শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০১৮ ০৩:১৬:৫০ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আ’লীগের পক্ষে জিতে আসা কঠিন: আনন্দবাজার

বাংলাদেশ সফররত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি নির্বাচন আর চলমান রাজনীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা। প্রণবের সফর নিয়ে পত্রিকাটিতে একাধিক প্রতিবেদন লিখেছেন সাংবাদিক অগ্নি রায়। একটি রিপোর্টে তিনি লিখেছেন, রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ঢাকা পৌঁছে প্রণব মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, রথ দেখা এবং কলা বেচা এই হল তার চলতি সফরের উদ্দেশ্য। ‘রথ দেখা’ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা। কিন্তু রবিবার ভারতীয় হাইকমিশনের নৈশাহার অনুষ্ঠানে ‘কলা বেচা’-র অর্থ প্রাঞ্জল করতে চাননি পোড় খাওয়া রাজনীতিক প্রণববাবু! বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে মধ্যাহ্ন ভোজের পর মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের ট্র্যাক-টু কূটনীতির সূত্রপাত হল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে হাসিনার সঙ্গে একান্ত এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পর বিকেলে বাংলা একাডেমির মাঠে সাহিত্য উৎসবে বলতে উঠে প্রণব মুখোপাধ্যায় সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘পরিবেশ দূষণের চেয়েও বড় দূষণ মানুষের মন ও চিন্তার দূষণ। মানুষের হিংস্রতার শিকার হচ্ছেন নিরীহ মানুষ। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ। ভাষা সংস্কৃতি লুঠ হয়ে যেতে দেননি এ’দেশের মানুষ। এই হিংস্রতার বিরুদ্ধে আজ কবি শিল্পী সাহিত্যিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’ তার বক্তৃতায় কোনও রাজনৈতিক দল বা মৌলবাদী সংগঠনের নাম করেননি প্রণব। এমনকী শাসক দলের বিরুদ্ধে হেফাজত ইসলামের কট্টরপন্থাকে প্রশ্রয় দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারেও কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু সূত্রের খবর, আজ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে দুজনের। গণভবনে মেয়ে শর্মিষ্ঠাকে নিয়ে পৌঁছেছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। হাসিনা ফুল দিয়ে বরণ করার সময় উপস্থিত ছিলেন বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান সিদ্দিক ববিও। মাছের নানা পদ ছাড়া মধ্যাহ্ন ভোজে ছিল হরেক রকমের পিঠেপুলিও। আগামী এক বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাসিনার রাজনৈতিক লড়াইয়ে। বিশিষ্টজনেদের বক্তব্য, লড়াই শুধুমাত্র বিএনপি-র সঙ্গে নয়, নিজের দলকে শুদ্ধিকরণের প্রশ্নটাও উঠে আসছে। সর্বস্তরে ক্ষমতার প্রভাব দেখানো, দুর্নীতি, হেফাজতে ইসলামির চাপে পাঠ্যসূচি বদল গত কয়েক বছরে সমাজের বিভিন্ন স্তরে এই নিয়ে ক্রমাগত ক্ষোভ জমা হয়েছে। নিরপেক্ষ উদারনীতি থেকে আওয়ামী লীগ অনেকটাই সরে এসেছে এই অভিযোগ ঢাকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, এই নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। অগ্নি রায় আরেকটি রিপোর্টে লিখেছেন, কাওরান বাজারের পাইকারি বেচাকেনার ভিড় ঠেলে হোটেলের রিসেপশনে ঢুকেই চমক! নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি এখানে নতুন কিছু নয়, কিন্তু এ বারে যা দেখলাম তা ঢাকায় আগের অভিজ্ঞতার থেকে আলাদা। কাগজপত্র দেখিয়ে চাবি নেওয়ার আগে নানা অ্যাঙ্গেল থেকে তুলে রাখা হল বেশ কয়েকটি ছবি। সরকারের নতুন নির্দেশ! বাংলাদেশের রাজধানীর বাতাসে বারুদের গন্ধ ছিলই। এ বার তার সঙ্গে মিশছে ভোটের উত্তেজনা। বছরের গোড়াতেই টান টান ভাবটা তাই চোখ এড়াচ্ছে না। যে উপলক্ষে এ বারের সফর, ঢাকায় ‘বাংলা একাডেমি’-র সেই আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস এবং রাজনৈতিক নৈরাজ্যকে হারাতে পারে সাহিত্যই। এ দিনই ঢাকায় পৌঁছনো প্রণব মুখোপাধ্যায় থাকবেন কাল সম্মলনের সমাপনী পর্বে। রবীন্দ্রনাথে, জীবনানন্দে ম-ম করছে একাডেমি চত্বর। কিন্তু এর দু’দিন আগেই পশ্চিম নাখালপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মেরে-কেটে তিনশো গজ দূরে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর জঙ্গি ডেরায় অভিযান চলেছে। তিন জঙ্গি নিহত। র্যাব-এর বক্তব্য, ঢাকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল এদের। যে সব বিস্ফোরক ও অস্ত্র পাওয়া গিয়েছে, তা রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে হাসিনা প্রশাসনের। তবে ওয়াকিবহালরা বলছেন সবে শুরু। ভোট যত ঘনিয়ে আসবে, বাড়বে ছোট বড় জঙ্গি-হানার আশঙ্কাও। গোটা নগরী আলোয় আলো করে সরকারের চতুর্থ বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে ভোটের ঢাকে কাঠি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা। বছর শেষে এই নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিএনপি অংশ নেবে কি না সে দিকেই এখন নজর সবার। বিএনপি-র দাবি, তারা সর্বান্তকরণে চাইছে ভোটে যোগ দিতে। ২০১৪-র ৫ই জানুয়ারির ভোটে যোগ না-দেওয়াটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে এখন এই দলের অনেকেই মনে করছেন। তাদের কথায়, বিএনপি এতে রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষের অনেকেরই মতে জামাতে ইসলামির সঙ্গে জোট বেঁধে রাস্তায় রাস্তায় যানবাহনে আগুন দিয়ে ‘জ্বালাও পোড়াও’ আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানোয় বিএনপি-র জনপ্রিয়তা কমেছে। আবার এই মুহূর্তে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের পক্ষেও জিতে আসা কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা এই শাসক দলের অনেক কট্টর সমর্থকেরও। তঁদের কথায়, শেখ হাসিনা ঢাকা ও বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন করেছেন বটে। কিন্তু তা ছাপিয়ে মানুষের কাছে বড় হয়ে উঠছে দলের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি, উদ্ধত আচরণ এবং দখলদারির মানসিকতা।





আরো খবর