বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান, ১৪৪৫ | ১২:৪৩ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই ২০১৮ ০১:২১:৪২ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

যেভাবে হজ আদায় করবেন

তামাত্তু হজ আদায়ের পদ্ধতি বাংলাদেশ থেকে যাঁরা পবিত্র হজে গমন করেন, তাঁরা সাধারণত তামাত্তু হজ আদায় করে থাকেন। তামাত্তু হজকারীদের ওমরাহর পর হালাল হয়ে পৃথক ইহরামে হজ করতে হয়। তাঁদের নিম্নবর্ণিত কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে আদায় করতে হবে। ৮ জিলহজের আগেই তাদের ওমরাহ পালন করতে হয়। তারপর ৮ জিলহজ থেকে মোট পাঁচ দিন হজের কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে। ৮ জিলহজ করণীয় তামাত্তু হজকারীদের ৮ জিলহজ হুদুদে হারামের যেকোনো স্থান থেকে তথা নিজ বাসা, ঘর, হারাম শরিফ থেকে হজের নিয়তে পুনরায় ইহরাম বেঁধে জোহরের আগে মিনায় পৌঁছতে হবে। ৮ তারিখ জোহর থেকে ৯ তারিখ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা সুন্নাত। ৯ জিলহজ করণীয় ♦ জিলহজের ৯ তারিখ সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর মিনা থেকে আরাফার দিকে যাত্রা করবে। সেদিন সূর্য হেলার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। ওই দিন ঝামেলামুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে নিজ নিজ তাঁবুতে জোহর ও আসর নামাজ নিজ নিজ সময়ে মুকিম হলে চার রাকাত এবং মুসাফির হলে দুই রাকাত করে আদায় করবে। তবে মসজিদে ‘নামিরার’ জামাতে পড়লে একসময়েও আদায় করা যাবে। মোট কথা, এখানে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে এক আজান ও দুই ইকামতে আদায় করতে হবে। স্মরণ রাখতে হবে যে আরাফার সঠিক সীমান্তে পৌঁছতে ভুল করলে হজ হবে না। ♦ সূর্যাস্তের পর মাগরিব না পড়েই মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হতে হবে। মাগরিবের ওয়াক্ত চলে গেলেও, রাত গভীর হলেও মুজদালিফায় পৌঁছার পরেই মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়তে হবে। কেননা মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশা এক আজান ও দুই ইকামতে একসঙ্গে আদায় করা ওয়াজিব। এখানে রাত যাপন করা সুন্নাত এবং ১০ জিলহজ ফজরের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করতে হবে। কেননা ১০ তারিখ সুবহে সাদিকের পর কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। তবে দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই মিনার উদ্দেশে রওনা হওয়া বৈধ। ১০ জিলহজ করণীয় ♦ জিলহজের ১০ তারিখ সুবহে সাদিকের পর কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করে মিনার উদ্দেশে যাত্রা করবে এবং মিনায় পৌঁছে শুধু বড় জামারায় (শয়তানকে) সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। ১০ তারিখ সুবহে সাদিকের পর থেকে পরদিন সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় এই কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। যদি এই সময়ের মধ্যে কঙ্কর নিক্ষেপ করা না হয়, তাহলে দম দিতে হবে। এটি সূর্যাস্তের আগে করতে পারলে ভালো। ♦ ১০ জিলহজ কঙ্কর মারার পরই দমে শোকর বা দমে তামাত্তু—যাকে হজের কোরবানি বলা হয়, নিশ্চিত পন্থায় তা আদায় করা ওয়াজিব। কোরবানির পরেই মাথা মুণ্ডন করা ওয়াজিব। তবে চুল ছোটও করা যাবে। মনে রাখতে হবে, হাদি বা কোরবানির পশু অন্যকে দিয়ে জবাই করানো হলে জবাইয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। ♦ কোরবানির পর মাথা মুণ্ডানো বা ছাঁটানোর পর ইহরাম খুলে সব কিছুই স্বাভাবিকভাবে করতে পারবেন। এমনকি স্বাভাবিক কাপড় পরেও তাওয়াফে জিয়ারত করা যাবে। তবে তাওয়াফে জিয়ারতের