শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ রমজান, ১৪৪৫ | ১২:৪৭ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


রোববার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৮ ০২:৪০:২১ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

টক অব দ্যা অ্যাডমিনিস্ট্রেশন

গত সপ্তায় ৬টি সচিব পদে রদবদল হয়েছে। এরমধ্যে সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্যসচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব পদ। স্বাভাবিক নিয়মে এ নিয়োগ হলে তা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়তো হতো না। কিন্তু, দু’টি পদই পূরণ হয়েছে অনেকটা অস্বাভাবিক ও নিয়মবহির্ভুত পদ্ধতিতে, অপ্রত্যাশিত ব্যক্তিদের দিয়ে। আর এ কারণেই প্রজ্ঞাপন দু’টি গোটা প্রশাসনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যাকে এক কথায় বলা যায়- ‘টক অব দ্যা অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’। সিনিয়রিটি, গুরুত্ব এব্ং প্রটোকলের দিক থেকে জনপ্রশাসনের দ্বিতীয় শীর্ষ পদ হলো মুখ্যসচিব। ৩০ ডিসেম্বর মুখ্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ। তিনি আর এই পদে পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাচ্ছেন না, এটা মোটামুটি বোঝা যাচ্ছিল। তাই নতুন কে মুখ্যসচিব হবেন, এ আলোচনা বেশ আগে থেকেই সচিবালয়সহ গোটা প্রশাসনে চলছিল। শুধু প্রশাসনই নয়, রাজনৈতিক মহলসহ সরকারের অন্যান্য পর্যায়েও বেশ আলোচিত হচ্ছিল। যোগ্যতা, দক্ষতা, আওয়ামী রাজনৈতিক আদর্শ এবং সিনিয়রিটি- সব দিক বিবেচনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খানই যে নতুন মুখ্যসচিব হচ্ছেন- এটা মোটামুটি নিশ্চিত করে বলছিলেন অনেকে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগের দলের মধ্যেও তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এর কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তাকে ’৯৬ সালের জনতার মঞ্চের কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক বদলি ও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। বর্তমানে সচিব বা সিনিয়র সচিব পদে যারা কর্মরত আছেন এদের মধ্যে সিনিয়রিটিতেও তাঁর নাম মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পরেই অর্থাৎ মুখ্যসচিব পদের জন্য এক নম্বরে। মুখ্যসচিব পদে ইতিপূর্বে দু’বার সুপারসিডেড হয়েছেন মোজাম্মেল হক খান। তাই এবার তিনি মুখ্যসচিব হচ্ছেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। এমনকি সরকারের শীর্ষ মহল থেকেও নাকি এমন আভাস দেওয়া হয়েছিল। তারপরও মোজাম্মেল হক খান মুখ্যসচিব হলেন না বা হতে পারলেন না। এবারেরটা নিয়ে তৃতীয় দফায় সুপারসিডেড হলেন। তবে মোজাম্মেল হক খানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব না হলেও অনেকের সঙ্গে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও একজন কর্মকর্তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। ওই কর্মকর্তা নিজে খুবই ব্যথিত হয়েছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীই তাঁর মতো ব্যথিত হয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, মোজাম্মেল হক খানের পরিবর্তে অন্যের নাম প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যেন অনেকটা হতাশা-বিষাদ নেমে আসে। বিশেষ করে কর্মচারীদের দেখে মনে হচ্ছিল যেন, তাদের মধ্যে নীরব কান্নার স্রোত বয়ে গেছে। উল্লেখ্য, ড. মোজাম্মেল হক খান প্রশাসন সার্ভিসে সিনিয়রিটির দিক থেকে মো. নজিবুর রহমান, ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, এমনকি আবুল কালাম আজাদেরও উপরে। অথচ এর আগে জুনিয়র কর্মকর্তা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর মুখ্যসচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এবং সর্বশেষ মো. নজিবুর রহমানের মুখ্যসচিব পদে নিয়োগের সার-সংক্ষেপ মোজাম্মেল হক খানের হাত দিয়েই পাঠাতে হলো- এটাই বড় দুঃখের, বলছিলেন তার ঘনিষ্ঠরা। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে নিয়োগের ঘটনাটাও প্রশাসনে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকারের রাজস্ব আদায়ের প্রধান মাধ্যম জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তাই পদটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও লোভনীয়। পদটি শূন্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য অনেক সচিবই চেষ্টা-তদবির করছিলেন। এই পদে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার নাম আলোচনায় বা সম্ভাবনার তালিকায় তো নয়ই, এমনকি সরকারের নীতিনির্ধারকদের কল্পনায়ও ছিল কিনা সন্দেহ। নামটি আসে অনেকটা হঠাৎ করেই। গত ৩ জানুয়ারি বিকালে মোশাররফ হোসেনকে এনবিআর’র চেয়ারম্যান পদে দ্ইু বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। তার মাত্র দু’দিন আগে মোশাররফ হোসেনের নামটি উপরের মহলে আলোচনায় আসে। কীভাবে এ নামটি হঠাৎ করে এনবিআর চেয়ারম্যান পদের জন্য আলোচনায় এলো সেটি নিয়ে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসনে। শিল্পসচিব থাকাকালে ২০১৬ সালের ৩০ জুন অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা ছিল মোশাররফের। এর একদিন আগে ২৯ জুন তার পিআরএল বাতিল করে এক বছরের চুক্তিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এর মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ৩০ জুন। তারপর থেকে বাড়িতেই। অনেকটা বাড়ি থেকে ডেকে এনেই তাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হলো। মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া হলেন দ্বিতীয় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, যাকে এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো। এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময় অবসরপ্রাপ্ত সচিব খায়রুজ্জামান চৌধুরীকে এনবিআর চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়েছিল। ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ওই পদে দায়িত্ব পালন করেন খায়রুজ্জামান চৌধুরী। মোশাররফ হোসেন ১৯৮১ ব্যাচের বিসিএস অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারের কর্মকর্তা। ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। একই বছরের ২৯ জুলাই পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন তিনি। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে এক মামলায় গ্রেফতারের পর ওএসডিও হতে হয়েছিল এই কর্মকর্তাকে।





আরো খবর