মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ৭ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০৭:৪৮ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:১২:৫২ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

স্থগিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ১৫ নভেম্বর থেকে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে গেছে। মূলত রোহিঙ্গারা যেতে না চাওয়ায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ১৫ নভেম্বর দুপুরে প্রত্যাবাসনের জন্য টেকনাফের ‘উনচিপ্রাং ক্যাম্প’ থেকে রোহিঙ্গাদের আনতে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) কয়েকটি বাস সেখানে গেলে বিক্ষোভ শুরু করেন রোহিঙ্গারা। এ ছাড়া প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত অনেক রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কর্মকর্তাদের সুপারিশ অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বন্ধ করা উচিত বলে বিবৃতি দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। একই সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকরাও সহায়ক পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। কূটনীতিকদের মতে, মিয়ানমারে এখনও সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়নি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন মোটেই নিরাপদ নয়। অবশ্য প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুকদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। বলার অপেক্ষা রাখে না, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছামূলক। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সর্বোপরি বাংলাদেশও এ বিষয়টির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পর নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত না হলে বিপদ মাথায় নিয়ে যে রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যেতে চাইবে না, এটা খুবই স্বাভাবিক। সবচেয়ে বড় কথা- ফিরে যাওয়ার পর পুনরায় নিগৃহীত হলে এবং তাদের ওপর হামলা হলে তারা যে আবারও বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে না, এর নিশ্চয়তা কী? কাজেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আগে সে দেশে তাদের নিরাপদ বসবাসের পরিবেশ তৈরির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রত্যাবাসন একটি জটিল প্রক্রিয়া, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে মিয়ানমানের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। প্রত্যাবাসনের সুযোগ নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে মিয়ানমার সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে ইতঃপূর্বে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্র“পের বৈঠকে জানানো হয়েছিল। এসব পদক্ষেপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, সুশাসন ও আইনি পদক্ষেপ। এ লক্ষ্যে পাবলিক পলিসিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার কথা উল্লেখ করে সেই বৈঠকে বলা হয়েছিল- উত্তর রাখাইন রাজ্যে কোনো ধরনের বৈষম্য যাতে না হয়, সে জন্য সেখানকার সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অতীতে আসা রোহিঙ্গাদের বড় অংশ এখনও মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারেনি। স্বেচ্ছায় ও নিশ্চিন্তে রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে ফিরে যায়- সে জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টসহ বাংলাদেশ সফরে আসা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠনের কর্মকর্তাদের চাপ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। বস্তুত মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিস্থিতি ভালোভাবে বোঝা এবং শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুতদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দেশটিতে অবাধ প্রবেশাধিকার প্রয়োজন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণর্থীরা নিরাপদে, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণভাবে নিজ দেশে ফিরে যাবেন, এটাই প্রত্যাশা।





আরো খবর