আন্তর্জাতিক / জেনেভায় বৈঠক আজ: রোহিঙ্গাদের ভাগ্য কি বদলাবে?
সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:২৯:৪৭ পূর্বাহ্ন
জেনেভায় বৈঠক আজ: রোহিঙ্গাদের ভাগ্য কি বদলাবে?
মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য এখনও হাজার হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাদানকারী সংস্থাগুলো। এই অর্থ সংগ্রহে তারা আজ সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে দাতা সংস্থাগুলোর কাছে জোর আবেদন জানাবে। তহবিল সংগ্রহের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে নিরাপদে ও টেকসই উপায়ে ফিরে যাওয়ার ওপরও জোর দেয়া হবে। তবে এ পর্যন্ত চাহিদার মাত্র ৭ শতাংশ পেয়েছে ইউনিসেফ। সে ক্ষেত্রে কতটা সাহায্য আসবে অনুষ্ঠিতব্য জেনেভার এ বৈঠক থেকে? সে প্রশ্ন বিশ্বের অনেকের।
ইউনিসেফের কমিউনিকেশন ম্যানেজার এএম শাকিল ফয়জুল্লাহ বলেন, প্রাণভয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবাসহ গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে আগামী ছয় মাসের জন্য কমপক্ষে ৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার প্রয়োজন। বিশ্বের দাতা সংস্থাগুলোর কাছে এই অর্থের জন্য আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আবেদনকৃত এই অর্থের মাত্র ৭ শতাংশ অর্থ পাওয়া গেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
তিনি বলেন, জেনেভার বৈঠকে মূলত ইউনিসেফের হেডকোয়ার্টারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। ওই বৈঠকে ইউনিসেফের প্রধান দাবি থাকবে দ্রুত বাকি অর্থের যোগান দেয়া। কারণ অর্থ পাওয়া না গেলে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য হাতে নেয়া কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
রোহিঙ্গা-মিয়ানমার‘প্লেজিং কনফারেন্স’ নামের ওই বৈঠকের আয়োজন করছে যৌথভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও কুয়েত সরকার। সহ-আয়োজক হিসেবে রয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), মানবিক সহায়ক সমন্বয়ক বিষয়ক দপ্তর (ওসিএইচএ) এবং শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক মার্ক লোককের সভাপতিত্বে সম্মেলনে শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডে ও আইওএম মহাপরিচালক উইলিয়াম ল্যাসি সুইং বক্তব্য দেবেন। সম্প্রতি তারা দুজনেই বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেছেন।
সংস্থাগুলো বলেছে, রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচাতে এই মূহূর্তে আর্থিক সহায়তা জরুরি। তাদের ধারণা, আগের এবং নতুন মিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে সহায়তা করতে কমপক্ষে ৪৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা তিন হাজার ৬শ’ কোটি টাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে সহায়তার আশ্বাস এবং জোগান এসেছে প্রায় ১০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আইওএম বাংলাদেশ কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এত বড় সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বাসস্থান, নিরাপদ পানি নিশ্চিতসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। তবে জরুরি ভিত্তিতে আগামী ছয় মাসের জন্য ৪৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। বৈঠকে এই অর্থের জন্য আবেদন করা হবে।
বৈঠকে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তহবিল সংগ্রহের পাশাপাশি তাদের নিজ বাসভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপদে ও টেকসই উপায়ে ফিরে যাওয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হবে বলে জানা যায়।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সুচির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার একদিন পরই সেনাবাহিনী রাখাইনের পুরো অঞ্চলে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত হয় রাখাইনের বৌদ্ধরাও। নির্বিচারে চলে রোহিঙ্গা গণহত্যা, গণধর্ষণসহ নিধনযজ্ঞ। তাদের হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বৌদ্ধগোষ্ঠিকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে এই নিধনযজ্ঞ শুরু করে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।