শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ রমজান, ১৪৪৫ | ০৫:২২ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


মঙ্গলবার, ১৫ মে ২০১৮ ০৩:৪১:৪৭ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

সন্তানকে সময় দিন

আমরা আধুনিক যুগের বাসিন্দা। সময় আমাদের আধুনিক করে দিয়েছে। সময় পরিবর্তন হচ্ছে, সেই সঙ্গে আমরাও। সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের এবং বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের ধ্যান-ধারণা, মানসিকতারও পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তা কতটুকু? বা পরিবর্তনটা কোন ধরনের? এখন ঠাকুরমার ঝুলির গল্প ক’জন শোনে? অন্ধকারে কুপিবাতি জ্বালিয়ে শিশুদের কাছে রাজা-রানীর গল্প বলে ক’জন মা-বাবা এবং তা কান পেতে শোনা বা গল্প শোনার অপেক্ষায় থাকেই বা ক’জন? এখন তো প্রযুক্তি এসে আমাদের দরজায় কড়া নাড়ে, আমাদের অফিসে যেতে প্রস্তুত করে, আমাদের কাজগুলোকে সহজ করে দেয়। বাসায় আছে কোমলমতি শিশু। তাদের সামনেও আছে প্রযুক্তির পর্দা। বিদ্যুৎ চলে গেছে? সমস্যা নেই। ভিডিও গেম তো আছে। অফিস, বাসা, খেলাধুলা, পড়াশোনা সর্বত্রই যান্ত্রিকতার পরশ। আর এভাবেই যন্ত্রের মাঝে থেকে প্রতিটি শিশু বড় হচ্ছে, বেড়ে উঠছে। প্রশ্ন জাগে, এটাই কি সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া? এর মাধ্যমে আমরা কি আমাদের শিশুদের বাক্সবন্দি করে ফেলছি না? যে শিশুটি মা-বাবার কাছে না থাকার কারণে বাসায় বসে ট্যাব, ল্যাপটপ বা অন্য কোনো মাধ্যম নিয়ে ভিডিও গেম খেলে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে, সে আসলে কী শিখছে, কী দেখছে বা কী ভাবছে এবং তার কী প্রতিফলন ঘটছে সেটাই গভীর চিন্তার বা গবেষণার বিষয়। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা যখন এগুলো খেলে তখন দেখে কিভাবে গুলি ছুঁড়তে হয়, মানুষ খুন করতে হয়, কিভাবে কথা বলতে হয়, কমান্ড করতে হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ওই আক্রমণাত্মক চরিত্রগুলো তাদেরকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, আকৃষ্ট করে। অর্থাৎ এটা রীতিমতো একটা অনুশীলনও বটে। শিশুদের মস্তিষ্ক সর্বদা সক্রিয় থাকে। তাদের ব্রেইনের সেলগুলো ওই চরিত্রগুলোকে দীর্ঘ সময় ধরে রাখে। বয়সের টানেই হোক আর যাই হোক, কখনও বা ভিডিও গেমের অ্যাকশনগুলো সে বাস্তবে প্রয়োগ করে ফেলে। তখন তাদের মধ্যে একটা গ্যাং ভাব বা হিরোইজম ভাব কাজ করে থাকে। কারণ ওই গেমগুলো হচ্ছে ডিজিটাল কোকেন বা ডিজিটাল আফিম। যে এই কোকেন বা আফিমের নেশায় পড়ে যায়, হয়তোবা তার মধ্যেও এই ভাবটি বা চরিত্রটি এসে যায়। আজকাল মা-বাবারা বাড়ির বাইরের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। সন্তানকে সময় দিতে পারছেন না। সকাল ৮টায় বের হয়ে রাত ১০টায় বাসায় ফিরতে হয়। ফিরে এসে গল্প বলা, ঘুম পাড়ানো গান দূরের কথা, ঘুমন্ত ছেলেমেয়েদের মুখখানা হয়তো একনজর দেখার সুযোগ হয়। কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- আপনি হয়তো ঘুমন্ত বাচ্চাদের একটু দেখতে পারছেন, বাচ্চারা কিন্তু আপনাকে দেখতে পারছে না। আর এ না দেখাটাই একসময় সম্পর্কের মধ্যে এক গভীর ফাঁক তৈরি করে, যা সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ করে দেয়। আর এ ত্রুটিপূর্ণ সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া বাচ্চাদের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন করে। সুতরাং প্রত্যেক মা-বাবার দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানদের প্রতি আরও যত্নবান হওয়া। যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, সময় বের করে বাচ্চাদের সময় দেয়া, তাদের সঙ্গে থাকা। পাশাপাশি অভিভাবক তথা রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব হচ্ছে শিশুদেরকে ইতিবাচক তথা শিক্ষামূলক গেমগুলো (বর্ণ মেলানো, আর্ট করা, রং করা) ইত্যাদি সরবরাহ করা। প্রয়োজন হলে গেম খেলার জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া যা চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো করে থাকে।





আরো খবর