জাতীয় / পুলিশ ছেলের হাত থেকে বাঁচতে পুত্রবধূকে খুন করেছি
সোমবার, ২০ আগস্ট ২০১৮ ০২:৫৪:৫৬ অপরাহ্ন
পুলিশ ছেলের হাত থেকে বাঁচতে পুত্রবধূকে খুন করেছি
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পুলিশ কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুনের স্ত্রী শিল্পী বেগমকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তার শ্বশুর আবুল কাশেম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পারিবারিক কলহ এবং ছেলে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক ফিরোজ আল মামুনের অত্যাচার থেকে বাঁচতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন আবুল কাশেম। গত ১৪ আগস্ট টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুপম কুমার দাসের আদালতে এ জবানবন্দি দেন বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মির্জাপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কমল সরকার জানিয়েছেন।
গত ১৩ আগস্ট সোমবার বিকেলে মির্জাপুর পৌরসভার বাওয়ার কুমারজানী গ্রামে শিল্প পুলিশের এএসআই ফিরোজ আল মামুন ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগমকে ঘরে ঢুকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন রাতে শিল্পীর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহত শিল্পীর শ্বশুর আবুল কাশেম ও শাশুড়ি অজুফা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে নিহত শিল্পীর ভাই মোহাম্মদ মোস্তফা বোন জামাই ফিরোজ আল মামুন, তার ছোট ভাই সানি, বাবা আবুল কাশেম ও মা অজুফা বেগমকে আসামি করে মামলা করেন।
পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে হত্যার কথা স্বীকার করায় আবুল কাশেম এবং অজুফা বেগমকে টাঙ্গাইল আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে আদালতের বিচারক রুপম কুমার দাসের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বাবা আবুল কাশেম।
জবানবন্দিতে আবুল কাশেম বলেন, আমি ইন্টারমিডিয়েট পাস করে টিউশনি শুরু করি। পরে ব্র্যাক স্কুলে শিক্ষকতা করে ছেলেদের মানুষ করেছি। বড় হয়ে মামুন চাকরি পেয়ে আমাদের ভরণপোষণের পরিবর্তে অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। মামুনের প্রথম স্ত্রী সন্তান প্রসবের পর মারা যায়। তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দুই ছেলের খরচ চালাই আমি। খুব কষ্ট করে সংসার চালালেও মামুন আমাদের খোঁজ নেয় না। এভাবে চলতে চলতে মামুনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ঘটনার ১৫-১৬ দিন আগে আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করে মামুন। নির্যাতন থেকে বাঁচতে ছেলের বউ শিল্পীকে ছাদের ওপর এবং নিচে নেমে রুমের ভেতর ছেলে মামুনকে কুপিয়ে আহত করি। এরপর কুড়ালটি ধুয়ে তুলে রাখি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মির্জাপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক কমল সরকার বলেন, এএসআই মামুন বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতোলে চিকিৎসাধীন। এই হত্যা মামলায় মামুন প্রধান আসামি। মামুনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার বিষয়টি টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়ের মাধ্যমে শিল্প পুলিশের গাজীপুরের পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়েছে। মামুনের বাবা আদালতে স্বীরোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সুপার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এএসআই ফিরোজ আল মামুন পুলিশ পাহারায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মামুন ছুটিতে যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি নিজেও আহত হয়েছেন। মামুন নিজেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা বা অন্য কারো মাধ্যমে হামলার স্বীকার হয়েছেন কিনা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। মামুন সুস্থ হলে এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।