বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ৯ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০২:১১ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ ০৪:২২:০৩ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

ব্যাংকে টাকার টানাটানি

নগদ অর্থের সংকটে দেশের ব্যাংকগুলো। একই অবস্থা ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও (এনবিএফআই)। ফলে বেশকিছু ব্যাংক নতুন করে ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে পারছে না। এ ছাড়া প্রায় সব ব্যাংকই বাড়িয়েছে সুদের হার। আমানত তুলে নেয়ার ঘটনা বাড়ছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যাংকাররা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মাস দুয়েক আগেও ব্যাংকগুলো বড় গ্রাহকদের ৮-৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতো, যা এখন ২-৩ বেড়ে গেছে। একইভাবে বেড়ে গেছে ভোক্তা ও গৃহঋণের সুদের হারও। বাংলাদেশ ব্যাংক ও খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নতুন কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে টাকা রাখার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ বোধ করছে না। মূলত রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স পাওয়া নতুন ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই। পুরনো বেসরকারি ব্যাংক থেকেও কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এতে তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। তারা নতুন ঋণ দেয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে, বাড়ছে সুদের হার। যার প্রভাব পড়েছে পুরো অর্থনীতিতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারল্য সংকটের কারণে নানাজনের কাছে ধরনা দিচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক। কর্মকর্তাদের টার্গেট বেঁধে দেয়া হয়েছে। অফার করা হচ্ছে বাড়তি সুদও। ব্যাংকের আমানত সংগ্রহের টার্গেট পূরণ করতে না পারলে চাকরিও ঝুঁকিতে পড়তে পারে- এমন আতঙ্ক মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের মাঝে। ব্যাংকের আমানত সংগ্রহের এমন অবস্থা আগে কখনো দেখা যায়নি বলেও মন্তব্য করেছেন কোনো কোনো ব্যাংকার। তাদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে অতিমাত্রায় ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। নিয়ম না মেনেও কোনো কোনো ব্যাংক বিপুল অঙ্কের ঋণ দিয়েছে- যা গোটা ব্যাংকিং খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণপ্রবাহ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনার কারণেও অনেক ব্যাংক নতুন ঋণ দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। অনেকে নির্ধারিত ঋণসীমার মধ্যে আসতে দেয়া ঋণও ফেরত আনছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে সবাই আমানত সংগ্রহে জোর দিয়েছে। এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার একটি অনুষ্ঠানে গভর্নর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এতে গভর্নর বলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংক খারাপ অবস্থায় পড়ে গেছে। এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি ব্যাংক থেকে আমানত সরিয়ে নিতে চাইছে। একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আমানত নিয়ে গভর্নর বলেন, আমানতের সুদহার বাড়তে শুরু করেছে, এটা আমানতকারীদের জন্য ভালো। তবে ঋণের সুদহার বাড়াটা ভালো না। এটা স্বল্প সময়েই ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আগ্রাসী ঋণ বিতরণ বন্ধ, ঋণের মান ভালো ও ঋণশৃঙ্খলা নিশ্চিতে ঋণসীমা কমানো হয়েছে। তবে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট নেই বলে দাবি করেন গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) নিয়ে ব্যাংক খাতে অহেতুক প্যানিক দেখা দিয়েছে। এডিআর কমানোর কারণে এখন সামগ্রিক ব্যাংক খাতে ১১ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ঋণ আছে। তিনি বলেন, ঋণ আমানত অনুপাতের (এডিআর) বিষয়ে আগে বলা হয়েছিল সিআরআর (নগদ জমা সংরক্ষণ) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণ) বাদ দিয়ে যে ৮০.৫ শতাংশ থাকে তার থেকে ব্যাংক নিজস্ব সিদ্ধান্তে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। এখন আমরা বলছি ব্যাংক ৮০.৫ শতাংশ থেকে আর ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারে। অর্থাৎ ৮৩.৫ শতাংশ। আমাদের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৮টি ব্যাংকে এর নিচেই আছে। অনেক বেসরকারি ব্যাংক অ্যাগ্রেসিভ ল্যান্ডিং (ঋণ প্রদান) করছিল এবং ন্যূনতম পরিমাণ ক্রেডিট ছিল না। এ জন্য অ্যাডজাস্টমেন্ট করেছি। জানা গেছে, সরকারি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তিনটি ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা তুলে সরকারি ব্যাংকে জমা করেছে। হঠাৎ করে বড় অঙ্কের টাকা তুলে ফেলায় কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে ব্যাংক তিনটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে ৮৬ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তা ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। ওই বছরের জুন শেষে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে ভালো না থাকায় ব্যাংকগুলো এই তারল্যের বড় অংশই স্বল্প সুদের বন্ড ও বিলে বিনিয়োগ করে রেখেছে। ব্যাংকগুলো আড়াই শতাংশেরও কম সুদে ৭ দিন, ১৪ দিন ও ৩০ দিন মেয়াদে বিনিয়োগ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ঋণপ্রবাহ অনেক বেশি মাত্রায় বাড়তে শুরু করেছে। গড়ে প্রতিমাসে ১৮-১৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু আমানত বেড়েছে মাত্র ৯-১১ শতাংশ। আমানতের তুলনায় ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ৯ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯.০৬ শতাংশ। অক্টোবরে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮.৬৩, সেপ্টেম্বরে ছিল ১৯.৪০, আগস্টে ছিল ১৯.৮৪ এবং জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৬.৯৪ শতাংশ। জুনে ঋণ বৃদ্ধির হার ছিল ১৫.৬৬ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী, সাধারণ ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করলে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা ঋণ দিতে পারে। তবে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংকেরই ঋণ ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে মুদ্রানীতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আগ্রাসী বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশ দেন গভর্নর। এদিকে আমানতকারীদের আকর্ষণ করতে নতুন বছরে বেশিরভাগ ব্যাংক আমানতের সুদ হার বাড়িয়ে দিয়েছে। নতুন সুদ হার অনুযায়ী, কয়েকটি ব্যাংক ০.৫০ শতাংশ সুদ বাড়িয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন। কোনো কারণ ছাড়াই সরকারি প্রতিষ্ঠান টাকা তুলে নিচ্ছে। দেশের ব্যবসার ৭০ শতাংশই করছে এখন বেসরকারি ব্যাংকগুলো। অথচ এই ব্যাংকগুলো সরকারি আমানত পাচ্ছে মাত্র ২৫ শতাংশ। আমরা সরকারি আমানত অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকে রাখার দাবি জানাই।





আরো খবর