শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ রমজান, ১৪৪৫ | ১২:০২ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫১:১৩ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

অ্যাপভিত্তিক পরিবহণ সেবাকে বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত

ঢাকা: আপনার ব্যক্তিগত গাড়ি নেই, তাতে কী। মোবাইল ফোনই যথেষ্ট। তথ্যপ্রযুক্তির ইশারায় চলে আসবে আপনার গাড়ি। ঘরে বসে গন্তব্য বললে জানিয়ে দেবে আপনার খরচের পরিমাণ। অ্যাপভিত্তিক এ পরিবহন ব্যবস্থা চালুর বছরপূর্ণ হয়েছে বুধবার। ঢাকার রাস্তায় পরিবহন সেবায় যুক্ত হওয়া এ রাইডশেয়ারিং এখন বেশ জনপ্রিয়। অ্যাপভিত্তিক এ পরিবহন সেবার আওতায় যাত্রীরা গন্তব্যে যেতে পারছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। অর্থাৎ ব্যক্তিগত গাড়ি মিলছে ভাড়ায়। শুধু তাই নয়, যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে ভূমিকা রাখে এ সার্ভিস। উবার নামক রাইডশেয়ারিং শুরু হয় গত বছর ২২ নভেম্বর। এ সময়ে এ ব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে স্যাম, পাঠাওসহ অনেক অ্যাপভিত্তিক সার্ভিস। ফলে সিএনজি অটোরিকশার জিম্মি দশা থেকে খানিকটা রেহাই পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। সরকার নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যাত্রীর কাঙ্খিত গন্তব্যে যেতে না চাওয়ার কারণে নাভিশ্বাস ওঠা জনমনে স্বস্তি ফিরছে। এদিকে এর বিরোধিতাও শুরু করেছেন অটোরিকশা চালক-মালিকরা, ইতোমধ্যে ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন তারা। তবে এতে আপত্তি নেই সাধারণ মানুষের। টানা ভোগান্তি পোহানোর পর বিকল্প বাহন রাইডশেয়ারিংয়ে আস্থা রাখছেন তারা। ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় ভাড়া বাড়াতে চায় এই সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব বিবেচনায় প্রথমে নিষিদ্ধ করলেও জনপ্রিয়তার কারণে উবারসহ অ্যাপভিত্তিক সেবাকে বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তাই রাইডশেয়ারিংয়ের সার্ভিস নিয়ন্ত্রণে নিতে নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে। শিগগির এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে মন্ত্রিসভায়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, রাইডশেয়ারিংকে নীতিমালার আওতায় আনতে কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার মতামত নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, অ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা বন্ধ করাসহ আট দফা দাবিতে ধর্মঘটসহ এক মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টা ঢাকা ও চট্টগ্রামে ধর্মঘট পালন করবেন অটোরিকশা চালকরা। তার পরও দাবি পূরণ না হলে ১৫ জানুয়ারি থেকে দুই মহানগরে তাদের লাগাতার ধর্মঘট শুরু হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, অটোরিকশা শ্রমিকদের ধর্মঘটের ঘোষণায় এবার সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, ১৫ বছর ধরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে জিম্মি সাধারণ মানুষ। দফায় দফায় তাদের চাহিদামতো ভাড়ার হার নির্ধারণ করে বিআরটিএ। কিন্তু মিটারে যেতে রাজি নয় এসব বাহন। সরকার নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ২-৩ গুণ আদায় করা হয়। তা ছাড়া যাত্রীর কাক্সিক্ষত গন্তব্যে যেতেও সাড়া দেয় না তারা। এভাবেই দিনের পর দিন চলতে থাকে সাধারণ মানুষের জিম্মিদশা। ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় যাত্রা করে অ্যাপভিত্তিক রাইডশেয়ারিং সেবা উবার। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিটির সেবা দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় ঢাকায়। বুধবার এ সেবার এক বছর পূর্তি হলো। এ সময়ে আরও কয়েকটি কোম্পানি অ্যাপভিত্তিক রাইডশেয়ারিং সেবা চালু করে। অবশ্য এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই ঢাকায় সেবা দিয়ে যাচ্ছে তারা। ঢাকায় উবার চালুর কিছু দিনের মধ্যে ভাড়া বাড়ালেও পরে তা কমায় উবার। বর্তমানে উবার এক্সে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১৮ টাকা। আর ভিত্তি ভাড়া ৪০ টাকা। তবে যাত্রাপথের সময়ের জন্য প্রতি মিনিটের চার্জ তিন টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। কেবল ‘ব্যক্তিগত কার’ নয়, অ্যাপভিত্তিক সেবায় মোটরসাইকেলও আছে যাত্রীদের পছন্দের তালিকায়। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে এ সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সুপারিশ করা হয়, রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের ভাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাবের চেয়ে বেশি হতে পারবে না। তা ছাড়া রাইডশেয়ারিং সংক্রান্ত কোনো তথ্য ও উপাত্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা বিআরটিএ বা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ বা সরবরাহ করতে পারবে না। রাইডশেয়ারিং সার্ভিস যাত্রীর তথ্য বা সার্ভিস পরিচালনা সংক্রান্ত তথ্য শুধু বাংলাদেশে সংরক্ষণ করবে। বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, নীতিমালার একটি ভালো দিক হচ্ছে- কেউ একটির বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি অ্যাপের মাধ্যমে ভাড়ায় খাটাতে পারবে না। তা ছাড়া ভাড়ায় পরিচালনার অনুমোদন পাবে না গাড়ি কেনার এক বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত। এতে করে ব্যক্তিগত গাড়ি বিশেষ করে প্রাইভেট কার অবাধে বাণিজ্যে নামতে পারবে না। এদিকে অ্যাপভিত্তিক সেবার প্রতিবাদে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ধর্মঘট নিয়ে দ্বিমত দেখা দিয়েছে। ধর্মঘট ডেকেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। আর রাইডশেয়ারিংয়ের পক্ষে অভিমত দিয়ে বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন। সংগঠনটির সভাপতি সরদার মো. সোবহান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ (খোকন) এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ উবার, পাঠাওসহ অ্যাপভিত্তিক গণপরিবহন সেবা বন্ধের যে দাবি করে আসছে, এর সঙ্গে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারা বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে দেখা যায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকরা অ্যাপভিত্তিক গণপরিবহন সেবা বন্ধের দাবিতে ধর্মঘটে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কুচক্রিমহল শ্রমিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এমন দাবি জানিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের প্রতিপক্ষ করে তুলছে যাত্রীদের কাছে। সূত্রমতে, ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে ১২ হাজার ৭১৫টি নিবন্ধিত সিএনজিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। এ ছাড়া আরও ৯৩৬টি রয়েছে মিশুকের প্রতিস্থাপন। সব মিলিয়ে ১৩ হাজার ৬৫২টি অটোরিকশা চলছে। এর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৫ হাজার ৫৬১টির। বাকিগুলোর মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর। চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশার মধ্যে ৭ হাজার ৪৫৯টির মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছর। এ অবস্থায় আরও ৬ বছর মানে মোট ২১ বছরের মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে মতামত চাইছে বিআরটিএ। যদিও সরকার-নির্ধারিত ভাড়ায় গাড়ি না-চলা, মিটার না-মানা আর যাত্রীর চাহিদামতো গন্তব্যে যাওয়ার শর্ত কখনই মানেননি অটোরিকশার মালিক-শ্রমিকরা। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে পরিবহন নেতাদের চাপে এখন চলাচলের অনুপযুক্ত অটোর মেয়াদ বাড়াতে মন দিয়েছে বিআরটিএ।





আরো খবর