আগে স্বামী-স্ত্রী মিলন বৈধ হবে না। ♦ কঙ্কর মারা, কোরবানি করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ওয়াজিব। এর ব্যতিক্রম হলে ‘দম’ দিতে হবে। ♦ তাওয়াফে জিয়ারত বা হজের ফরজ তাওয়াফ করে সাফা-মারওয়া ‘সাঈ’ করা ওয়াজিব। সম্ভব হলে সেই তাওয়াফ ১০ তারিখে করা ভালো। অন্যথায় ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে আগেই আদায় করা ওয়াজিব। মাথা মুণ্ডানোর পরই এই তাওয়াফ করা সুন্নাত। তবে কারণবশত এর আগেও বৈধ আছে। তাওয়াফে জিয়ারতের পর স্বামী-স্ত্রী মিলনও বৈধ হয়ে যায়। ♦ ১০ তারিখ দিবাগত রাত মিনায় যাপন করা সুন্নাত। ১১-১২ ও ১৩ জিলহজ করণীয় ১১ ও ১২ তারিখে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় জামারায় উভয় দিন সাতটি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। ছোট জামারা থেকে শুরু করে বড় জামারায় তা শেষ করবে। সূর্য হেলার পর থেকে পরদিন সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় এই কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। সূর্যাস্তের আগে সম্ভব হলে ভালো। তবে বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে, সূর্য হেলার আগে নিক্ষেপ করলে আদায় হবে না, বরং সূর্য হেলার পর আবার নিক্ষেপ করতে হবে। অন্যথায় ‘দম’ দিতে হবে। এটাই নির্ভরযোগ্য ফতোয়া। তবে অতি ভিড় বা অন্য কোনো অসুবিধার কারণে সূর্য হেলার আগে নিক্ষেপ করলে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর এক বর্ণনা মতে বৈধ হবে। আর ১৩ তারিখ সূর্য হেলার পর কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনা ত্যাগ করা সুন্নাত। তবে কেউ যদি ১২ তারিখে চলে আসতে চান, তাহলে ওই দিন সূর্য হেলার পর থেকে পরদিন সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় পাথর মেরে চলে আসতে পারবেন। কিন্তু যদি কেউ ১৩ জিলহজ সুবহে সাদিকের পর মিনায় অবস্থান করেন, তাহলে তাঁর জন্য ১৩ তারিখও কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। অন্যথায় ‘দম’ দিতে হবে। ১২ তারিখের পর হজযাত্রী সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। ♦ তারপর মিনা থেকে মক্কায় এসে বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। বাংলাদেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের হজ শেষে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়। এটি ওয়াজিব। তবে হজ শেষে যেকোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে পরিণত হয়ে যায়। ♦ মিনার দিনগুলোতে মিনায়ই রাত যাপন করা সুন্নাত। জানা থাকা জরুরি ♦ ১০০০ ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে সঙ্গে রাখা ভালো। ♦ পুরুষ হজযাত্রীদের জন্য কমপক্ষে দুই সেট ইহরামের কাপড়, দুই সেট পায়জামা-পাঞ্জাবি, দুটি লুঙ্গি, দুটি টুপি, দুটি গেঞ্জি, দুই জোড়া স্যান্ডেল, দুটি তোয়ালে অথবা গামছা, একটি খাবারের প্লেট, একটি পানির গ্লাস, ওষুধ, দুটি রিডিং চশমা, একটি ছোট কাঁচি, টুথ ব্রাশ, পেস্ট, নাইলনের রশি আর নারী হজযাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় সালোয়ার-কামিজ, ওড়না, বোরকা ও অন্যান্য ব্যবহার্য কাপড় সঙ্গে নিতে হবে। ♦ হজযাত্রার তারিখের তিন দিন আগে হজযাত্রীদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে আসতে হবে। ♦ যে হজযাত্রীরা সরাসরি মক্কায় যাবেন, তাঁরা যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে ইহরামের কাপড় পরবেন। ♦ হাত ব্যাগে সাত কেজির বেশি মাল বহন করা যাবে না। ♦ মক্কা-মদিনা পৌঁছার পর লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকার নিয়ম নেই। হোটেল বা কারো বাড়িতে রান্না ও কাপড় ইস্ত্রি করা যাবে