বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০৭:০৮ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বুধবার, ১৩ জুন ২০১৮ ১১:২১:৪৪ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ বন্যা, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ঈদের আগে আকস্মিক টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, খাগড়াছড়ি ও ফেনী, রাঙামাটি, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গবাদি পশুর মৃত্যুসহ বাড়িঘর ও অনেক ফসলজমি নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানা যায়। প্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, দু’দিনের টানা বৃষ্টি এবং ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে মৌলভীবাজারের মনু এবং ধলাই নদীর পানি দ্রুত বেড়ে যায়। নদীর প্রতিরক্ষা বাধ ভেঙে আউশ ফসল ও সবজি ক্ষেতসহ ৫ ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো হাজার মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, মনু নদীর পানি বিপদসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার এবং ধলাই নদীর পানি ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে প্রতিরক্ষা বাঁধের অন্তত ২০টি এলাকা। এদিকে পানি বেড়ে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের ১১ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মুহুরী নদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী ও ফেনী সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে মুহুরী নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগেরদিন মঙ্গলবার দিনভর ভারী বর্ষণে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর ও বরইয়া অংশের দুটি বাঁধ ভেঙে অন্তত ১১ গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে প্রবল বর্ষণে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে, রামগড় ও দীঘিনালা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যায় ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সহস্রাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। খরস্রোতা ফেনী ও মাইনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে খাগড়াছড়ি শহরের দুই-তৃতীয়াংশ, রামগড় ও মহালছড়ির বিস্তৃত অঞ্চল এবং দীঘিনালার মেরুং বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে গেছে কয়েকশ পুকুরের মাছ। রেড ক্রিসেন্ট ও যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে আটকেপড়া লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। এদিকে হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে হবিগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ। মঙ্গলবার বিকেল থেকে নদীতে পানি বাড়তে থাকে। রাত ১১টা থেকে খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটারেউপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম জানান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেখানকার পানি নেমে খোয়াই নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি আরো বাড়বে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও তিন দিনের অবিরাম বৃষ্টিপাত ও সীমান্ত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাচালং নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাঙামাটির বাঘাইছড়ির উপজেলার ১৪টি গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলো হলো- করেঙ্গাতলী, বাঘাইহাট, বঙ্গলতলী, রূপকারী, কদমতলী, তুলাবান, গুচ্ছগ্রাম, মুসলিম ব্লক, ইমাম পাড়া, মাস্টার পাড়া, গুনিয়া পাড়া, সরকার পাড়া, কলেজ পাড়া ও পুরাতন মারিষ্যা। পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় বাঘাইছড়ির বিস্তৃণ এলাকার কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্ধি মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মার্কেটসহ বিভিন্ন পাকা ভবনে অবস্থান নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন দূর্গতদের জন্য এখনো কোন ত্রাণ তৎপরতা শুরু করতে পারেনি। তবে স্থানীয় আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে দূর্গতদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পাহাড়ি ঢল ও অতি বর্ষণের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি উচ্চতা বাড়তে থাকায় লংগদু, জুরাছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি, নানিয়ারচরের নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি ও কৃষি জমি পানিতে ডুবে গেছে। এদিকে, নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধ্বসের মাটি চাপায় নিহত ১১ জনের সৎকার মঙ্গলবার সম্পন্ন হয়েছে। রাঙ্গামাটিতে তিন পর বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আর কোথাও পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটেনি। পাহাড় ধ্বসের আশংকায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়া লোকজন বাড়ি ঘরে পুনরায় ফিরতে শুরু করেছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে যোগাযোগ পুনরায় চালু হয়েছে। এব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ জানান, বাঘাইছড়িতে পাহাড়ী ঢলে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে সেখানে বসবাসরত মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে মানুষ আশ্রয় গ্রহন করেছে। তবে এই পানি হচ্ছে পাহাড়ী ঢল তাই বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে আস্তে আস্তে পানি কমে যাবে এবং গতকাল রাত থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। তাই যে সমস্ত এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে তা আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে এবং জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তার পরেও আমরা প্রস্তুত রয়েছি এবং মঙ্গলবার বাঘাইছড়ি উপজেলা নিবার্হী অফিসারকে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছি যাতে আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ এসে খাওয়ার কোন সমস্যা না হয়।





আরো খবর