প্রকাশিতঃ রোববার, ১২ নভেম্বর ২০১৭ ০৫:৫৭:২১ অপরাহ্ন
তালাক দেয়া স্ত্রীকে ফের ঘরে তুলতে বাধা দেয়ায় বাবাকে পুড়িয়ে হত্যা!
বগুড়া: তালাক দেয়া স্ত্রী মর্জিনা বেগমকে ঘরে তুলতে বাধা ও এ আদেশ অমান্য করলে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দিলে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে বাবা আবদুল হামিদকে পুড়িয়ে হত্যা করে ছেলে রহিদুল ইসলাম।
রোববার বিকালে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুনের আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রহিদুল এ তথ্য জানান।
জবানবন্দিতে রহিদুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার ঘুমাতে যাওয়ার আগে ডাবের পানিতে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে বাবা ও মাকে খাওয়ানো হয়েছিল। মধ্যরাতে বগুড়ার আদমদীঘির কুশাবাড়ি মণ্ডলপাড়ার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। ওই আগুনে মা হাফসা বিবিও দগ্ধ হয়েছেন।
এ কাজে কয়েকজন ভাড়াটিয়া তাকে সহযোগিতা করেছেন বলে তিনি জানান।
আদমদীঘি থানার ওসি আবু সায়িদ মো. ওয়াহেদুজ্জামান জানান, নন্দীগ্রাম উপজেলার আগাপুর গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে কৃষক হামিদুল ইসলাম আদমদীঘি উপজেলার কুশাবাড়ি গ্রামের ময়েজ উদ্দিনের মেয়ে হাফসাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই তিনি সপরিবারে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে আসছেন।
তাদের ছেলে রহিদুল ইসলাম প্রায় ছয় বছর আগে পার্শ্ববর্তী গজারিয়া গ্রামের আবদুর রহিমের মেয়ে মর্জিনা বেগমকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়ায় রহিদুল প্রায় তিন মাস আগে মৌখিকভাবে স্ত্রীকে তালাক দেন। পরবর্তীতে স্ত্রীকে ফিরে এনে পুনরায় সংসার করতে চান।
এ নিয়ে গ্রামে কয়েকদফা বৈঠক হয়। কিন্তু বাবা হামিদুল ও মা হাফসা এতে রাজি ছিলেন না। তাই তিনি স্ত্রীকে বাড়িতে আনতে পারছিলেন না। এছাড়া এ আদেশ অমান্য করলে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দেয়া হয়েছিল। বড় ভাই মাদ্রাসা ছাত্র শাহজাহান আলীকে অনেক সুযোগ সুবিধা দেয়া হতো।
এসব কারণে রহিদুল তার বাবা ও মার প্রতি বিরক্ত হন। তাদের দুনিয়া থেকে তুলে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার রাতে ভাত খাবার পর রহিদুল বাবা ও মাকে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো ডাবের পানি খেতে দেন। এরপর তিনি পাশের ঘরে ঘুমাতে যান।
রাত ১টার দিকে হাফসা বিবির আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তারা ঘরে হামিদুলকে পুড়ে নিহত ও হাফসাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ছটফট করতে দেখেন। তখন ছেলে রহিদুল বাসায় ছিলেন না। প্রতিবেশীরা হাফসাকে উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল ভর্তি করেন।
ওসি আরও জানান, শুক্রবার বগুড়া শহর থেকে নিহতের ছেলে রহিদুলকে আটক করা হয়। গত তিন দিন তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অপরাধ স্বীকার করেন।
ভাড়াটিয়ে খুনিদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তাদের জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া গেলে গ্রেফতার ও চার্জশিটে নাম উল্লেখ করা হবে বলে তিনি জানান।