একজন বলছেন ‘সবার আগে’, আরেকজন বলছেন ‘বরিশাল’। ‘কেবিন লাগলে এই দিকে! ‘জায়গা আছে! এই লঞ্চে’ ‘আগে আসলে, আগে পাবেন’—এমন হাঁকডাকে জমজমাট সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। কে কার চেয়ে বেশি যাত্রী আকৃষ্ট করে নিজেদের লঞ্চে উঠাতে পারেন চলছে তারই নিরন্তর প্রচেষ্টা।
শুক্রবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় সদরঘাটে এভাবেই হাঁকডাক দিয়ে নিজেদের যাত্রীর বাড়ানোর চেষ্টা করতে দেখা যায় লঞ্চগুলোর মৌসুমি কর্মচারীদের। দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন রুটের লঞ্চগুলোতে এসব চিত্র চোখে পড়ে।
সাধারণত কোরবানির ঈদের দিন আগেভাগে নির্ধারণ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরাও আগেভাগেই নিজেদের যাওয়ার তারিখ ও লঞ্চের কেবিনের টিকিট বুক করে রাখেন। কিন্তু এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে যারা কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করেননি বা আর্থিক অসঙ্গতির কারণে অনেকেই সওয়ার হন ডেকে। কিন্তু ডেকের কোন টিকিট অগ্রিম বিক্রি না হওয়ায় চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী লঞ্চ ছাড়ার পর তা যাত্রীদের কাছে গিয়ে গিয়ে ইস্যু করা হয়।
ঈদের ৪ দিন বাকি থাকার সময়েও অধিকাংশ লঞ্চের ডেক সম্পূর্ণ যাত্রীপূর্ণ না হওয়ায় কর্মচারীরা হাঁকডাক দিয়ে যাত্রীদের লঞ্চে বোঝাই করছেন।
লঞ্চের ডেকভর্তি যাত্রী/ ছবি: শোয়েব মিথুনগত কয়েকদিন ও শুক্রবার যারা বাড়ির পথ ধরছেন তাদের সিংহভাগই ছিলো নারী ও শিশু। রোববার থেকেই লঞ্চের চাপ বাড়বে কয়েকগুণ তাই ওই সময়ের ভোগান্তি থেকে সামাল দিতে অনেকেই আগেভাগে পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তবে যারা আগেভাগে চুটি কাটাতে পেরেছেন তাদের অনেকেই সপরিবারে নাড়ির টানে পাড়ি জমাচ্ছেন।
সুরভি লঞ্চের ডেকে বসে বরিশালগামী যাত্রী মো. ইদ্রিস আলী বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের সময় তাই ডেকের এই জায়গা নিয়ে লঞ্চ কর্মচারীদের ব্যবসা এখন আকাশচুম্বি। লঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে ডাক দিয়ে টেনে হেঁচড়ে যাত্রী নিয়ে আসেন তারা। এরপর নিজেদের দখলি জায়গায় বেশি টাকার বিনিময়ে বসান।
তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে কর্মচারীরা বলেন, ঈদে আমাদের ওপর চাপ থাকে অধিক যাত্রী পরিবহনের। তাই আমরা যেভাবে পারি অধিক যাত্রী নেওয়ার চেষ্টা করি। এমনি এমনি কি এভাবে গলা ফাটাই?
এ বিষয়ে ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক (ট্রাফিক) আলমগীর কবির বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ট্রাফিক বিভাগ সার্বক্ষণিক তদারকিতে রয়েছে। কোন ধরনের অনিয়ম পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানুষের চাপ প্রতিদিন বাড়বে, তবে আশা করছি কোন ধরনের সমস্যা হবে না।
এদিকে যেকোন ধরনের নাশকতা ও যাত্রী হয়রানি লাগবে কাজ করছে নৌ-পুলিশ, ডিএমপি, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, স্কাউট, বিএনসিসি ও আনসার সদস্যরা। এছাড়া নদী বন্দরে আইন অমান্যকারী ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।