শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ১০:১৫ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


রোববার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১০:৪৪:১৯ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

সৌদিতে বাংলাদেশি গৃহ পরিচারিকারা যৌন নিগ্রহের শিকার

শত শত বাংলাদেশি গৃহপরিচারিকা সৌদি আরবে শারিরীক নির্ডাতন ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শেফালির বয়স ২৫ বছর। তার কথায়, আমি দেশে ফিরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছে ২০ দিন। আমি এমনকি হাঁটতে পর্যন্ত পারতাম না। তাঁরা আমাকে প্রহার করতে মোটা তার ও বেত ব্যবহার করেছে। আমার উরুতে নির্যাতনের চিহ্ন লেপ্টে আছে।' সংবাদে প্রকাশ, এরকম শত শেফালির কান্না বাতাসে ভাসছে। শেফালিকে তাঁর গৃহকর্তা দিনে একবার খাবার দিয়েছে। খাবার চাইলে তাকে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়েছে। মানিকগেঞ্জর মেয়ে শেফালি। গ্রামের এক দালালরর মাদ্যমে তার সৌদি আরবে যাওয়া স্থির হয়েছিল। তবে তার ভাগ্য ভালো যে, মাত্র তিন মাস তাকে অত্যাচার সহ্য করত হেয়ছিল। এরপর তার পক্ষে পালানো সম্ভব হয়। তার বর্ননায়, যেদিন মালিকের বাড়িতে তার শেষ দিন ছিল, সেদিন তাকে নির্মমভাবে পিটানো হয়েছিল। এমনকি মালিকের মেয়ে আমার হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে দিয়েছিল। আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার মালিকের পরিবার আমাকে হুমকি দিয়েছিল যে, আমি যদি তাদের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার খবর প্রকাশ করি, তাহলে আমার জিহ্বা তারা কেটে ফেলবে। আমাকে হত্যা করবে। তারা আমাকে বাংলাদেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা পর্যন্ত বলতে দিত না। শেফালি আরো দাবি করেছে, এই পরিবারটি এমনকি তার মজুরি পরিশোধ করেনি। ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রায় পালিয়ে আসা অন্তত সাড়ে ছয় হাজার গৃহপরিচারিকার একজন হলেন শেফালি। এই তথ্য দিয়েছে ব্রাক। বেসরকারি এই এনজিওটি জানায়, ১৯৯১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ৩২ হাজার ৩১৭ জন গৃহপরিচারিকা চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে গেছেন।কিন্তু সংখ্যাটি হু হু করে বাড়তে শুরু করে যখন ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব গৃহপরিচারিকা পাঠাতে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। গত সাড়ে তিন বছরে ২১৮,১৩১ জন গৃহপরিচারিকা সৌদিতে গেছেন। ব্রাকের একজন বিশেষজ্ঞ শরিফুল হাসান। তিনি বলেছেন, সৌদিতে বাংলাদেশি গৃহপরিচারিকারা নানা ধরনের নিগ্রহের শিকার। তারা খাবার ও মজুরি বঞ্চনার শিকার। তারা নানাভাবে শারিরীক ও যৌন নির্যাতন সহ্য করতে বাধ্য হয়েছে। ‘আমাদেরকে কাছে এমন নজির আছে, যেখানে মেয়েরা তাদের পুরুষ মালিকের লালসার শিকার হয়েছে। তারা গর্ভবতী অবস্থায় বাংলাদেশ ফিরে এসেছে। মাসের পর মাস বেতন না দেওয়া এবং ঠিকমতো খাবার খেতে না দেওয়ার কাহিনির কোনো কমতি নেই। অধিকার কর্মীদের অনেকের দাবি, নির্যাতিত নারীদের অনেককেই পর্দার আড়ালে কঠোর গোপনীয়তায় রাখা হয়, যাতে বাইরের বিশ্ব এবিষয়ে জানতে না পারে। জনাব হাসান বলেছেন, অনেকেই বাইরের কারো সঙ্গে কোনো প্রকারের যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে না। একমাত্র উপায় হলো পালানো। পুলিশের কাছে আৎসমর্পণ করা কিংবা বাংলাদেশী কোনো ভাই বা বোনের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়ার চেষ্টা করা। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। কোনো একটি জায়গা থেকে রেহাই পাওয়ার পর তারা পুনরায় নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। কারণ নতুন যে মালিকের হাতে তারা পড়ে সেখানেও একই ধরনের তিৎক অভজ্ঞিতার মুখোমুখি হয় তারা। মুক্তির একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়ায় যদি তারা পালিয়ে বাংলাদেশ ফিরে আসতে পারে। ভাগ্য ভালো হলে তারা রিয়াদ বা জেদ্দার কোনো নিরাপদ আশ্রয়স্থলেও কখনো তারা ঠাই পেতে পারে। সেখান থেকে তারা কখনও বাংলাদেশ দূতাবাসের মাদ্যমে দেশে ফিরতে পারে। এদিকে বাংলাদেশে ফিরেও তারা নিরাপদ সমর্থন পায় না। ওয়েজ আর্নারস ওয়েলফেয়ার বোর্ডের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন প্রত্যাগতদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু তাদের পুনর্বাসনের জন্য কোনো কর্মসূচি এখনও নেওয়া সম্ভব হয়নি। অবশ্য এই সমস্যা মোকাবেলায় তারা উদাসীন এমন অেিভযাগ নাকচ করতেই তারা আগ্রহী। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্তণালয়ের সচিব নমিতা হালদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, তারা এই সমস্যা প্রতিরোধে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করছেন। সচিবের কথায়, ‘‘সৌদি রেগুলেশনের কারণে আমাদের দূতাবাস বা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সৌদি বাড়িঘর যখানে আমাদের মেয়েরা কাজ করে, সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। তবে সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সেই প্রবেশাধিকার আছে। এবিষয়ে আমরা সৌদি কর্তৃপক্ষকে বারংবার বলেছি। তিনি অবশ্য বাংলাদেশী নারীদের সেখানে অন্যতম দুভোগের কারণ হিসেব ভাষাগত বাধাকে চিহ্নিত করেন। এজন্য আমরা ভাষা শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিচ্ছি, যাতে তারা ভালোভাবে ভাব আদান–প্রদান করতে পারে।” যদিও অনেকে বলেন যে, সৌদি যতো বেশি সংখ্যক নারী কর্মরত আছে, সেতুলনায় নিগ্রহের হার বেশি নয়। এই ধারণার সঙ্গে ভিন্নমত দেন ব্রাকের অভিবাসী বিশেষজ্ঞ হাসান। তাঁর যুক্তি: যদি একজন বাংলাদেশী নারীও যৌন নির্যাতন বা শারিরীক হয়রানির শিকার হন, তাহলে সেটা আমাদের জন্য লজ্জার। নিরাপদে বাংলাদেশে ফিরেও শেফালির সামনে অন্ধকার। শেফালি বলেন, “আমার সন্তানের ব্রেইন টিউমার। আমার স্বামীর দোকান পুড়ে গেছে। আমরা সর্বস্বান্ত।এই অবস্থায় ভাগ্যের চাকা বদলাতে সৌদি আরবে গিয়েছিলাম।কিন্তু আমার পরিবারের সেটা একটা বিপর্যয় ডেকে এনেছে।”





আরো খবর