শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০২:৩১ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৯ ০৩:১৭:৫৫ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

ফের ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ছে

আবারও বাড়ছে ব্যাংক ঋণের সুদহার। নতুন অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ব্যাংক ঋণের সুদহার কমলেও পঞ্চম মাসে তা খানিকটা বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে ব্যাংক খাতে ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে যা ছিল ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এর আগে জুনে গড়ে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। তখন থেকে সুদহার ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলেও নভেম্বরে এসে তা ব্যাহত হয়েছে। নতুন বছরে সুদহার আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৬ শতাংশ সুদে আমানত সরকারও দিচ্ছে না। অন্যরা তো দূরের কথা। সরকারি বিভিন্ন ফান্ডের টাকা স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখার সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুদ চাইছে ৬ শতাংশের ওপরে। সে কারণে বেশি সুদে আমানত নিয়ে কম সুদে ঋণ দেয়া যাচ্ছে না। এর জন্য কোনো কোনো ব্যাংক সুদের হার নিয়ে গোঁজামিলের আশ্রয়ও নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে সুদের হার কম দেখিয়েছে ব্যাংকগুলো। যদিও সুদহার সংক্রান্ত অন্য এক প্রতিবেদনে সুদহার বেশি নেয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এনআরবি গ্লোবালসহ বেশ কিছু ব্যাংক গত নভেম্বরে এক প্রতিবেদনে আমানতে ৬ শতাংশ আর ঋণে ৯ শতাংশ সুদ নেয়ার তথ্য দেখিয়েছে। আবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো একই মাসের অপর এক প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, আমানতে সুদ ৮ থেকে সাড়ে ৮ এবং ঋণে কেটেছে ১২ থেকে প্রায় ১৪ শতাংশ সুদ। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ৬ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। উল্লিখিত হারে পর্যাপ্ত আমানত না পাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো গড়ে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করেছে। অন্যদিকে সরকারি ব্যাংকগুলো সুদ নিয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর আগের মাস অক্টোবরে বেসরকারি ব্যাংকে ঋণের সুদহার ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। সরকারি ব্যাংকে ছিল ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। মূলত আমানতের সুদহার বৃদ্ধির প্রভাবে ঋণের সুদহার বেড়েছে। নভেম্বরে ঋণের সুদহার ১২ শতাংশের ওপরে ছিল ৮ ব্যাংকের। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, মেঘনা ও এনআরবি ব্যাংক। ঋণের বিপরীতে গড় সুদহার ১১ শতাংশের ওপরে ছিল বেসরকারি খাতের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ও এবি ব্যাংকের। এছাড়া ১৪টি ব্যাংকের সুদহার ছিল ১০ শতাংশের উপরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, নভেম্বরে বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংকের ঋণের সুদহার ১২ শতাংশের উপরে। ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে গড় সুদহার সবচেয়ে বেশি বেসরকারি খাতের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের। নভেম্বরে গড়ে ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ঋণ চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে গত ৩০ জানুয়ারি ঋণ-আমানত অনুপাত কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সুদহার ব্যাপক বাড়তে শুরু করে। অনেক ব্যাংক তখন ডাবল ডিজিট সুদে আমানত নিতে শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণের আশ্বাস দেন ব্যাংকের উদ্যোক্তারা। তবে তারাও কিছু দাবি করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক বৈঠক থেকে ব্যাংকগুলো নগদ জমা সংরক্ষণের হার বা সিআরআর কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই সময়ে রেপোর সুদহার কমানো এবং সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সুযোগ দেয়। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ সংক্রান্ত অপর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক নভেম্বরে শিল্প ঋণে সুদ কেটেছে ১৫ থেকে সাড়ে ১৬ শতাংশ। একইভাবে ফারমার্স ব্যাংক ১৫ থেকে সাড়ে ১৫ শতাংশ, এবি ব্যাংক ৯ থেকে সাড়ে ১৫ শতাংশ, মধুমতি ব্যাংক সাড়ে ১১ থেকে ১৪ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক সাড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ সুদ কেটেছে। বেসরকারি অন্যান্য ব্যাংকের চিত্রও প্রায় কাছাকাছি। এছাড়া বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংকের বাণিজ্য ঋণে সুদ কেটেছে ১৩ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত। সুদহারের সার্বিক চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সরকারের নতুন মেয়াদে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় অংকের অর্থের চাহিদা। সে ক্ষেত্রে আরও আমানতের ওপর চাপ পড়বে। আর আমানতের ওপর চাপ পড়লে ঋণের সুদ বাড়তে পারে।





আরো খবর