মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১১

প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:২৩:৫১ পূর্বাহ্ন

আটক যুবরাজদের ভয়ঙ্কর নির্যাতন, এ বিরোধে পতনের শঙ্কা সৌদি রাজতন্ত্রের

রিয়াদ: সৌদি আরবে আটক কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও যুবরাজদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ব্যাপক মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। তাদের অবস্থা এতটাই গুরুতর যে, পরবর্তীতে তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন পড়ে। সংবাদসংস্থা মিডল ইস্ট আই এ তথ্য জানিয়েছে। সৌদি আরবে সাম্প্র্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে রাজপরিবার থেকে গ্রেপ্তারের সংখ্যা এরই মধ্যে ৫০০ ছাড়িয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে রাজপরিবারের দ্বিগুণ সংখ্যক ব্যক্তিকে। আটকৃত কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও যুবরাজদেরকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পূর্বে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে পরিচালিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ২০১ জনকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের অ্যাটর্নি জেনারেল সৌদ আল-মোজেব এক বিবৃতিতে জানান, গত সপ্তাহের শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২০৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং বাকি ২০১ জন এখনো আটক রয়েছেন। আটকৃতদের বেশিরভাগকেই রাখা হয়েছে রিয়াদের রিটজ কার্লটন হোটেলে। অভিযানের প্রথম দিনেই ধনকুবের প্রিন্স আল আলওয়ালিদ বিন তালালসহ ১৭ জন প্রিন্সকে আটক করা হয়। সংবাদসংস্থা মিডল ইস্ট আই দাবি করেছে, আটকের সংখ্যা প্রায় ৫৫০ জন যাদের মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও যুবরাজদেরকে নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। বিশেষ পন্থায় তাদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ ধরনের নির্যাতনে তারা কেবল শরীরে আঘাত পাচ্ছেন কিন্তু মুখে আঘাতের কোনো আলামত রাখছে না। আটকৃত কয়েকজনকে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নির্যাতন করা হয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী এ অভিযানে রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। যারা আগের বাদশাহ আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন তাদের মধ্যে এ আতঙ্ক বেশি কাজ করছে। সরকারের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন কিন্তু এখনো আটক হননি এমন ব্যক্তিরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সে লক্ষ্যে তাদের প্রাইভেট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। মিডল ইস্ট আই জানায়, অ্যাকাউন্ট জব্দ হওয়া ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যক্তিদের সংখ্যা আটককৃতদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। হাউস অব সৌদের এত বেশি সংখ্যক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও যুবরাজদেরকে ওপর এই মাত্রার ধরপাকড় অভিযান চালানো হবে তা আগে কেউ কল্পনা করে উঠতে পারেননি। সে কারণেই তারা পালানোর সময় পায়নি এবং ধরা পড়েছে। গত শনিবার আটক হয়েছিলেন এমন সাত রাজপুত্রকে বুধবার রাতে রিয়াদের রিটজ কার্লটন হোটেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মুক্তি পাওয়া রাজপরিবারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে বাদশাহর রাজপ্রাসাদে আনা হয়। অনেকের আশঙ্কা, দুর্নীতিবিরোধী এ অভিযান নতুন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার প্রচেষ্টার অংশ। ৮১ বছর বয়সী বাবা বাদশাহ সালমানের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার আগে হাউস অব সৌদের ভেতরের ও বাইরের প্রতিদ্বন্দ্বী ও শত্রুদের সরিয়ে দিতে চান যুবরাজ বিন সালমান। ২০১৫ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহ ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় মারা যান। এরপর সৌদি আরবের বাদশাহ নিযুক্ত হন তার সৎ ভাই সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। এরপর নিজের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণা করেন। সৌদি আরবের আধুনিক ইতিহাসে রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ঘটনা নজিরবিহীন। নিজের ক্ষমতা পাকাপক্ত করতে প্রথমবারের মত রাজপরিবারে বিরোধ সৃষ্টি করল যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এ বিরোধ ভবিষ্যৎ সৌদি রাজতন্ত্র পতনের কারণ হতে পারে। আল সৌদ বা সৌদ পরিবার হল সৌদি আরব শাসনকারী রাজবংশ। এতে হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছে। মুহাম্মদ বিন সৌদ ও তার ভাইদের বংশধরদের নিয়ে এই পরিবার গঠিত। বর্তমানে মূলত আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের বংশধররা এই রাজবংশের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। রাজ পরিবারের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন সৌদি আরবের বাদশাহ। প্রথম বাদশাহ ইবনে সৌদের এক ছেলে থেকে অন্য ছেলের হাতে বাদশাহর ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়ে আসছে। হিসাব অণুযায়ী রাজপরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫,০০০ তবে অধিকাংশ ক্ষমতা ২,০০০ জনের হাতে ন্যস্ত রয়েছে। আল সৌদ তিনটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। এগুলো যথাক্রমে প্রথম সৌদি রাষ্ট্র, দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্র ও আধুনিক সৌদি আরব। প্রথম সৌদি রাষ্ট্রকে ওয়াহাবিবাদের বিস্তার হিসেবে ধরা হয়। দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের কারণে চিহ্নিত হয়। আধুনিক সৌদি আরব মধ্য প্রাচ্যে প্রভাবশালী। পূর্বে আল সৌদের সাথে উসমানীয় সাম্রাজ্য, মক্কার শরিফ, আল রশিদ ও কিছু ইসলামবাদি গোষ্ঠীর সাথে দেশের ভেতরে ও বাইরে সংঘর্ষ ছিল। আল সৌদ অর্থ সৌদের পরিবার। ১৮ শতকে রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ বিন সৌদের নাম থেকে এই নামটি এসেছে। বর্তমানে আল সৌদ পদবিটি মুহাম্মদ বিন সৌদ বা তার তিন ভাই ফারহান, সুনায়ান ও মিশারির বংশধরদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এই বংশের অন্যান্য কিছু শাখা রয়েছে। সৌদি রাজমুকুটের অধিকারী না হলেও এসকল শাখা বংশের ব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে থাকতে পারে। শাখা বংশের সদস্যদের সাথে কখনো আল সৌদ সদস্যদের বিবাহ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের পুত্র ও নাতিদের ক্ষেত্রে রাজকীয় পদবি ’হিজ রয়াল হাইনেস’ ব্যবহৃত হয়। তবে অন্যান্য শাখা বংশের সদস্যদের ক্ষেত্রে ’হিজ হাইনেস’ ব্যবহৃত হয়।
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com