বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান, ১৪৪৫ | ০২:৩৪ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:২২:৩৩ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

কৃষিজমিতে পুকুর খনন মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

পাবনার ফরিদপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পার-ফরিদপুর গ্রামে কৃষিজমি নষ্ট করে একাধিক পুকুর খনন করা হচ্ছে। এ ছাড়া গ্রামের আরো ৮-৯ জন কৃষক জমির স্তর পরিবর্তন করতে মাটির উপরিভাগ বিক্রি করে দিচ্ছে। স্থানীয় দালালচক্রের মাধ্যমে জমি খননের এসব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে স্থানীয় ইটের ভাটায়। এতে একদিকে যেমন কমছে আবাদি কৃষিজমি, অন্যদিকে ঝুঁকির মুখে পড়ছে খনন করা জমির আশপাশের আবাদি জমিগুলোও। অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরিদপুর উপজেলায় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি ভাটাই বেড়হাউলিয়া, নেচড়াপাড়া ও শিপবাড়ী এলাকায় অবস্থিত। গত কয়েক বছর ধরে নতুন ইট তৈরির মৌসুম শুরু হলেই এলাকার কৃষিজমির মাটি বিক্রি শুরু হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী দালালচক্র এসব এলাকার কৃষকদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মাটি নিয়ে ওই ভাটায় বিক্রি করে। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার পারফরিদপুর গ্রামের পথিক আলী, মোস্তাফিজুর রহমান ও আনিছুর রহমান তাদের কৃষিজমি খনন করে পুকুর তৈরি করছেন। আর খননের এসব মাটি স্থানীয় দালাল রবিউল, আসাদুল, হাফিজুল, আফজালসহ কয়েকজনের মাধ্যমে ট্রলিপ্রতি ২১০ টাকা দরে বিভিন্ন ভাটায় বিক্রি করছেন। এ ছাড়া ওই গ্রামের গোলাবাড়ী ও বরইবাড়ী এলাকার ৮-৯ জন কৃষক তাদের চৈতালী ফসলের জমি বোরো ধান চাষের জন্য উপযোগী করতে স্থানভেদে মাটির তিন থেকে চার ফুট উপরিভাগ বিক্রি করে দিচ্ছে ওই দালালদের কাছে। পরে এসব মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী গ্রাম বেড়হাউলিয়া ও নেচড়াপাড়া এলাকার বিভিন্ন ভাটায়। অথচ এসব জমির পাশের সরিষা, খেসারিসহ বিভিন্ন ফসলের জমি ঝুঁকির মুখে পড়ছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুকুর খনন করা জমির মালিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমি থেকে বছরে সর্বোচ্চ ১০-১২ হাজার টাকা আয় হয়। অথচ পুকুর খনন করে ওই পরিমাণ জমি থেকে প্রতি বছরে অন্তত ৩০ হাজার টাকা আয় করা যায়। আবার পুকুর খননের খরচও মাটি বিক্রির টাকা দিয়েই হয়ে যায়। তাই পুকুর খনন করছি। ’ এ জমিতে গবাদি পশুর ঘাসসহ চৈতালী ফসল আবাদ করা হতো বলে তিনি জানান। একই কথা বলেন একই মৌজায় প্রায় দুই বিঘা জমিতে পুকুর খননকাজ চলমান থাকা জমির মালিক পথিক আলীও। ওই গ্রামের কৃষক মাজেদ আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘গত বছর সোহেল আহমেদ নামের একজন কৃষক আমার জমির পাশে তাঁর জমিতে পুকুর খনন করে মাটি ভাটায় বিক্রি করেছেন। সে সময় আমি থানায় অভিযোগ দিলে উল্টো পুলিশ আমাকে ভয়ভীতি দেখায়। গত বৃষ্টির মৌসুমে আমার সেই জমির একপাশ তাঁর পুকুরের মধ্যে ধসে গেছে। পুলিশ আমাকে ভয়ভীতি দেখানোর পর থেকে ভয়ে কেউই আর এ বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করে না। ’ এ সময় গ্রামের আরেক কৃষক জামাল আলীও একই অভিযোগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে মাটি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত রবিউল ইসলাম জানান, ‘ভাটায় ইট তৈরির জন্য প্রচুর মাটির দরকার হয়। এ জন্য বর্তমানে মাটির চাহিদা বেড়েছে। তাই এলাকার কৃষকরা টাকার প্রয়োজনে ও পুকুর খননের কারণে মাটি বিক্রি করে। আমরা সেই মাটি নিয়ে ব্যবসা করি। ’ মাটি ক্রেতা এমএএস ভাটার মালিক ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমরা মাটি কিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তারা কোথা থেকে মাটি নিয়ে এলো সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। ’ এ প্রসঙ্গে পার-ফরিদপুর গ্রামের ইউপি সদস্য মজনুর রহমান বলেন, ‘জমির মালিক মাটি বিক্রি করলে আমাদের কিছু করার নেই। এর পরেও অনেককে নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা শোনেনি। কৃষকরা নগদ লাভের আশায় জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে। ’ বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুর থানার ওসি ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে পুকুর খনন বা কৃষিজমির মাটি বিক্রয়ের ব্যাপারে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ আর পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আগে ওসি সাহেব কি করেছেন সেটা তার বিষয়। ’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জমির উর্বরতা শক্তি উপরিভাগে এক থেকে দেড় ফুটের মধ্যে থাকে। তাই ওপর থেকে মাটি সরিয়ে ফেলায় উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এটি বন্ধে ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’ এ ব্যাপারে ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহম্মদ আলী বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কৃষিজমিতে পুকুর খনন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। তাই বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা না দেখলে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’





আরো খবর