বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


সোমবার, ২২ জানুয়ারী ২০১৮ ০১:৫০:২৮ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

ফেব্রুয়ারির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, আলোচনায় তিনজন

ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই নিয়োগ হচ্ছে প্রধান বিচারপতি। দীর্ঘদিন খালি থাকার পর এবার এ পদটি পূরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কাকে গুরুত্বপূর্ণ এ পদে বসানো হবে তা এখনো কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। কে হচ্ছেন দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সে বিষয়ে সুর্নিদিষ্টভাবে কেউ না বললেও বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নাম তালিকার শীর্ষে আছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। তবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার পাশাপাশি আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নামও আছে। আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন বিচারপতি আছেন। তাঁদের অবসরের বয়সসীমা ৬৭ বছর। বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর অবসরে যাবেন। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন। সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেওয়া হবে। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।’ এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে কে নিয়োগ পাচ্ছেন এটি শুধু প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন। একই অভিমত প্রকাশ করেছেন আইন মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও। তবে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আলোচনায় সবার আগে আছেন বলে জানান তাঁরা। পদত্যাগ করা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) মেয়াদ আগামী ১ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা যতক্ষণ না প্রয়োগ করবেন,ততক্ষণ পর্যন্ত ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাজ হবে। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো শূন্যতার সৃষ্টি হয়নি। তবে আমি আশাকরি শিগগিরই এ নিয়োগ প্রক্রিয়া হতে পারে। দীর্ঘ প্রায় চার মাস ধরে শূন্য আছে প্রধান বিচারপতির পদ। দেশের ৪৬ বছরের ইতিহাসে এত দীর্ঘ সময় ধরে এ পদটি খালি পড়ে থাকেনি। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তবে আগামী মাসে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হলে এ আলোচনার অবসান হবে বলে মনে করেন আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। জ্যেষ্ঠতা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের পর এখন দেশের সর্বত্রই প্রধান আলোচ্য বিষয় পরবর্তী ২২তম প্রধান বিচারপতি কে হচ্ছেন? প্রথা অনুযায়ী পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারপতির প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে নিয়ম মানা হবে কি হবে না তা নিয়ে আলোচনায় সরগরম রাজনৈতিক মহলসহ সর্বত্র। অবশ্য অতীতে এই প্রথা ভেঙে জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে কাউকে কাউকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের নজিরও আছে। একজন প্রধান বিচারপতির এভাবে পদত্যাগের ঘটনা স্বাধীনতার ৪৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম। জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা এক নম্বরে, দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারক হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং তৃতীয় অবস্থানে আছেন বিচারপতি মো. ইমান আলী। এ ছাড়া ক্রম অনুযায়ী আরো আছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুযায়ী এক নম্বর ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রথা আগেই ভাঙার নজির রয়েছে। ২০১১ সালের ১৩ মে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান পদত্যাগ করেন। তাঁকে ডিঙিয়ে প্রধান বিচারপতি করা হয়েছিল দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনকে। মোজাম্মেল হোসেনের আগে আরো একবার শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে ডিঙিয়ে প্রধান বিচারপতি করা হয় বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে। বিচারপতি মোমিনুর রহমান ছিলেন বিএনপির প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আ স ম হান্নান শাহর ভাই। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও ঘটেছে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ও বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে ডিঙিয়ে যথাক্রমে বিচারপতি কে এম হাসান ও বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের হোসেনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও বিচারপতি এম এম রুহুল আমিনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয় জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে ডিঙিয়ে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে ডিঙিয়ে বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। যদিও পরে বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে নিয়োগ দেওয়া হয় বিচারপতি এম এ মতিন ও বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে ডিঙিয়ে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এত দিন দীর্ঘ সময় প্রধান বিচারপতির পদ খালি থাকেনি। এটি বিচার বিভাগের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আস্থা হরিয়ে যাচ্ছে। অতীতে এত দীর্ঘদিন এই পদ খালি থাকেনি। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানে জ্যেষ্ঠতা নিয়ে কোনো নিয়ম নেই। তবু আপিল বিভাগের দীর্ঘদিনের প্রথা অনুযায়ী আমরা চাইব জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে যেন নিয়োগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি তাঁর বিবেক দিয়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিবেন সেটাই প্রত্যাশা করি।’ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানে জ্যেষ্ঠতার কথা উল্লেখ নেই। রাষ্ট্রপতি চাইলে আপিল বিভাগের যে কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন।’ গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিচারপতি এস কে সিনহা। তিনি সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠান। পরে রাষ্ট্রপতি এ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি সিনহার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি এস কে সিনহা শপথ নেন। ওই দিন থেকে এ পদে তিনি প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে গত ৩ জুলাই রায় দেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ। ওই রায়ের পর ক্ষুব্ধ হয় সরকারের একটি অংশ। সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা প্রকাশ্যে ও জাতীয় সংসদে এস কে সিনহার সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। এই প্রেক্ষাপটে গত ৩ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা; কিন্তু ওই মেয়াদ শেষ না হতেই গত ১০ অক্টোবর ছুটির মেয়াদ আরো ১০ দিন বৃদ্ধি করেন তিনি। ১২ অক্টোবর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি বর্ধিত ছুটিকালীন বিদেশে অবস্থানকালে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অথবা পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর পর এস কে সিনহা আর দেশে ফিরেননি। বিদেশে থাকাবস্থায় তিনি পদত্যাগ করেন।





আরো খবর