না। ♦ বাইরে যাওয়ার সময় একা যাওয়া অনুচিত। সব সময় দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করা মঙ্গলজনক। ♦ তাওয়াফ, সায়ি ও শয়তানকে পাথর মারার সময় বেশি টাকা-পয়সা সঙ্গে নেবেন না। ♦ সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। এতে পায়ে ফোসকা পড়তে পারে। রোদ ঠেকাতে ছাতা ব্যবহার করুন। প্রচুর পানি বা ফলের রস পান করবেন। ডাস্টবিন ছাড়া অন্য কোথাও ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না। ♦ শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করলে বাংলাদেশ হজ অফিসের পরিচালিত ক্লিনিকে যোগাযোগ করুন। সেখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক নিয়োজিত আছেন। ♦ জিলহজ মাসের ৭ তারিখ রাতে অথবা ৮ তারিখ সকালে মুয়াল্লিমের বাসে মিনায় যেতে হবে। সঙ্গে হালকা কাপড়চোপড় ও প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা নেবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে বাকি টাকা-পয়সা মুয়াল্লিমের অফিসে রেখে রসিদ নেবেন। ♦ মক্কা থেকে হেঁটে মিনা বা আরাফায় যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এতে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। ♦ শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার সময় দলবদ্ধভাবে যাবেন। পাথর মারার সময় কখনো স্যান্ডেল খুলে গেলে বা পাথর হাত থেকে পড়ে গেলে কোনো অবস্থায়ই ওঠানোর চেষ্টা করবেন না। সঙ্গে অতিরিক্ত পাথর রাখবেন। ♦ সৌদি আরবে রাস্তা পারাপারের সময় দৌড়াবেন না। ডান-বাম দেখে রাস্তা পার হবেন। সৌদি আরবে গাড়ি ডান দিক দিয়ে চলে। ♦ দেশে ফেরার সময় ৩৬ ঘণ্টা আগে টিকিট ও পাসপোর্ট জমা দিয়ে বিমানের আসন নিশ্চিত করতে হবে। ♦ জমজমের পানি লাগেজে আনবেন না। ফেরার পথে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে দেওয়া হবে ♦ সৌদি আরবে অবস্থানকালে কোনো ধরনের রাজনৈতিক আলোচনা থেকে বিরত থাকুন। শেষ সময়ের প্রস্তুতি ♦ প্রথম কাজ হলো—পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট ও তারিখ জেনে নেওয়া। এরপর ম্যানিনজাইটিস টিকা বা অন্যান্য ভ্যাকসিন নিতে হবে। ক্রয় করতে হবে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। কিছু বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে হবে। বেশি মালপত্র বোঝা বাড়াবে। যা না হলেই নয়, তা সংগ্রহ করবে। যেমন—পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টাকা রাখার জন্য গলায় ঝোলানো ছোট ব্যাগ, পুরুষের জন্য ইহরামের কমপক্ষে দুই সেট কাপড় (আড়াই হাত বহরের আড়াই গজ এক টুকরা কাপড় আর গায়ের চাদরের জন্য একই বহরের তিন গজের এক টুকরা কাপড়) বাংলাদেশ থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। এ দেশ থেকে জিনিসপত্র নেওয়ার আগে একটু সতর্কতার সঙ্গে নিতে হবে। ইহরামের দুই জোড়া কাপড় ছাড়া যাবতীয় জিনিসপত্র মক্কা-মদিনায় আরো কম দামে পাওয়া যায়। এক জোড়া জুতা নিলেই ভালো হয়। সঠিক সময়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠার জন্য একটি অ্যালার্ম ঘড়ি নেওয়া উচিত। সঙ্গে কিছু শুকনা খাবার এ দেশ থেকে নেওয়া যায়। অনাহূত মালপত্রের বোঝা না বাড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ, তবে অন্তত একটা করে পিঠে ঝোলানো স্কুলব্যাগ নেওয়া যায়। এটি বিভিন্ন স্থানে চলাফেরার সময় খুবই প্রয়োজন। নারীরা বোরকা ও জরুরি জিনিসপত্র সঙ্গে নেবেন। