শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ রমজান, ১৪৪৫ | ১২:৪২ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শনিবার, ১৫ জুন ২০১৯ ০২:৫২:৫১ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

নারায়ণগঞ্জের আকাশ বানাল গাড়ি

প্রথম দর্শনে মনে হতে পারে বিদেশি কোনো গাড়ি, কিংবা মনে হতে পারে- বিদেশি গাড়ির বডি খুলে এনে নতুন করে রিকন্ডিশন করা হয়েছে। কিন্তু মোটেও তা নয়। পুরোপুরি নিজের হাতে ‘ল্যাম্বোরগিনির’ আদলে গাড়ি তৈরি করেছে ফতুল্লার লামাপাড়ার সন্তান আকাশ আহমেদ। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে অবস্থিত অটোরিকশা ওয়ার্কশপে তৈরি হয়েছে এই গাড়ি। এটি ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে চলে। পুরো দেশীয় প্রযুক্তিতে এই অসম্ভবকে সম্ভব করা হয়েছে। ছোট থেকেই আকাশের শখ ছিল নিজের তৈরি গাড়িতে চড়বে। যেখানে আজ অবধি কোনো গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দাঁড়াতে পারেনি, সেখানে ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকার কিশোরের স্বপ্নকে তখন অনেকেই গুরুত্ব দেননি। অবশেষে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে মো. নবী হোসেনের ছেলে আকাশ আহমেদ। তার স্বপ্নের শুরু দেড় বছর আগে। অটোরিকশা নির্মাণের গ্যারেজ থেকে বডি তৈরি করতে করতে একসময় আকাশ বাবার কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল গাড়ি বানাবে সে। বাবা নবী হোসেন না করতে গিয়েও চিন্তা করেন- ছেলেটাই সবচেয়ে বেশি কাজ করে ওয়ার্কশপে। না করলে হয়তো কাজে আর মন দেবে না। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছেলেকে অনুমতি দেন গাড়ি নির্মাণের। আর সেই থেকেই যাত্রা শুরু। ক্যালেন্ডারের পাতায় ইতালির বিখ্যাত গাড়ি প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বোরগিনি গাড়ির মডেল দেখেই সেটিকে অনুসরণ করে সামনে এগোতে থাকে সে। বাবার কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০/২০০ করে টাকা নিয়ে অল্প অল্প করে কাজ শুরু করে। ইউটিউব থেকে টিউটোরিয়াল ফলো করে। জাহাজ কাটার অভিজ্ঞতা থেকে ইস্পাতের পাত কেটে কেটে গাড়ির বডির শেপ তৈরি হয়। ল্যাম্বোরগিনির আদলে গাড়ির নকশা প্রণয়ন হয়। নির্মাণ, জোড়াতালি সবই নিজের হাতে করে আকাশ। আকাশ বলে, ‘গাড়ির চাকা আর স্টিয়ারিং হুইলটাই কেবল কিনে আনা হয়েছে। বাকি সব কিছু আমার নিজের হাতে তৈরি। চাকার সাসপেশন, হেডলাইট, ব্যাকলাইট, গিয়ার নিজের হাতে তৈরি করেছি আমি। যা অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রায় দেড় বছরের টানা প্রচেষ্টায় আজ সেটি পূর্ণাঙ্গ গাড়িতে পরিণত হয়েছে। ’ আকাশ জানায়, গাড়িটিতে প্রায় পাঁচটি ব্যাটারি লাগানো হয়েছে। যেটি প্রায় ১০ ঘণ্টা চলতে সক্ষম। আর এই ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ হতে লাগবে পাঁচ ঘণ্টা। দুজন আরোহী নিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে। পুরো গাড়িটি এ অবস্থায় দাঁড় করাতে তার ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। তবে গাড়ির বডি কার্বন ফাইবারে নিয়ে এলে ৩ লাখ টাকায়ও বানানো যাবে। সে আরও বলেছে, ‘গাড়ি নির্মাণের দেড় বছরে প্রতিনিয়তই সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেকটা অনুমাননির্ভর করেই পাড়ি দিতে হয়েছে অধিকাংশ পথ। কিন্তু লক্ষ্য ছিল একটাই। আর সে কারণেই আমি গাড়িটি তৈরি করতে পেরেছি। ছোটবেলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে যেহেতু শুরু করেছি তাই শেষ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। ঈদের ছুটিতে গাড়িটি নামানোর পরেই অসাধারণ সাড়া পেয়েছি। কেউ কেউ হিংসায় বাজে মন্তব্য করলেও তাতে পাত্তা দিইনি। নিজের তিল তিল করে গড়া পরিশ্রমে তৈরি করেছি এই গাড়িটি। তবে আরও কিছু কাজ বাকি আছে। ’ আকাশের বাবা নবী হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে এই গাড়ি বানিয়েছে এটা এখনো এলাকার অনেকেই বিশ্বাস করতে চায় না। আমি তাদের বলিও না তারা বিশ্বাস করুক। কিন্তু আমার ছেলের ওপর হিংসা করে তার ক্ষতি যাতে না করে এই অনুরোধ রাখি। অনেকেই এসে বিরক্ত করে ছেলেকে। সম্প্রতি একজন জোর করে গাড়ি চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে সামনের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলেছে। ছেলে দুই দিন ধরে কষ্টে খায়নি কিছু। আবার গাড়ি খুলে তা মেরামত করতে হবে। শুরু অনুরোধ করি, ছেলের গাড়িটা অনেক শখের। কেউ যাতে এসে বিরক্ত না করে। ’ গাড়িটি নিয়ে পরবর্তী লক্ষ্য কী জানতে চাইলে আকাশ বলেছে, ‘আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব যাতে আমাকে গাড়িটি বাজারজাত করার অনুমতি দেয়। অন্য কারও কাছে আমি এটির নকশা বিক্রি করতে চাই না। শুধু অনুমতি দিলেই আমার জন্য অনেক বড় সুবিধা হবে। দেশীয় প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব এই গাড়িটি দেখে আমি আরও ২৫টি গাড়ি তৈরির অর্ডার পেয়েছি। বাজারজাত করলে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকাতেই মানুষ পরিবেশবান্ধব এই গাড়িটি ব্যবহার করতে পারবেন। ব্যক্তিগতভাবে আরেকটি গাড়ি বানানোর ইচ্ছা আছে। তবে সেটির মডেল আপাতত অপ্রকাশিতই থাকুক। ’





আরো খবর