শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ রমজান, ১৪৪৫ | ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট ২০১৮ ০৪:২৮:০৫ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

প্রসবের পর মা উধাও, নবজাতক গায়েব

যশোরের মনিরামপুর হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্স ও আয়া লেবার রুমে (ডেলিভারি রুম) এক প্রসূতি মায়ের ডেলিভারি করে নবজাতককে বালতির মধ্যে ফেলে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নার্স-আয়ার যোগসাজশে মা পালিয়ে গেলেও নবজাতককে গায়েবসহ সবকিছু বেমালুম চেপে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু হাসপাতালের ওয়ার্ডে থাকা রোগী ও সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে তাদের সব কর্মকাণ্ড ধরা পড়ে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে হাসপাতালে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা তদন্তে বুধবার ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত দুই নার্সকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে হাসপাতাল প্রধান ডা. আব্দুল গফ্ফার জানিয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নবজাতক উদ্ধারসহ প্রসূতি মায়ের পরিচয় উদঘাটন হয়নি। সরেজমিন মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টার দিকে হাসপাতালে গেলে সালেহা, নাছিমা, রাহিলাসহ মহিলা ওয়ার্ডের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী রোগীরা জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নার্স হ্যাপী রায় হাতে পলিথিন ভরে (গ্লাভস পরে) এক নারীকে নিয়ে ডেলিভারি রুমে নিয়ে যায়। একটানা প্রায় সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে। দীর্ঘক্ষণ ভেতরে কি হচ্ছে তা দেখার জন্য কয়েকবার চেষ্টা করেন তারা। প্রতিবারই তাদের তাড়িয়ে দেয় নার্স হ্যাপী রায়। এরই এক ফাঁকে তারা দেখতে পায় নবজাতককে অক্সিজেন দিয়ে টেবিলের ওপর ফেলে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দুধ নিয়ে ছোটাছুটি করেন ওই নার্স-আয়া। বিকাল সাড়ে ৩টার পর নার্সসহ ওই নারী বেরিয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ মাসহ নার্সরা নবজাতকের খোঁজ না নেয়ায় তাদের সন্দেহ হয়। রাত ৭টার দিকে লেবার রুমে গিয়ে তারা নবজাতকের খোঁজ করতে থাকেন। বালতির ভেতর উপুড় করা অবস্থায় নবজাতককে উদ্ধার করেন তারা। পরে নবজাতককে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে আয়া কাকলি, নার্স ঝরনা ও হ্যাপী রায় উদ্ধারকারী রোগীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে দুই নার্স ও আয়া নবজাতককে কেড়ে নিয়ে গায়েব করে দেয়। পরে আর ওই নবজাতকের হদিস মেলেনি। ওয়ার্ডের রোগীসহ অনেকের ধারণা, কোনো কুমারী মাকে ডেলিভারি করিয়েছেন নার্স ও আয়া। যে কারণে নবজাতকের মা আর ফিরে আসেননি। নার্স হ্যাপী রায়, ঝরনা ও আয়া কাকলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নবজাতকের মায়ের পরিচয়সহ পুরো রহস্য উন্মোচিত হবে বলে তারা দাবি করেন। ১৬নং ওয়ার্ডের প্রসূতি রোগী নাসরিন জানান, ঝরনা নামের নার্স তার কাছ থেকে কয়েকবার দুধ নিয়ে গেছে। জানতে চাইলে নার্স ঝরনা জানান, নবজাতককে বাঁচাতে তিনি কয়েকবার দুধ পান করিয়েছেন। অবশ্য ওই সময় ঝরনার ডিউটি ছিল না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার এক নিঃসন্তান আত্মীয় বাচ্চা চাইছিল। আয়া কাকলি ফোন করে বাচ্চা নেয়ার জন্য ডাকলে সেখানে তিনি যান। জানতে চাইলে আয়া কাকলি সব কিছু অস্বীকার করে বলেন, নবজাতককে হাসপাতালে পেয়ে নার্স ঝরনাকে খবর দেয়া হয়। মোবাইল ফোনে নার্স হ্যাপীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্ষেপে গিয়ে বলেন, না জেনেশুনে কোনো কথা বলবেন না। তিনিও নবজাতককে হাসপাতালের লেবার রুমে পাওয়ার কথা বলেন। বিষয়টি হাসপাতালপ্রধানকে জানিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তার ফোন নম্বর ছিল না বলেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। কিন্তু বিপত্তি ঘটে রাত ৮টার পর নাজমা নামের নার্স ডিউটিতে আসলে। তিনি লেবার রুমে এক নবজাতক পড়ে আছে জানতে পেরে তাৎক্ষণিক জরুরি বিভাগে দায়িত্ব থাকা চিকিৎসক রাজীব কুমার পাল ও হাসপাতালপ্রধান ডা. আব্দুল গফ্ফারকে অবহিত করেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রাজীব কুমার পাল বলেন, তিনি রাত ৮টা ২০ মিনিটে তখনকার দায়িত্বরত নার্স নাজমা বিষয়টি তাকে অবহিত করেন। তিনি লেবার রুমে গিয়ে সাত মাস বয়সী নবজাতকের চিকিৎসা করেন। নার্স হ্যাপী রায়, ঝরনা ও আয়া কাকলি নবজাতককে নিয়ে যায়। এরপর নবজাতকের আর কোনো হদিস তিনি বলতে পারেননি। জানতে চাইলে মনিরামপুর হাসপাতালের প্রধান ডা. আব্দুল গফ্ফার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ধরনের ক্রাইম মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনায় অভিযুক্ত নার্স হ্যাপী রায় ও ঝরনা রানীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, ঘটনা তদন্তে ডা. রাজীব কুমার পালকে প্রধান করে সিনিয়র নার্স নাজমা ও প্রধান অফিস সহকারী গণেষ মণ্ডলকে সদস্য করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে। তবে একটি সূত্র জানায় অভিযুক্তদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড হাসপাতালে থাকা সিসি ক্যামেরায় ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়েছে। জানতে চাইলে যশোর সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, ইতিমধ্যে বিভাগীয় প্রধান নার্স নাছিমা খাতুনকে তলব করা হয়েছে। তাকে দিয়ে তদন্তের পাশাপশি হাসপাতালের প্রধান ডা. আব্দুল গফ্ফারকে আগামী শনিবারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।





আরো খবর