মায়ের আদর কেমন গত ১৪ বছরে তা ভুলে গেছি। বর্তমানে কোনোমতে সংসার চললেও মাতৃস্নেহের জন্য বুকটা ফেটে যায়।
'
কথাগুলো বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত রেজিয়া বেগমের বড় ছেলে হারুন-উর-রশীদ। বর্বরোচিত সেই হামলার রক্তাক্ত ছবি দেখলে আজও তাঁর মতো শিউরে ওঠেন অন্য স্বজনরাও।
হারুন বলেন, মায়ের মৃত্যুর কয়েক বছর আগে থেকেই শয্যাশয়ী ছিলেন নানা আফাজ উদ্দিন। মেয়ের মৃত্যুতে তিনি আরও ভেঙে পড়েন। তাঁর ছবি বুকে নিয়ে শুধু কাঁদতেন। মানুষ দেখলেই জানতে চাইতেন, 'রেজিয়া হত্যার বিচার হবে না!' শেষ পর্যন্ত মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেননি তিনি। ২০১৫ সালের ২৯ জুন না ফেরার দেশে চলে যান নানা আফাজ উদ্দিন।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের আরাজি শাহবাজ গ্রামে থাকেন নিহত রেজিয়া বেগমের বড় ছেলে হারুন-উর-রশীদ। গতকাল সোমবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জীর্ণ ঘরে তাদের বাস।
সংসার চালাচ্ছেন কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। সরকারের পক্ষ থেকে পাওনা টাকা দিয়ে কিছু জমি বন্ধক নেওয়াসহ কয়েকটি গরু লালন-পালন করছেন।
হারুনের একমাত্র মেয়ে হালিমা কাউনিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গ্রেনেড হামলায় নিহত রেজিয়া বেগমের বড় নাতনি হিসেবে তাকে খুব আদর করতেন এবং তাকেও তিনি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। এই কথা বলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন হারুন-উর-রশীদ। তিনি বলেন, 'মেয়েটাকে নিয়েই এখন চিন্তা। তার একটা চাকরি হলে বেঁচে যাই। '
হারুন জানান, ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে ভিসায় ছবি লাগানোর কাজ করতেন তার মা। থাকতেন হাজারীবাগ এলাকায়। ওই এলাকার আওয়ামী লীগের নেত্রী আয়শা মোকাররমের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিংয়ে রেজিয়া বেগমের সরব উপস্থিতি ছিল।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার জনসভা ছিল। আয়শা মোকাররমসহ আরো ২০ জন আওয়ামী লীগ কর্মী মিছিল নিয়ে যোগ দেন তাতে। জনসভা চলাকালে হঠাৎ ভয়াবহ গ্রেনেড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকা। ঘটনাস্থলেই মারা যান রেজিয়া বেগমসহ ২৪ জন। পরদিন ২২ আগস্ট নানা আফাজ উদ্দিন ঢাকায় গিয়ে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে তাঁকে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রেজিয়ার ছোট ছেলে নূরনবী পেশায় পান দোকানদার। থাকেন বালাপাড়া ইউনিয়নের গঙ্গানারায়ণ গ্রামে। তিনি জানান, ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আট লাখ টাকা অনুদান দেন। এর আগে দিয়েছিলেন এক লাখ টাকা। বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনোমতে দিন চলে যাচ্ছে। কিন্তু মাতৃস্নেহের জন্য বুকটা ফেটে যায়। তারা পুরো পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ বলে জানান তিনি।
গ্রেনেড হামলায় নিহত রেজিয়া বেগমের পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে বালাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পরিবারটির ওপর সব সময় সদয় দৃষ্টি রেখে চলেছেন। আমরা দলের পক্ষ থেকেও পরিবারটির খোঁজ খবর রাখছি। '