বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান, ১৪৪৫ | ১০:০৪ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


রোববার, ২১ জানুয়ারী ২০১৮ ০৭:০৮:২৮ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদার প্রত্যাবাসন চান কূটনীতিকরা

রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা। তাদের মতে, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে ফিরে যাওয়ার জন্য তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়। আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তারা একথা বলেন। এতে প্রথমে পশ্চিমা, অমুসলিম দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং পরবর্তী সময়ে মুসলিম দেশগুলোর কূটনীতিকদের ব্রিফিং দেয়া হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর দেয়া ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকেট রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদাসম্পন্ন। ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইন রাজ্যের উন্নয়ন প্রয়োজন। এ জন্য মিয়ানমারকে সহায়তা দিচ্ছে ভারত। ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সই হওয়া সমঝোতা স্মারক, ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট ও যৌথ কার্যকরী গ্রুপ গঠনের ওপর আলোকপাত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এ সব পদক্ষেপের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছা, মর্যাদাসম্পন্ন ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে চেয়েছে। চুক্তিতে এজন্য সুনির্দিষ্ট বিধান আছে। এর মধ্যে রয়েছে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নে মিয়ানমারের প্রতিশ্রুতি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রতি কোনো ধরনের বৈষম্য না করা এবং রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা। চুক্তি অনুযায়ী সার্বিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরসহ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে যুক্ত করবে। এ লক্ষ্যে ইউএনএইচসিআরের সাথে সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, পুনর্বাসন ও সমাজে অন্তর্ভুক্তিতে মিয়ানমারকে সহায়তা দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উৎসাহিত করছে বাংলাদেশ। এজন্য ভারত, চীন ও জাপান ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। নিরাপদবোধ করলেই প্রত্যাবাসন রোহিঙ্গারা নিরাপদবোধ করলেই প্রত্যাবাসন করা উচিত মন্তব্য করে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, রাখাইনে প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গাদের নিতে হবে। অন্য কেউ তাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার প্রত্যাবাসন অবশ্যই স্বেচ্ছায় হওয়া উচিত। এর আগে শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে বাইরে রেখে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি সইতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসঙ্ঘের মহাপরিচালক এন্তোনিও গুতেরেজ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তির বিষয়ে ইউএনএইচসিআরের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। তবে চুক্তিতে সংস্থাটিকে অংশীদার করা হয়নি। অথচ এ ধরনের শরণার্থী প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআর জড়িত থাকে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছায়। রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাদের আদি বাড়িতে ফিরে যেতে দিতে হবে। তাদেরকে কোনো আশ্রয় শিবিরে রাখা যাবে না। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশের আশ্রয় শিবির থেকে এসব মানুষকে মিয়ানমারের শিবিরে পাঠানো হলে তা হবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় মিয়ানমার। প্রথম পর্যায়ে হিন্দু-মুসলিম মিলিয়ে মিয়ানমার এক হাজার ২৫৮ জন রোহিঙ্গাকে নেবে। রোহিঙ্গা হিসাবে যাচাইকৃত ৫০৮ জন হিন্দু ও ৭৫০ জন মুসলিম রোহিঙ্গার তালিকা বাংলাদেশকে দিয়েছে মিয়ানমার। গত ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি নেইপিডোতে অনুষ্ঠিত যৌথ কার্যকরী গ্রুপের (জেডাব্লিউজি) প্রথম বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট সই হয়। এর আওতায় আগামী দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হবে। রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাবাসন হবে পরিবারভিত্তিক। এতিম ও অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে জন্ম নেয়া শিশুদের ক্ষেত্রে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা হবে। ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট অনুযায়ী, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন করবে। রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করার জন্য মিয়ানমার প্রাথমিকভাবে দু’টি অভ্যর্থনা কেন্দ্র নির্মাণ করবে। উত্তর রাখাইনে হ্লা পো খাউং এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী শিবির গড়ে তোলা হচ্ছে। মিয়ানমার দ্রুততার সাথে এই শিবির নির্মাণ কাজ শেষ করবে। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। পরিচয় যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাবাসনের জন্য দু’টি পৃথক করিগরী কমিটি গঠন করা হবে। মিয়ানমারের সাথে ইতোপূর্বে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও জেডাব্লিউজির টামর্স অব রেফারেন্স (কার্যপরিধি) অনুযায়ী ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে। জেডাব্লিউজি বৈঠকে প্রতি সপ্তাহে ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। আর মিয়ানমার তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার ও রোববার ছাড়া প্রতিদিন ৩০০ করে সপ্তাহে সর্বোচ্চ দেড় হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। নেইপিডোতে জেডাব্লিউজি বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেয়া পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক আজ সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত করতে মিয়ানমার এখনো সম্মত নয়। তবে তারা ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর রেডক্রসের (আইসিআরসি) সহায়তা নিতে রাজি আছে। বাংলাদেশ ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করলেও আপাতত তথ্য যাবে পরিবার হিসেবে। সেক্ষেত্রে ইউএনএইচসিআরের তৈরি করা তালিকার সাহায্য নেবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে থাকা সাত হাজার রোহিঙ্গাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। প্রথম দিকে সপ্তাহে এক হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা ফিরলেও পরে এই সংখ্যা বাড়ানো যাবে। প্রতি তিন মাস অন্তর জেডাব্লিউজি’র পর্যালোচনা বৈঠক হবে। ঢাকায় অনুষ্ঠেয় পরবর্তী বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ। দুই বছরের মধ্যে সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।





আরো খবর