বেশি আইন লঙ্ঘন করে। ’ তিনি জানান, বাংলামোটর চেকপোস্টে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রায় দেড় শ মামলা হয়েছে। শাহবাগে সার্জেন্ট সাইফুল ইসলাম জানান, বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রায় ১৩০টি মামলা হয়েছে। কাকরাইল মোড়ে সার্জেন্ট সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আইন না মানলে মামলা হচ্ছে। তবে এখানে জেব্রা ক্রসিংয়ের বিষয় আমি বেশি লক্ষ রাখছি। কারণ এখানে একটি বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। জেব্রা ক্রসিং না মানার কারণে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা রাস্তা পারাপারে ঝামেলায় পড়েন। জেব্রা ক্রসিং পারাপার না হওয়ায় ১০টি মামলা দিয়েছি। ’ বিকেলে গাজীপুরগামী বনশ্রী পরিবহনের চালক মনজরুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খালি মামলা করলেই হবে? রাস্তার চার লেন নিশ্চিত করতে হবে। যেখান-সেখান দিয়ে রিকশা চলা বন্ধ করতে হবে। যেখানে-সেখানে রিকশা স্ট্যান্ড রাখা যাবে না। ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ’ এই ট্রাফিক পক্ষ চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। মহানগরীর ৫৭টি স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে ট্রাফিক বিভাগ তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করছেন। পরে রোভার স্কাউট ও বিএনসিসিকে সংযুক্ত করা হবে। গত বছর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তিন দফায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা কার্যক্রম পালন করে।





আরো খবর