বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান, ১৪৪৫ | ১০:১৫ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৩:৩৮ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

মানুষ চায় কাজ

প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ নির্বাচনী ইশতেহার গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও প্রতি চারজনের তিনজনই কোনো ইশতেহার পড়ে দেখে না। এ বিষয়ে নারীদের আগ্রহ একেবারেই কম, যা তাদের রাজনীতিবিমুখতারই পরিচায়ক। আসন্ন নির্বাচনের পর নতুন সরকারের কাছে মানুষের চাহিদার তালিকায় প্রথমেই রয়েছে কর্মসংস্থান, এর পরে পরিবহন ও শিক্ষার উন্নয়ন। রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত সুষ্ঠু নির্বাচন প্রসঙ্গটি মানুষের অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান পেয়েছে পেছনের দিকে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এত আলোচনা থাকলেও এ ব্যাপারে কক্সবাজার ছাড়া অন্য এলাকার মানুষের তেমন মাথাব্যথা নেই। দেশের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের মানুষের মতামত, চাহিদা ও অগ্রাধিকার জানার জন্য সেপ্টেম্বর মাসে দেশের ৬৪ জেলার ১৬৮টি উপজেলায় এ ধারণা জরিপ চালানো হয়। হাতে আসা জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি অংশগ্রহণকারী ইশতেহারের কথা শুনেছে। নারীদের চেয়ে পুরুষরা এ বিষয়ে বেশি ওয়াকিবহাল। ইশতেহার সম্পর্কে ধারণার তারতম্য আছে বিভাগে বিভাগে—বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৮১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ইশতেহারের কথা শুনেছে, ঢাকা বিভাগে এ হার সবচেয়ে কম, ৫৯ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই গ্রাম এলাকার চেয়ে শহরের মানুষ ইশতেহারের কথা বেশি শুনেছে। শিক্ষার স্তর অনুযায়ীও এ হার কমবেশি। ইশতেহারের গুরুত্ব স্বীকার করলেও মাত্র ৬.৯ শতাংশ উত্তরদাতা ইশতেহার দেখে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে। এ ক্ষেত্রে প্রায় অর্ধেক (৪৯.১ শতাংশ) উত্তরদাতার কাছে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা ও যোগ্যতা বড় প্রভাবক। অবশ্য ৩০.৬ শতাংশের কাছে দলীয় প্রতীকই প্রধান বিবেচ্য। বয়স, পেশা ও নারী-পুরুষ ভেদেও মতামতে বৈচিত্র্য স্পষ্ট হয়েছে এ জরিপে। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৫৩ শতাংশ নারী ও ৩৬-৬০ বছর বয়সের মানুষের কাছে প্রার্থীর যোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রায় ৩৭ শতাংশ কৃষক ও ব্যবসায়ীর কাছে রাজনৈতিক দলের প্রাধান্যই বেশি। জরিপে প্রতি বিভাগে ২০টি উপজেলা থেকে বিভিন্ন পেশা, আয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়সের ভিত্তিতে ৫,৩৭৮ জনের মতামত সংগ্রহ করা হয়। ‘একাদশ নির্বাচন : নতুন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা’ শিরোনামের এ মতামত জরিপে সমানসংখ্যক নারী ও পুরুষ অংশ নিয়েছে। শহর ও গ্রামের সব স্তরের মানুষের মতামত জানার জন্য নির্বাচিত প্রতি উপজেলায় পৌরসভার দুটি ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলা হয়। কক্সবাজারের সব কয়টি উপজেলাকে জরিপের আওতায় আনা হয়। জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়েই মানুষের আগ্রহ বেশি। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ৬৯ শতাংশ উত্তরদাতা জাতীয়ভাবে জরুরি বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়। তবে গ্রামাঞ্চলের ২৯ শতাংশ মানুষ স্থানীয় সমস্যাকেই প্রাধান্য দেয়। তরুণদের অগ্রাধিকার কাজ অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে কর্মসংস্থান, এর পরেই রয়েছে পরিবহন ও শিক্ষার উন্নয়ন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অগ্রাধিকার তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রসঙ্গ, তাদের ১৭ শতাংশ বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করে। দেশব্যাপী কর্মহীনতার সমাধান চেয়েছে ২৭.৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী, ২৬.৩ শতাংশের কাছে পরিবহন অবকাঠামো বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর ২৩.৮ শতাংশ মনে করে শিক্ষা খাতের উন্নয়ন অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। রোহিঙ্গা শুধু কক্সবাজারের সমস্যা! রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে দেশে-বিদেশে এত শোরগোল হলেও এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই প্রান্তিক মানুষের; মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ মানুষ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন, আর ৪ শতাংশের কাছে কৃষির উন্নয়ন প্রাধান্য পেয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের চাপ সরাসরি সামলাচ্ছে যারা, তাদের কাছে পাঁচটি অগ্রাধিকারের অন্যতম হলো রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান। কক্সবাজারের ১৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর অগ্রাধিকার এটি। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিও এ জেলায় সবচেয়ে বেশি—৩৮.৫ শতাংশের কাছে এটি সবচেয়ে বড় বিষয়। নতুন ভোটার যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৩ বছর, তরুণ আর মাঝবয়সীদের চাহিদার ক্রম কমবেশি একই রকম—কর্মসংস্থান, পরিবহন ও শিক্ষার উন্নয়ন। তবে বয়স্কদের (৬০ বছরের বেশি) কাছে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন বেশি জরুরি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কর্মসংস্থানকে নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে দেখতে চান। এ হার আবার শহর ও গ্রামভেদে ভিন্ন। সিটি করপোরেশন এলাকার প্রায় ৩৯ শতাংশ উত্তরদাতার কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, কর্মসংস্থান অন্যদিকে গ্রামের মানুষের কাছে যাতায়াত ব্যবস্থার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। শিক্ষার উন্নয়ন পুরুষদের চেয়ে নারীদের কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। নারীদের অগ্রাধিকার পরিবহন জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে চাকরি ও শিক্ষার উন্নয়নের চাহিদা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। শিক্ষিত অংশগ্রহণকারীদের বিবেচনায় পরিবহনটা পরের বিষয়। তবে কম বয়সী নারীদের অগ্রাধিকার তালিকা অন্যদের চেয়ে খানিকটা আলাদা; বয়স্ক মানুষের মতো তাদের (২৭.৭ শতাংশ) কাছেও ১ নম্বর অগ্রাধিকার পরিবহন, এরপর কর্মসংস্থান ও শিক্ষা। ছাত্র ও কর্মহীনরা চায় নির্বাচনী ইশতেহারে যেন সবচেয়ে গুরুত্ব পায় কর্মসংস্থান। তবে কৃষক ও শ্রমিকরা মনে করে ইশতেহারে পরিবহন সমস্যার সমাধান সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। ব্যবসায়ী উত্তরদাতাদের কাছে দুটিই সমান গুরুত্বের। আয়ের দিক থেকেও গুরুত্বের হেরফের দেখা গেছে—উচ্চ আয়ের ৩২ শতাংশ মানুষের কাছে চাকরির গুরুত্ব বেশি, অন্যদিকে স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে বড় সমস্যা হলো পরিবহন। চাকরির দাবি সবচেয়ে বেশি সিলেটে (৫৭.১ শতাংশ), আর বরিশাল বিভাগের অংশগ্রহণকারীদের কাছে শিক্ষার গুরুত্ব বেশি। জরিপে বলা হয়, রাজনৈতিক দল ও ভোটার উভয়ের জন্যই নির্বাচনী ইশতেহার গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হলেও বাংলাদেশের ভোটাররা কদাচিৎ সেগুলো পড়ে। লিখিত প্রতিশ্রুতির চেয়ে এখনো পর্যন্ত মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থী বা দলের ওপর নির্ভর করে। তবে ভবিষ্যতে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত রয়েছে এ জরিপে। কারণ এতে শিক্ষিত ও কম শিক্ষিত, তরুণ ও বয়স্ক মানুষদের অগ্রাধিকার বিবেচনায় ইতিবাচক পার্থক্য লক্ষ করা গেছে।





আরো খবর