শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ১১:৪২ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


রোববার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ ০৪:২১:৪০ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

কারাগারে স্থির, শান্ত

প্রায় সাঁইত্রিশ একর জমির বিশাল কারাগার। দীর্ঘদিন এখানে কোনো বন্দি ছিল না। এই পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দি একজন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১০দিন ধরে সেখানে আছেন তিনি। কারাগারে ধীর, শান্ত খালেদা জিয়া। এ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেননি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। খাবারের প্রতি তার বিশেষ কোনো আবদার থাকে না। বেশির ভাগ সময় শুয়ে-বসে কাটছে। এছাড়াও কারারক্ষী এবং ডিপ্লোমা নার্সের সঙ্গে কথা বলছেন খালেদা জিয়া। বুধবার ফাতেমাকে কাছে পেয়ে স্বস্তি পেয়েছেন তিনি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারে স্বজনদের দেখা পেয়েছেন। কথা বলেছেন দীর্ঘ সময়। এ সময় স্বজন, দলের নেতাকর্মীদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। সাক্ষাৎকালে স্বজনরা আবেগপ্রবণ হলেও খালেদা জিয়া ছিলেন স্বাভাবিক। তিনি তাদের ধৈর্য্য ধারণ করতে বলেছেন। কারাসূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সূত্রমতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাহারার দায়িত্বে রয়েছেন চার মহিলা কারারক্ষী। শুরু থেকেই তারা সেখানে রয়েছেন। কারাগারের ফটকের বাইরে কখনও আসা হয় না তাদের। প্রথমদিনই তাদের মোবাইল ফোন কারা অফিসে রেখে সেখানে যেতে হয়েছে। থাকা-খাওয়া কারাগারেই। একইভাবে কাশিমপুর কারগার থেকে আনা ডিপ্লোমা নার্স রয়েছেন কারাগারে। ওই ডিপ্লোমা নার্সই নিয়মিত খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত খোঁজ নিচ্ছেন। শুভ নামে একজন ডাক্তার রয়েছেন। তবে আজ পর্যন্ত খালেদা জিয়া ওই ডাক্তারকে ডাকেননি। তবে ওই ডাক্তার কারাগারের নিচ তলায় অফিস কক্ষে নিয়মিত অবস্থান করেন বলে জানা গেছে। রান্নার দায়িত্বে আছেন ইদ্রিছ। ইদ্রিছের ঘনিষ্ঠজন জানান, খাবারের জন্য খালেদা জিয়া নিজ থেকে কোনো আবদার করেন না। জানতে চাইলে তিনি বলেন। খাবার খান অল্প। সাধারণত তার জন্য রান্না করা হচ্ছে, ভাত, রুটি, সবজি ও ছোট মাছ। এছাড়াও কখনও কখনও জ্যুস, চা-কফি দেয়া হয় তাঁকে। কারাগারে সকালে ঘুম থেকে উঠেন তিনি। নামাজ পড়েন। পত্রিকা পড়েন। সকালের নাস্তা করে বিছানায় শুয়ে থাকেন। প্রায় সময় ঘুমিয়ে থাকেন। দুপুরে কারাকক্ষে পায়চারি করেন। কথা বলেন কারারক্ষী ও ডিপ্লোমা নার্সদের সঙ্গে। বিকালে চা-কফি পানের অভ্যাস আছে তার। তবে নিজ থেকে কখনও তা দিতে বলেন না। কারাকক্ষে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বিকালে তাকে উদাস থাকতে দেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। একই ভাবে কারাগারে সকালে ও বিকালে দীর্ঘসময় পত্রিকা পড়েন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। রাতে ভাত খান। কারাগারের প্রথমদিনই কারারক্ষীদের জীবন-যাপন ও পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়েছেন খালেদা জিয়া। কারাগারের দ্বিতীয় তলার কক্ষে কোনো এসি নেই। কষ্ট হলেও এ নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। কারাকক্ষের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন খালেদা জিয়া। গত বুধবার রাতে খালেদা জিয়ার গৃহপরিচারিকা ফাতেমাকে তার সঙ্গে দেয়া হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত কারা মহা-পরিদর্শক কর্নেল মো. ইকবাল হাসান বলেন, আদালতের নির্দেশে ফাতেমাকে তার সঙ্গে দেয়া হয়েছে। তিনি সুস্থ আছেন। সূত্রমতে, কারাগারে ফাতেমাকে পেয়ে স্বস্তি পেয়েছেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে কাপড় গোছানোর কাজ করে দিচ্ছেন ফাতেমা। খালেদা জিয়ার পছন্দের খাবার সংগ্রহ করার চেষ্টা করলেও প্রায় সময় তা সম্ভব হচ্ছে না। কড়াকড়ির কারণে বাইরে থেকে কোনো খাবার কারাগারের ভেতরে নেয়া হচ্ছে না বলে সূত্রে জানা গেছে। গত শনিবার আইনজীবীরা সাক্ষাৎ করার পর আর কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি তার। কারা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কারাগারে কথা বলছেন কম। বেশির ভাগ সময় নীরব সময় কাটাচ্ছেন। কারাগারে ১০ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিচ তলার জেল সুপারের অফিস কক্ষে রাখা হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ওই কক্ষটি নোংরা বলে জানিয়েছিলেন আইনজীবীরা। নিচতলার ওই কক্ষের আশপাশেই আসা-যাওয়া ছিল কারাগারে কর্মরতদের। তাদের সাড়া-শব্দ শোনা যেত ওই কক্ষ থেকেই। তা নীরবেই মেনে নিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পরবর্তীতে ডিভিশন পেলে তাকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই কক্ষটি এক সময় কারাবন্দি নারীদের শিশুদের ডে কেয়ার সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। গতকাল দুপুরে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ নেতৃবৃন্দ কারাগারে গেলেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারেননি। সেখানে তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য মোনাজাত করে ফিরে যান। তার আগের দিন বৃহস্পতিবার সকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। এ সময় তার সঙ্গে মহিলা দলের শ’ খানেক নেতাকর্মী ছিলেন। সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে জেল সুপার বরাবর আবেদন করলেও অনুমতি না পেয়ে ঘণ্টা খানেক পরে জেলগেট থেকে ফিরে যান তারা। তবে ওইদিন সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার স্বজনরা। তাদের মধ্যে ছিলেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকোর শাশুড়ি মোখলেমা রেজা, খালেদার ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ভাগিনা সাজিদ ইসলাম, শাহরিয়ার আখতার ও ভাতিজা মো. আল মামুন।





আরো খবর