শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০৭:৩২ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:৪৩:৩৭ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

জলের শিশুদের ডাঙায় লেখাপড়া

এ শৃঙ্খল ভেঙেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দুর্গম চরমোন্তাজ ইউনিয়নের মান্তা সম্প্রদায়ের দুই শিশু। তাদের একজন আবুল কালাম আজাদ (১২)। পড়ছে চরমোন্তাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে। তারই ছোট ভাই আব্বাস হোসেন (৮)। সেও ওই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। ইউনিয়নের স্লুইসের খালে ভাসমান মান্তা পল্লীতে তারা থাকছে। সেখানে চার শতাধিক মুসলিম ধর্মাবলম্বী মান্তার বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ১০০ শিশু রয়েছে। এরা সবাই নৌকায় বাস করেন। আর নদ-নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। সম্প্রতি সরেজমিনে স্লুইসের খালের ভাসমান মান্তা পল্লীতে গিয়ে ওই দুই শিশুর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। এ সময় নৌকায় বসে বইয়ে মনোযোগে থাকা আবুল কালাম আজাদ বলে, ‘আমাগো ভিত্তে (ভেতরে) যারা স্কুলে যায় না হেগো লগে তড়ের (ডাঙার) মানুষ কেউ মেশে না। কথাও কয় না। আমরা যারা স্কুলে যাই হেগো লগে এহন (এখন) সবাই মেশে, কথা কয়। স্কুলের সময় ছাড়া আমরা এখনও নদীতে মাছ ধরতে যাই।’ তার পাশে বই হাতে নিয়ে বসে থাকা ছোট ভাই আব্বাস হোসেন বলে, ‘ডিঙিতে দুই ভাই লেহিপড়ি (লেখিপড়ি)। ঘণ্টা দেলে ইস্কুলে যাই।’ এ দুই শিশুর মা জহুরা বেগম বলেন, ‘আমরা পড়াল্যাহা জানি না। স্বাক্ষর জানি না, টিপসই দেই। কিন্তু আমাগো পোলাপান এহন স্কুলে যায়। এইয়া ভাবতেই নিজের কাছে ভালো লাগে।’ শুধু এ দুই ভাই নয়, মান্তা পল্লী ঘুরে তাদের মতো দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী পূর্ণিমা (১১) ও একই শ্রেণীর পারভীন (৯) বংশ পরম্পরার শৃঙ্খল ভেঙে স্কুলে যায়। এ প্রতিবেদক মান্তা পল্লীতে গেলে শুরু থেকেই কায়েম আকবর নামের ৯ বছর বয়সের এক মান্তা শিশু তার সঙ্গে ছিল। প্রতিবেদককে সে নৌকায় করে পল্লী ঘুরিয়েছে। নৌকায় নৌকায় গিয়ে যখন বক্তব্য ও তথ্য নেয়া শেষে প্রতিবেদক ফেরার পথে কায়েম আকবর নামের ওই শিশু তার কাছে একটি আবদার করে। কায়েম আকবর বলে, ‘আমিও ওদের মতো স্কুলে যামু। ভাইয়া আমারে একটু স্কুলে ভর্তি করাই দ্যান। আমি ল্যাহাপড়া করমু।’ জানা গেছে, ডাঙার মানুষদের সঙ্গে মিশে ৭-৮টি মান্তা পরিবারের মধ্যে সভ্যতার ছোঁয়া লেগেছে। ওই পরিবারগুলো সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার চিন্তায় স্কুলমুখী করেছেন। আর বাকি পরিবারগুলোর মধ্যে এখনও শিক্ষার আলো পৌঁছেনি। কেবল সচেতনতার অভাবে তারা এখনও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। সচেতন মান্তা সম্প্রদায়ের কয়েকজন জানান, আমাদের মধ্যে শিক্ষার আলো নেই। কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা শিক্ষিত করতে চাই। এজন্য নদীর কাছাকাছি ডাঙায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হলে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে। আর আমরাও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারব। চরমোন্তাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকিয়া আক্তার বলেন, ‘আমাদের স্কুলে কয়েকজন মান্তা সম্প্রদায়ের শিশু পড়ালেখা করে। ওরা অন্য শিশুদের মতোই পড়ালেখা করে। কোনো ধরনের সমস্যা হয় না। অন্যদের মতোই পড়ালেখায় ওদের ভালো মনোযোগ আছে।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম সগীর বলেন, ‘মান্তা শিশুদের স্কুলে ভর্তির জন্য শিক্ষকরা অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তারা পড়ালেখা করছে। বাকি শিশুদেরও ভর্তি করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘মান্তা সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে এখনও সভ্যতার ছোঁয়া লাগেনি। কিছু শিশু স্কুলে যাচ্ছে। তবে বেশিরভাগ শিশুই স্কুলে যাচ্ছে না। তাদের পার্শ্ববর্তী স্কুলে ভর্তি করে দেয়ার ব্যবস্থা করব। এজন্য সবার আগে জল থেকে তাদের স্থলে আনতে হবে। তাই কিছুদিন আগে আমি মান্তা সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে গিয়ে কথা বলেছি। যারা তাদের সন্তানদের শতভাগ বাধ্যতামূলক শিক্ষার আওতায় আনার বিষয়টি নিশ্চিত করে হলফনামা দিবে, আমি তাদের থাকার জন্য জমির ব্যবস্থা করে দেব। যেহেতু তারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তাই তাদের নদীর পাশেই জায়গার ব্যবস্থা করা হবে।’





আরো খবর