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু, পোশাক ও ওষুধপত্র সঙ্গে নিতে হবে। ♦ হজ একটি পরিশ্রমের কাজ, যার জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে, তবে তা মাত্র পাঁচ-ছয় দিন। ♦ বিমানে উড্ডয়নকালে হাতব্যাগে ছুরি, কাঁচি, দড়ি নেওয়া যাবে না। নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ নিতে পারবেন না। চাল, ডাল, শুঁটকি, গুড় ইত্যাদি পচনশীল খাদ্যদ্রব্য, যেমন—রান্না করা খাবার, তরিতরকারি, ফলমূল, পান, সুপারি ইত্যাদি সৌদি আরবে নেওয়া যাবে না। ♦ গন্তব্য ঢাকা থেকে মক্কায়, নাকি মদিনায়—প্রথমে তা জেনে নিতে হবে। যদি মদিনায় হয়, তাহলে ঢাকায় ইহরাম নয়। মদিনা থেকে মক্কায় গেলে ইহরাম বাঁধতে হবে। বেশির ভাগ হজযাত্রী আগে মক্কায় যান। যদি মক্কায় যেতে হয়, তাহলে ঢাকা থেকে বিমানে ওঠার আগেই ইহরাম বাঁধতে হবে। ইহরাম গ্রহণের পর পার্থিব কাজকর্ম নিষিদ্ধ। যেমন—সহবাস, পুরুষদের জন্য কোনো সেলাই করা জামা, পায়জামা ইত্যাদি পরা নিষিদ্ধ। কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। নখ, চুল, দাড়ি-গোঁফ ও শরীরের একটি পশমও কাটা বা ছেঁড়া যাবে না। কোনো ধরনের সুগন্ধি লাগানো যাবে না। কোনো ধরনের শিকার করা যাবে না। ক্ষতি করে না—এমন কোনো প্রাণী মারা যাবে না। ♦ বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র, বিমানের টিকিট, টিকা দেওয়ার কার্ড, অন্য কাগজপত্র, টাকা, বিমানে পড়ার জন্য ধর্মীয় বই ইত্যাদি গলায় ঝোলানোর ব্যাগে যত্নসহকারে রাখতে হবে। ♦ বিমান থেকে নামার পর একটি হলঘরে বসার ব্যবস্থা করা আছে। এই হলঘরের পাশেই ইমিগ্রেশন কাউন্টার। ইমিগ্রেশন পুলিশ ভিসা দেখে (ছবি ও আঙুলের ছাপ নিয়ে) পাসপোর্টের নির্দিষ্ট পাতায় সিল দেবে। তারপর লাল-সবুজ পতাকা অনুসরণ করে ‘বাংলাদেশ প্লাজায়’ যেতে হবে। সেখান থেকে মুয়াল্লিমের গাড়ি মক্কায় যার যার নির্ধারিত বাড়ি পৌঁছে দেবে। মুয়াল্লিমের নম্বর (আরবিতে লেখা) হাতে পরে নিতে হবে। আর বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে। হজের সুন্নাতসমূহ ♦ ইহরাম বাঁধার সময় গোসল বা অজু করা এবং শরীরে খোশবু মাখা। (তিরমিজি : ৭৬০, মুসলিম : ৮/১০১) ♦ নতুন বা পরিষ্কার চাদর পরা। সাদা হওয়া উত্তম (মুসানাদে আহমদ : ৪৮৯৯, তিরমিজি : ৯১৫, ২৭২৩) ♦ ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। (মুসলিম : ২০৩১) ♦ বেশি বেশি তালবিয়া পড়া। (মুসলিম : ২২৪৬) ♦ মক্কাবাসী ছাড়া অন্যরা হজে ইফরাদ বা কিরান আদায় করার সময় তাওয়াফে কুদুম করা। (মুসলিম : ২১৩৯) ♦ মক্কায় থাকাকালীন বেশি বেশি তাওয়াফ করা। (তিরমিজি : ৭৯৪) ♦ ইজতিবা করা অর্থাৎ তাওয়াফ আরম্ভ করার আগে চাদরের এক দিককে নিজের ডান বাহুর নিচে রাখা এবং অন্য দিক বাম কাঁধের ওপর পেঁচিয়ে দেওয়া। (তিরমিজি : ৭৮৭) ♦ তাওয়াফের সময় ‘রমল’ করা। রমলের পদ্ধতি হলো তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করের সময় ঘনঘন কদম ফেলা এবং উভয় কাঁধ হেলাতে হেলাতে চলা। (বুখারি : ১৫০১)। উল্লেখ্য, ‘রমল’ ও ‘ইজতিবা’ ওই তাওয়াফে সুন্নাত, যে তাওয়াফের পর সাঈ করা হয়। ♦ সাঈ করার সময় উভয় মিলাইনে আখজারাইনের (সবুজ বাতি) মধ্যখানে জোরে হাঁটা। এটা পুরুষদের জন্য। (মুসলিম : ২১৩৭) ♦ তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করে হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া। চুমু দেওয়া সম্ভব না হলে হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত উঁচিয়ে ইশারা করে হাতে চুমু দেওয়া। (আবু দাউদ : ১৬০০, বুখারি : ১৫০৬, ১৫০৭) ♦ কোরবানির দিনসমূহে মিনায় রাত যাপন করা। (আবু দাউদ : ১৬৮৩) এমন ভুল যেন না হয় ♦ অনেকে ভুল করে হজে গিয়ে মুসাফিরের নামাজ পড়ে। অথচ মাসালা হলো, যদি মক্কা-মিনা-মদিনা মিলিয়ে কেউ ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত করে, তাহলে সে মুকিম গণ্য হবে। তাহলে তাকে মক্কা, মদিনা, মিনা, মুজদালিফা ও আরাফায় চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ চার রাকাতই পড়তে হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৮৭) ♦ মিনায় ১২ বা ১৩ তারিখ পর্যন্ত থাকতে হয়। এর মধ্যে যদি কোনো দিন শুক্রবার হয়, তাহলে মিনায় জুমার নামাজ পড়তে হবে। (তাতারখানিয়া, পৃ. ৫৫৩) ♦ হজে গিয়ে অনেক নারী চেহারা খোলা রাখেন। অথচ মাসালা হলো, চেহারা দেখানো যাবে না, তবে বোরকার নেকাব চেহারার সঙ্গে লাগিয়ে রাখবে না। এর জন্য এমন কিছু ব্যবহার করতে হবে, যাতে করে নেকাব চেহারার সঙ্গে না লেগে থাকে। ♦ অনেক নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মসজিদুল হারামে গিয়ে থাকেন। এতে ভিড় বেশি হয়। ফলে তারা হাজারো পুরুষের ধাক্কা খাচ্ছে, ধাক্কা দিচ্ছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘নারীরা মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে ঘরে নামাজ পড়া উত্তম। ’ এ থেকে বোঝা যায়, কোনো নারী হজ বা ওমরাহে এসে ঘরে নামাজ পড়লে এক লাখের চেয়ে বেশি সাওয়াব পাবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৬৫৯৮, ২৬৬২৬) ♦ এক শ্রেণির হাজি আছে, যারা সারা দিন মোবাইল ফোন বা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে থাকে। অথচ প্রাণীর ছবি তোলা হারাম কাজ। (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৫৯৫০) ♦ অনেক পুরুষ ইহরাম খোলার সময় দাড়ি মুণ্ডায়। এরা ১০০ বার হজ করলেও তাদের হজ কবুল হবে না। ♦ ‘তালবিয়া’ ব্যক্তিগত আমল। সবাই যার যার ‘তালবিয়া’ পড়বে। দেখা যায়, অনেকে দলনেতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তালবিয়া পড়তে থাকে। অথচ এর কোনো প্রমাণ নেই। ♦ ব্যাংকের মাধ্যমে কোরবানি করানো উচিত নয়। কারণ এতে কখনো কখনো ১০ তারিখে বড় শয়তানকে কংকর মারার আগেই কোরবানি হয়ে যায়। আবার কখনো কোরবানি সম্পন্ন হওয়ার আগে মাথা মুণ্ডানো হয়ে যায়। আর এ উভয় ভুলের দরুন তামাত্তু ও কিরানকারীর ওপর দম ওয়াজিব হয়ে যায়। কারণ তাদের জন্য ১০ তারিখে এই তিনটি কাজে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি—এক. বড় শয়তানকে কংকর মারা। দুই. কোরবানি করা। তিন. মাথা মুণ্ডানো। এ জন্য নিজেরা বা বিশ্বস্ত লোক পাঠিয়ে কোরবানির ব্যবস্থা করা জরুরি। যা না হলে হজ হয় না হজের ফরজ হজের ফরজ তিনটি—এক. ইহরাম বাঁধা। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৯১৯০) দুই. জিলহজ মাসের ৯ তারিখ সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে ঈদুল আজহার দিন সুবহে সাদিক পর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। এ সময়ের মধ্যে অতি অল্প সময়ও আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে হজের ফরজ আদায় হয়ে যাবে। (তিরমিজি, হাদিস : ৮১৪) তিন. আরাফায় অবস্থানের পর কাবা শরিফে সাত চক্কর লাগানো। একে তাওয়াফে জিয়ারত বা তাওয়াফে এজাফা বলা হয়। হজের ওয়াজিব এক. জিলহজের ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত যেকোনো সময়ে সামান্য সময়ের জন্য হলেও মুজদালিফায় অবস্থান করা। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৮) দুই. সাফা-মারওয়ায় সাত চক্কর লাগানো। এটিকে সায়ি বলা হয়। চক্কর লাগানো শুরু হবে সাফা থেকে আর শেষ হবে মারওয়ায়। (মুসলিম, হাদিস : ২১৩৭) তিন. যথাসময়ে রমি বা শয়তানকে পাথর মারা। (মুসলিম, হাদিস : ২২৮৬) চার. তামাত্তু ও কিরান হজকারীদের দমে শোকর তথা হজের কোরবানি করা। পাঁচ. হারাম শরিফের সীমানায় কোরবানির দিনগুলোতে মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করা। (বুখারি, হাদিস : ১৬১৩) ছয়. মক্কাবাসী ছাড়া অন্যরা তাওয়াফে সদর তথা তাওয়াফে ‘বিদা’ করা। (মুসলিম, হাদিস : ২৩৫০)





আরো খবর