হত্যা, মাদক ও চোরাচালানসহ বিভিন্ন মামলায় খুলনা জেলা কারাগারে মায়ের সঙ্গে বন্দি জীবনযাপন করছে ৭ শিশু। কোনো ধরনের অপরাধ না করেই তারা মাসের পর মাস কারাগারে থাকছে। নিজের অজান্তেই শৈশব কাটাতে হচ্ছে কারাগারে।
জানা গেছে, খুলনা জেলা কারাগারে ৪টি ছেলে ও ৩টি মেয়েশিশু রয়েছে। যাদের বয়স তিন মাস থেকে তিন বছর। এরা হল- তাজ সওদাগর (সাড়ে ৩ বছর), ইয়াছিন (৩ মাস), হাবিব (৩ বছর), বাপ্পি (২ বছর), মাহিয়া (২ বছর), পাপড়ি (৩ বছর) ও নুসরাত (১ বছর)। কারাগার কর্তৃপক্ষের দাবি, যথাযথ নিয়ম মেনেই মায়ের সঙ্গে থাকা শিশুদের যত্ন নেয়া হচ্ছে। খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
জানা যায়, খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা এলাকার জুলহাজের স্ত্রী আনজিরা বেগমের বিরুদ্ধে রয়েছে ৩টি হত্যা মামলা। এসব মামলায় চলতি বছরের ৩ মে থেকে সাড়ে তিন বছরের ছেলে তাজ সওদাগরকে নিয়ে কারাগারে আছেন তিনি। ডুমুরিয়া উপজেলার গোনালী গ্রামের মৃত গোলাম রসুলের স্ত্রী ইয়াসমিন। স্বামীকে হত্যার অভিযোগে ৩ মাস বয়সী ছেলে ইয়াছিনকে নিয়ে তিনি কারাগারে। ইয়াছিনের জন্মই হয়েছে কারাগারে। চোরাচালানি মামলার আসামি সাতক্ষীরার দেবহাটা এলাকার হাবিবুর রহমান মিলনের স্ত্রী নাজরিন আক্তার। ১৬ মে থেকে ৩ বছর বয়সী ছেলে হাবিবকে নিয়ে তিনি কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়াও মাদক মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন রূপসার রহিমনগর এলাকার সেলিম গাজীর স্ত্রী সুরমা বেগম। তার সঙ্গে রয়েছে ছেলে বাপ্পী। গত বছরের জুলাই থেকে তিনি সন্তানকে নিয়ে কারাগারে আছেন। বাগেরহাট জেলার কচুয়া এলাকার মোকাররম হোসের স্ত্রী লুবনা বেগম লাবণী (২৮) মাদক মামলার আসামি। চলতি বছরের মার্চ থেকে মেয়ে মাহিয়াকে নিয়ে তিনি কারাগারে। মাদক মামলার অপর দুই আসামি হলেন বটিয়াঘাটার বাইনতলা এলাকার জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী পুষ্প আরা বেগম (২৮) এবং নগরীর হরিণটানা থানার হোগলাডাঙ্গা এলাকার রাকিব হাসানের স্ত্রী আসমা (২৬)। তারা দু’জনই চলতি বছরের এপ্রিল থেকে কারাগারে রয়েছেন। পুষ্পের সঙ্গে রয়েছে তার ৩ বছরের মেয়ে পাপড়ি এবং আসমার সঙ্গে রয়েছে ১ বছরের মেয়ে নুসরাত।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা কারাগারের জেলার জান্নাত-উল-ফরহাদ বলেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনেই আসামিদের সঙ্গে শিশুদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। মায়ের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৬ বছর শিশুকে কারাগারে রাখা যেতে পারে। এরপর যদি শিশুর কোনো অভিভাবক তার দায়িত্ব নিতে চায়, সেক্ষেত্রে আদালত ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে শিশুকে হস্তান্তর করা হয়।
তিনি বলেন, মায়ের সঙ্গে থাকা শিশু নিরপরাধ। কিন্তু এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী সবকিছু করতে হয়। শিশুর খাবার, চিকিৎসা, বস্ত্রসহ সব ধরনের সেবা সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়।