শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ১১:১৫ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ ০১:৩৭:৫১ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

বাংলাদেশে নগরদরিদ্ররা জীবনমান উন্নয়নের কতটা সুযোগ পাচ্ছেন?

বাংলাদেশে দারিদ্র কিংবা দুর্যোগের কারণে যারা শহরমুখী হয়ে বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছেন, তারা তাদের জীবনমান উন্নয়নের যথেষ্ট সুযোগ পাচ্ছেন না। বিশেষত: শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে সামাজিক সুরক্ষা না থাকায় দিনের পর দিন তাদের জীবনধারা একইরকম থাকছে। ফলে দেশে সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন নগরদারিদ্র বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এসব মানুষকে বিশেষ সহায়তা না দিলে তাদের পক্ষে নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয়। রাজধানীর কালশীতে বেগুনটিলা বস্তির ভেতরে ছোট্ট একটি ঘরে রান্নার জোগাড় করছিলেন মর্জিয়া বেগম। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, দশ বছর আগে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ভোলায় নদীভাঙ্গনে সব হারানোর পর থেকে এই বস্তিতেই থাকছেন মার্জিয়া বেগম ও তার পরিবার। ভোলায় তাদের বসতভিটা, ফসলি জমি সবই ছিলো। এখন বস্তিতে অভাব-অনটনে দিন কাটছে তাদের। মার্জিয়া বেগম বলছিলেন, "আমাদের নিজের বাড়ি ছিলো, বড় বড় ঘর ছিলো, আবাদের জমি ছিলো। নদী ভাঙ্গার পর সব শেষ। এইখানে একরুমে আমরা এখন ৬ জন থাকি। আলাদা রুম নেয়ার টাকা নাই।" এই বস্তিতেই ফরিদপুর থেকে এসে বিশবছর ধরে আছেন ভূমিহীন পরিবারের হোসেন আলী। ঢাকার রাস্তার সিএনজি চালান তিনি। দীর্ঘ বিশ বছরে তিন সন্তান নিয়ে তার উন্নতি বা সফলতা বলতে খেয়ে পরে কোনমতে বেঁচে থাকতে পারা। তিনি বলছিলেন, "আমার উন্নতি বলতে কিছুই নাই। খাইয়া-লইয়া সমান সমান। আমি যে কাজ করি, আমার ছেলেরা আরো নিচের কাজ করে। উন্নতি হইলো কই?" ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বস্তিবাসীদের নিয়ে একটি জরিপ করে। সেই জরিপে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বড় শহরগুলোর বস্তি এলাকায় বসবাসকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ১৯৯৭ সালে সংখ্যাটি ছিলো ১৩ লাখ ৯১ হাজার। ২০১৪ সালে তা প্রায় ৮ লাখ বেড়ে দাঁড়ায় ২২ লাখ ৩২ হাজারে। জরিপে দেখা যায়, বস্তিগুলোতে যারা থাকেন তাদের অর্ধেকই শহরে আসেন কাজের খোঁজে। বাকি ৩৫ শতাংশ আসেন দারিদ্র ও নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে। কিন্তু শহরে আসার পর তাদের জীবনমানে খুব একটা উন্নতি হয় না। নগরদারিদ্র গবেষক ও পাওয়ার অ্যন্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এর নির্বাহী সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান মনে করেন, দারিদ্রের শিকার এসব মানুষের জন্য যে ধরণের সামাজিক সুরক্ষা দরকার ছিলো তা নেই। তিনি বলছিলেন, "শহরগুলোতে একধরণের কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। ফলে মানুষজন এখানে আসছে। কিন্তু ঐ কর্মসংস্থান থেকে তারা যে আয় করছে, সেই আয় থেকে তাদের মানসম্মত জীবনযাপনের সুযোগ হচ্ছে না। পরিবেশ, নগরনীতি, আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, এলিট শ্রেণির ব্যবহার সবিকিছু মিলয়েই এটা হচ্ছে।" নগরদরিদ্রদের জীবনমান উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হয় মূলত: শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে। কিন্তু নগরদরিদ্রদের সেই সুযোগ কোথায়? যেমন, মহাখালির কড়াইল বস্তিতে এসে দেখা গেলো সেখানে শিক্ষার সুযোগ বলতে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা কিছু ছোট ছোট স্কুল। যেগুলোতে মূলত: পড়ানো হয় পঞ্চম শ্রেণি, কোন কোন ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এরপর আর পড়ানোর সুযোগ নেই। রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে আশার আলো নামে একটি স্কুলের শিক্ষক তাহমিনা আক্তার বলছিলেন, "ক্লাস ফাইভের পরে আর কেউ বাচ্চাদের পড়াতে চায় না। কারণ, এরপর পড়াতে হলে বাইরের স্কুলে পড়াতে হবে, খরচ হবে। তারচেয়ে তারা চিন্তা করে বাচ্চাদের দিয়ে কাজ করিয়ে যদি বাড়তি কিছু আয় আসে, তাহলে আরো ভালভাবে চলা যাবে।" এছাড়া বস্তিগুলোতে বসবাসকারীদের স্বাস্থ্যের অবস্থাও ঝুঁকিপূর্ণ। রাজধানীর বেগুনটিলা বস্তিতে শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং নারী স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে জরিপ করছিলেন একটি বেরসকারি এনজিও'র কয়েকজন কর্মী। তথ্য সংগ্রহ করে তারা দেখতে পাচ্ছেন, এসব এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নেই। দারিদ্রের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন বিশেষত: মা ও শিশুরা। সমীর অধিকারী নামে তাদের একজন বলছিলেন, "একবছরের বা দুইবছরের বাচ্চাদের যেরকম ওজন ও উচ্চতা থাকা উচিত, এখানে খুব কম বাচ্চারই সেটা আছে। এটা পুষ্টির অভাবের কারণে হচ্ছে। এরা যখন বড় হবে, তখন কিন্তু তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সমস্যা হবে।" বস্তি এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, শুধু যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, বাসস্থান কিংবা নিম্ন আয় নিয়ে ভুগছেন এখানকার মানুষ, তা নয়। বরং মানবিক মর্যাদার সংকটেও রয়েছেন তারা। কিন্তু নগর দরিদ্রদের এই যে পিছিয়ে পড়া সেখান থেকে তাদের টেনে তুলবে কে? আর কিভাবেই বা তা সম্ভব? ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলছিলেন, এই উদ্যোগ রাষ্ট্র ও সমাজেই নিতে হবে। তিনি বলছিলেন, "বর্তমান বিশ্বে সামাজিক ন্যায়বিচার কিংবা জীবনমান উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার মূলত: দুইটি। প্রথমটি হচ্ছে, শিক্ষা। দ্বিতীয়টি স্বাস্থ্য।...নগরদরিদ্যদের জন্য মানসম্মত কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ দিতে হবে।" তার মতে, দরিদ্রদের জন্য ন্যুনতম এসব সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে তারা তাদের জীবনমান নিজেরাই উন্নত করে নিতে পারবে। সূত্র: বিবিসি।





আরো খবর