প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ১০:৪৭:১৩ পূর্বাহ্ন
ভারতে মুসলিম যুবককে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা
নয়াদিল্লী: ভারতে বিজেপিশাসিত রাজস্থানে এক মুসলিম যুবককে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। কথিত ‘লাভ জিহাদ’র অভিযোগে ওই যুবককে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রকাশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার বাসিন্দা মুহাম্মদ আফরাজুলকে পিটিয়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর পরে তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যার ওই ঘটনার ভিডিওচিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ওঠায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
মুহাম্মদ আফরাজুল নামে ওই শ্রমিক প্রাণ রক্ষা করার জন্য বারবার আকুতি জানালেও হত্যাকারী ঘাতকের হৃদয় তাতে সাড়া দেয়নি। পুলিশ এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শম্ভুলাল রেগারকে সকালে গ্রেপ্তার করেছে। তার কাছ থেকে একটি কুঠার এবং একটি মোটর বাইক উদ্ধার হয়েছে।
ওই ঘটনার পরে রাজস্থানের রাজসামন্দ এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় ইন্টারনেটে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
গণমাধ্যমের একাংশে প্রকাশ, মুহাম্মদ আফরাজুল রাজস্থানে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে সেখানে রুমা রানি নামে ভিনধর্মী এক মেয়ের প্রেমে পড়েন ও তাকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে ওই পরিবারের রোষের মুখে পড়েন আফরাজুল। অবশেষে নৃশংস হত্যার শিকার হলেন তিনি।
এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট অধীর চৌধুরি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ওই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দার ও উদ্বেগের। ভারতের কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী যাদের হাতে ক্ষমতা আছে তারা ঠিক করে দিচ্ছে ‘লাভ জিহাদ’ কাকে বলে, ভারতের সংস্কৃতি কাকে বলে। ভারতে কে কী খাবে, না খাবে তারা ঠিক করে দিচ্ছে। তাদের মনমতো না হলে, পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটছে। স্বাধীন ভারতে এ ধরণের বর্বরতা, গোটা দেশবাসীর কাছে চিন্তা ও উদ্বেগের বিষয়।
অধীর চৌধুরি বলেন, আমি ওই ঘটনার নিন্দা করাসহ ঘৃণা ব্যক্ত করছি। এর পাশাপাশি ওই ঘটনাকে নিয়ে আমরা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রূপান্তরিত করবো। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ভারতের মানুষের কণ্ঠস্বর এ ধরণের বর্বরোচিত আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারে বলে আমরা মনে করি। গোটা ভারত জুড়ে যেভাবে কোথাও মাংস খাওয়ার নামে, কোথাও লাভ জিহাদের নামে একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ভারতের গণতন্ত্র ক্রমশ বিপন্নতার মধ্যে এগিয়ে চলেছে।
পশ্চিমবঙ্গের সিপিআইএম নেতা ও সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, ভারতকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? জিহাদ কারা করল? যে ভালোবেসে বিয়ে করল সে? না যে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করল সে? আসলে ‘সঙ্ঘ পরিবার’ তালিবানি রাজত্ব করছে। আমরা দেখেছি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে এভাবে হত্যালীলা হয়। বিয়ে করা, প্রেম করা ব্যক্তিগত ব্যাপার। অনেক সময় বাবা মায়ের পছন্দ না হলেও ছেলে মেয়েরা পালিয়ে যেয়ে বিয়ে করে। এখানে অবশ্য ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। যেন সবার ওপরে ধর্ম সত্য তাহার উপরে নাই।
রাজস্থানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলাবচাঁদ কাটারিয়া বলেন, ওই ঘটনার ভাইরাল ভিডিও'র যে ছবি প্রকাশ্যে এসেছে তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। যে ভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা দেখলে যেকোনো মানুষই চমকে উঠবেন! অভিযুক্তর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে শ্রী কাটারিয়া আশ্বাস দিয়েছেন।