বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ৯ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ১০:৩৭:১৭ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

টিনএজ প্রেম

কোচিং থেকে ফিরেই ব্যাগটা সোফায় রেখে মলিকে জড়িয়ে ধরে টিয়া বলল আজ নাকি ওকে রনি প্রপোজ করেছে। ১৩ বছরের টিয়ার কথা শুনে রীতিমত হতবাক মলি। এইতো সেদিন সদ্য জন্মানো টিয়াকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরল মলি। আর এরইমধ্যে মেয়ের প্রেমের প্রপোজাল আসাও শুরু হয়ে গেল... মলি যখন এসব ভেবে চলেছে, টিয়া তখন অনর্গল বলেই চলেছে রনি নাকি নায়কের মতো দেখতে, পড়াশোনায় ভালো, ক্রিকেট খেলায় তুখোড় বোলার। সব বান্ধবীরা নাকি টিয়ার প্রতি রনির দুর্বলতা দেখে হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে। এসব কথা শুনে টিয়াকে ধমক দিয়ে শাসন করবে নাকি বোঝাতে বসবে বুঝতে পারছিল না মলি। কিন্তু বোঝাতে চাইলেই কি টিয়া বুঝবে কিংবা মায়ের কথা শুনবে? মেয়েটার ভবিষ্যতটা নষ্টই না হয়ে যায়। বয়ঃসন্ধিতে প্রেমে পড়েনি এমন মানুষ পাওয়া সত্যিই দুর্লভ। কোথা থেকে একটা না একটা প্রেম এ সময়ে সবার জীবনে এসেই যায়। পাশের বাসার ছেলেটা বা মেয়েটা, কাজিন কিংবা সহপাঠী কাউকে না কাউকে ভালো লেগে যাওয়ার মতো ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই কমবেশি ঘটেছে। কিন্তু আগেকার দিনের এই প্রেম ছিল অন্যরকম। মনের ভেতর একান্তে সেই প্রেম লালন করতো কেউ, কেউবা বন্ধুদের দিয়ে চিঠি দেওয়া, বইয়ের ভাঁজে চিরকুট রেখে দেওয়া এটুকুতেই বেশিরভাগ প্রেমের পরিসমাপ্তি ঘটতো। খুব কম ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রম ঘটতে দেখা গেছে। বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মায়েরা কিছুদিন আগে পর্যন্তও এসব ক্রাশ, ডেটিং, প্রপোজ শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে বয়ঃসন্ধির চরিত্রেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। এখনকার টিনএজাররা বেশ এগ্রেসিভ এবং তারা নিজেদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে করে। কিন্তু এই আত্মবিশ্বাস আর আগ্রাসনের আড়ালেই রয়েছে ছেলেমানুষি, পাগলামি আর অ্যাডভেঞ্চারের নেশা। আর সেই কারণেই এই প্রেম বাবা-মায়ের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আপনি যদি এই পরিস্থিতির সম্মুখিন হন, বাবা-মা হিসেবে তখন কি হবে আপনার কর্তব্য তাই নিয়ে রইল কিছু পরামর্শ। * যদি জানতে পারেন আপনার ছেলে বা মেয়ে কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে, তাহলে প্রথমেই রেগে যাবেন না। বয়ঃসন্ধির সময় শরীরে ও মনে হরমনাল কারণে নানা পরিবর্তন আসে। আর তাই অপজিট সেক্সের প্রতি আকর্ষণ বোধ করা খুবই স্বাভাবিক। আপনার নিজের টিনএজের কথা মনে করে দেখুন। আপনার জীবনেও হয়তো এমন প্রেম এসেছিল। এতে বিস্মিত হওয়ার বা ভেঙে পড়ার কিছু নেই। বরং একে ওকে ব্যাপারটা শেয়ার না করে সংযত থেকে নিজেই পরিস্থিতি সামলাবেন। * গল্পের ছলে ছেলেমেয়ের কাছে তাদের বন্ধুবান্ধবদের সম্বন্ধে জানতে চান। কারো প্রতি বিশেষ টান রয়েছে কিনা তা বুঝে নিতে চেষ্টা করুন। জেনে নিন সম্পর্কটা কতটা এগিয়েছে তা। কিছুদিন পর অন্যান্য বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আপনার ছেলেমেয়ের ওই বিশেষ বন্ধুটিকেও আপনার বাসায় দাওয়াত দিন। সবার সঙ্গেই স্বাভাবিক ব্যবহার করুন। তার পরিবার, পড়াশোনা, ধ্যানধারণা জেনে নিয়ে বুঝে নিন সে মানুষ হিসেবে কেমন। * যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন দিনের খানিকটা সময় আপনার ছেলেমেয়ের সঙ্গে কাটান। একসঙ্গে শপিং করা, সিনেমা দেখা, রান্না করা আপনাদের বন্ডিং দৃঢ় করবে। ওর মনের কাছাকাছি পৌঁছতে চেষ্টা করুন যাতে বন্ধু হিসেবে ও আপনার উপর আস্থা রাখতে পারে। * না জেনে প্রথমেই আপনার ছেলেমেয়ের বিশেষ বন্ধুটি সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করবেন না। এতে আপনার সন্তান আঘাত তো পাবেই, আপনি নিজেও ওর চোখে ছোট হয়ে যাবেন। * ছেলেমেয়ের বন্ধুবান্ধবদের ব্যাপারে উদার হলেও, বাসার বেসিক ডিসিপ্লিন কখনো ভাঙবেন না। নির্দিষ্ট একটা সময়ে বাসায় ফেরা, দেরি হলে বাসায় ফোন করে জানানো, বাবা-মাকে জানিয়ে কোথাও যাওয়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা না বলা বা কম্পিউটারে চ্যাটিং না করা এগুলোর দিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পকেটমানি ছেলেমেয়েকে দেবেন না। * অনেক ছেলেমেয়েরই বয়ঃসন্ধির সময় আচার আচরণে একটা বেপরোয়া, বেহিসাবী ভাব প্রকটভাবে প্রকাশ পায়। সন্তানকে বোঝান যে প্রথম প্রেম মানুষের জীবনের একটা স্মরণীয় অধ্যায় কিন্তু এই প্রেমের পরিণতির জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, পরিশ্রম আর অপেক্ষার। * যদি দেখেন সন্তান কোনো অসম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে তাহলে সন্তানকে প্রেম এবং মোহের পার্থক্যটা যুক্তিসহ বোঝান। ওর সামনে যুক্তিসহকারে তুলে ধরুন এই সম্পর্কের নেই কোনো পরিণতি। প্রয়োজন মনে করলে নিতে পারেন কাউন্সিলরের সাহায্য।





আরো খবর