মহিলারা সাধারণত দুইভাবে ডায়াবেটিসে ভোগেন। এক. গর্ভ সঞ্চারের আগে থেকেই ডায়াবেটিস, দুই. গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সাধারণত সন্তান জন্মদানের পর সেরে যায়। এদের পরবর্তীতে মায়ের টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকগুণ বেড়ে যায়।
গর্ভকালীন সময়ে মায়ের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী থাকলে তা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস।
সকালে খালি পেটে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ৬.১ মিলিমোল/লিটার (১১০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার) বা তার চেয়ে বেশী অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে ৭.৮ মিলিমোল/লিটার (১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার) বা তার চেয়ে বেশী হলে তাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হিসেবে সনাক্ত করতে হবে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় OGTT (Oral Glucose Tolerance Test)।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে খুব শক্তভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কেননা, শক্ত নিয়ন্ত্রণ না হলে অনেক ক্ষেত্রে বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করে। এজন্য প্রথমেই রোগীকে একটি খাদ্য তালিকা দেয়া হয়।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত মায়েদের এমন খাবার দিতে হবে যা তাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রিত রাখে। খাবারের পুষ্টিগুণের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।মাকে নিয়ম মাফিক খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে। এ সময় অল্প অল্প করে বারবার খেতে দিতে হবে।
এমন খাদ্য বাছাই করতে হবে যাতে চর্বির পরিমাণ কম ও বেশি আঁশযুক্ত। শর্করার উত্তম উৎস যেমন- ভাত, দানাদার শস্য, ফলমূল ইত্যাদি গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। গর্ভবতী মায়েদের ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার (যেমন: দুধ, বাদাম), লালশাক, পালংশাক, কচুরশাক, কচুর লতি, মলা-ঢেলা মাছসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে।
যদি হাঁটতে কোনো নিষেধ না থাকে তবে রোগীকে হাঁটার পরামর্শ দেয়া হয়। অনেকে মনে করেন, গর্ভকালীন হাঁটাহাঁটি করা যায় না। কিন্তু যদি কোনো জটিলতা না থাকে, তবে সে আধা ঘণ্টা হাঁটতে পারবে।
এর মাধ্যমে শরীর গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত হয়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর তাতেও যদি না হয়, তখন তাকে ইনসুলিন দেয়া হয়। এসময় মুখে খাওয়ার কোন ওষুধ দেয়া হয়না।যাদের গর্ভসঞ্চারের আগে থেকেই ডায়াবেটিস আছে এবং মুখে খাওয়ার ঔষধ ব্যবহার করেন; তাদের ক্ষেত্রে, গর্ভসঞ্চার হয়েছে বোঝার সাথে সাথেই মুখে খাওয়ার ঔষধ বন্ধ করে ইনসুলিন ব্যবহার শুরু করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন গাইনোকোলজিস্টের ফলোআপে থাকতে হবে। আর গাইনোকোলজিস্ট যদি একা না পারে, তবে এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বা ডায়বেটোলজিস্টের কাছে রোগীকে যেতে হবে।জন্মের পরপরই এবং প্রতি ১ ঘন্টা পর পর বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিৎ।
কারণ বুকের দুধ বাচ্চার রক্তে গ্লুকোজের সঠিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে গ্লুকোজ কম থাকার দরুন যেসব সমস্যা হয় তা থেকে বাঁচায়। এছাড়া জন্মের পরবর্তী সময়ে স্তন্যদান করলে মায়ের শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
লেখক : বিআরবি হাসপাতাল, পান্থপথ, ঢাকা