শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


রোববার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩৮:০৭ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

তুই আমার দুধ খেয়ে মানুষ হয়েছিস আমারে মারিস না

তুই আমার এই বুকের দুধ খেয়ে মানুষ হয়েছিস বাবা, তুই আমার বুকে মারিস না বলার পরেও জুতা পায়ে সে আমার বুকে লাথি মারে-এ ব্যথা কত যে যন্ত্রনার কি করে ভুলি’। আমি বেহুশ হওয়ার পরেও সে আমাকে মেরেছে। এরকম কুলঙ্গার কোন ছেলে সন্তান যেন কোন মা আর জন্ম না দেয়। কথা গুলো বলার সময় দুচোখ বেয়ে পানির স্রোত বাইছিল ৬৫ বছর বয়সের দুঃখিনী মা ফরিদা বেগমের। নিজ পুত্রের অমানুষিক নির্যাতনের স্বীকার ফরিদা বেগম এখন মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে। টাকা না দেয়ায় তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে নিজ পুত্র ফরিদুল ইসলাম মাসুদ(৩৮)। প্রতক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের ১৬ নং সার্জারি বিভাগের বি ইউনিটের ৩৪ নং বেডে নীলফামারীর জলঢাকার গোলনা ইউনিয়নের কালিগঞ্জ গ্রামের সাবেক সেনাকর্মকর্তা মৃত মকবুল হোসেনের স্ত্রী ফরিদা বেগমের (৬৫) ক্ষত-বিক্ষত শরীরের নানা চিহ্ন। শরীরের ক্ষতের চেয়ে মনের ক্ষত তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে একাকার করে দিয়েছে। সে কষ্ট না পারছেন কাউকে বলতে। না পারছেন সইতে। এক নিদারুন যন্ত্রনা কাতর মুহুর্ত হাসপাতালের বেডে পার করছেন দুঃখিনী এই মা। ফরিদা বেগম জানান, আমার সেনা কর্মকর্তা স্বামী মকবুল হোসেন আমার দুই পুত্র ফরিদুল ইসলাম মাসুদ ও ওমর ফারুক কর্তৃক মানসিক চাপের মুখে চারবছর আগে ইন্তেকাল করেন। এরপর তারা আমার স্বামীর এবং আমার প্রায় ১৫ বিঘা জমি বিক্রি করে তা বিভিন্ন অপকর্মে নস্ট করে দেয়। এরপরও তারা বিভিন্ন সময়ে টাকা এবং আমার থাকা সব জমি দুইভাইয়ের নামে লিখে দেয়ার জন্য চাপাচাপি ও মানষিক নির্যাতন করতে থাকে। শুধু তাই নয়, তারা আমাকে খারাপ ভাষায় গালিগালজ করতে থাকে। আমি টাকা দিতে না চাওয়ায় বড় পুত্র ফরিদুল কিছু দিন আগে পরিবারসহ ঢাকায় যায়। আর ছোট ছেলে কয়েকদিন আগে শশুড় বাড়ি চলে যায়। এরই মধ্যে ছোট পুত্র ওমরের যোগসাজসে ফরিদুল আমাকে ১ লাখ টাকার জন্য ঢাকা থেকে মোবাইল ফোনে চাপাচাপি ও গালাগালি করতে থাকে। আমি দিতে অস্বীকৃতি জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে বাউন্ডারী ওয়াল টপকিয়ে বাড়িতে অবস্থান নেয় মাসুদ। আমি ইবাদত বন্দেগী করার পর সাড়ে ১২ টায় টয়লেটে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হওয়া মাত্রই মাসুদ আমার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। সে আমার মুখে গামছা ও পলিথিন পেচিয়ে আমার কাছে টাকা দাবি করে। আমি টাকা না দিতে চাইলে সে রড দিয়ে আমার মুখে, চোখে, হাতে, পায়েসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার সামনের দুটি দাত ভেঙ্গে যায়। নাক কান ও মুখ দিয়ে রক্ত ঝড়তে থাকে। তবুও আমার প্রতি ওর কোন মায়া হয় নি। সে জুতা পায়ে আমার বুকে এলোপাথারি লাথি দিতে থাকে। আমি তার পা ধরে বলি, ‘তুই আমার এই বুকের দুধ খেয়ে মানুষ হয়েছিস বাবা, তুই আমার বুকে মারিস না । কিন্তু সে আমার অনুরোধ না শুনে ওই পা দিয়ে গলায় চেপে ধরে আমাকে হত্যার চেষ্টা করে। আমার চিত্কারে আমার লোকজন আসলে সে পালিয়ে যায়। এ কথা বলতে বলতে ততক্ষণে শুকিয়ে গেছে তার চোখের পানি। নির্বাক হয়ে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার পেটে ধরা সন্তানই আমাকে হত্যার চেস্টা করলো। আমার বুকে লাথি মারলো। ওই বুকের দুধ খেয়েই সে মানুষ হয়েছি। এ যে কত কস্ট, কত বেদনার কি করে বলি। কাকে বোঝাই- এই কস্টের কথা। ফরিদা বেগম বলেন, আমি চাই আমার পুত্রের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হোক। আর কোন মা যেন তার নিজের পেটে ধারন করা সন্তানের এ ধরনের নির্যাতনের মুখোমুখি না হয়। তিনি বলেন, এর আগেও ওই ছেলে এবং ছোট ছেলে ওমর ও তার বউ আমাকে মেরে ফেলার জন্য গলায় ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছিল। এ ব্যপারে হাসাপাতালে চিকিত্সাধীন ফরিদা বেগমের বড় মেয়ে নাছরীন আক্তার জানান, আমার পিতার মৃত্যুর পর আমার বাবার নামের সব সম্পদ দুই ভাই মিলে নস্ট করে দিয়েছে। এরপর তারা বউ ও শশুড় বাড়ির লোকজনের ইন্ধনে আমার মায়ের নামের জমি ও টাকা নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছে।এর আগেও তারা আমার মাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। এ বিষয়ে আমি বাদি হয়ে থানায় মামলা দিয়েছি। আমরা চাই, মাকে হত্যাচেস্টাকারী আমার ভাইকে পুলিশ দ্রুত গ্রেফতার করে দৃস্টান্তমুলক শাস্তি দিক। ফরিদা বেগমের দেবর আব্দুল লতিফ জানান, ঘটনার চারদিন অতিবাহিত হয়েছে। এখনও মাকে হত্যাচেস্টাকারী পুত্র গ্রেফতার হয় নি। আমরা পুলিশের কাছে এ ব্যপারে দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ ব্যপারে জলঢাকা থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ সরকার জানান, আমি শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। আসামীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। জলঢাকা থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, এ ঘটনায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা থানায় দায়ের করেছেন ফরিদা বেগমের মেয়ে নাছরীন আক্তার। ঘটনাটি অত্যন্ত প্যাথেডিক। আসামীরা যেখানেই থাকুক তাদের গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করা হবে।





আরো খবর